ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ১৯ নবেম্বর ;###;বাছাই ২২ নবেম্বর ;###;প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২৯ নবেম্বর

ভোট ২৩ ডিসেম্বর ॥ তফসিল ঘোষণা করলেন সিইসি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৯ নভেম্বর ২০১৮

ভোট ২৩ ডিসেম্বর ॥ তফসিল ঘোষণা করলেন সিইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৩ ডিসেম্বর রবিবার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেয়া টেলিভিশন ভাষণে এই তফসিল ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি দেশের গণতন্ত্র সচল রাখার স্বার্থে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিবাদ-মীমাংসা করে সবাইকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। এবারই প্রথম নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কথাও উল্লেখ করেছেন সিইসি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ লাখ সদস্যের পাশাপাশি এসব বাহিনীকে সহায়তা করতে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে। নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির নিশ্চয়তার কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করি। তফসিল অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ১৯ নবেম্বর সোমবারের মধ্যে তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে ২২ নবেম্বর বৃহস্পতিবার। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ধরা হয়েছে ২৯ নবেম্বর রবিবার। ভোটগ্রহণ করা হবে ২৩ ডিসেম্বর রবিবার। সিইসি তার বক্তব্যে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রস্তুত, সারাদেশে ৪০ হাজারের বেশি ভোট কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার কথা বলেন। এবারের নির্বাচনে ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার সাংবিধানকি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইতেমধ্যে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। কমিশনাররা সংবিধানের আলোকে সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করার শপথ নিয়েছেন। নির্বাচন সামগ্রী ক্রয় এবং মুদ্রণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ৭ লাখ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী থেকে ৬ লক্ষাধিক সদস্য মোতায়েন করা হবে। তাদের মধ্যে থাকবে পুলিশ বিজিবি, র‌্যাব, কেস্টগার্ড, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হলে দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দেয়ার জন্য সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন থাকবে। তিনি বলেন, ২০১৮ সাল নির্বাচনের একটি বছর। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। সুশীল সমাজ মতামত প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে। গণমাধ্যমে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, মতামত, বক্তব্য, প্রবন্ধ, প্রতিবেদন, আলোচনা ও সুপারিশ করা হচ্ছে। সব সংবাদ মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে বিশেষ খবর ও প্রতিবেদন প্রচার করছে। দেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতারা দলগতভাবে অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরামর্শ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে মিলিত হয়েছেন। সভা-সমাবেশ নির্বাচনী বক্তবে উত্তপ্ত হচ্ছে। দেশী-বিদেশী বহু সংগঠন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশব্যাপী সংসদ নির্বাচনে অনুকূল আবহ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে এমনি এক পরিবেশে দাঁড়িয়ে প্রত্যাশা করব প্রার্থী এবং সমর্থকরা নির্বাচনী আইন মেনে চলবেন। প্রত্যেক ভোটার অবাধে এবং স্বাধীন বিবেকে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করবেন। পোলিং এজেন্টরা ফলাফলে তালিকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। নির্বাচনী কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অটল থাকবেন। নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভোটকেন্দ্র ভোটার, প্রার্থী, নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। পর্যবেক্ষকরা পর্যবেক্ষণ নীতিমালা মেনে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় জনগণের মালিকানার অধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়। নতুন সরকার গঠনের ক্ষেত্র তৈরি হয়। এমন নির্বাচনে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানাই। তাদের মধ্যে কোন মতানৈক্য বা মতবিরোধ থাকলে রাজনৈতিকভাবে তা মীমাংসা করার অনুরোধ জানায়। প্রত্যেক দলকে একে অপরের প্রতি সহনশীল, সম্মানজনক এবং রাজনৈতিকসুলভ আচরণের অনুরোধ জানাই। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করি। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে প্রার্থীর সমর্থকদের সরব উপস্থিতিতে অনিয়ম প্রতিহত হয়। প্রতিযোগিতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন কখনও প্রতিহিংসা বা সহিংসতায় পরিণত না হয় রাজনৈতিক দলগুলোকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য বিশেষ অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, ভোটার, রাজনৈতিক দল, নেতাকর্মী, প্রার্থীর সমর্থক এবং এজেন্টরা যেন বিনা কারণে হয়রানির শিকার না হয় বা মামলা-মোকাদ্দমার সম্মুখীন না হয় তার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর কঠোর নির্দেশনা থাকবে। দল, মত নির্বিশেষে সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ধর্ম জাত, বর্ণ ও নারী-পুরুষ ভেদে সকলের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ভোট শেষে নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করতে পারবেন। নির্বাচনী প্রচারে সকল প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবে। সকলের জন্য অভিন্ন আচরণ ও সমান সুযোগ সৃষ্টির অনুকূলে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হবে। এসব নিয়ে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কমিশনের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রার্থীদের তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং নির্বাচনের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি আদান-প্রদান পদ্ধতি সংক্রান্ত সফটওয়্যার ও প্রোগ্রাম আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হয়েছে। সরাসরি অথবা অনলাইনেও মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধানও রাখা হয়েছে। পুরাতন পদ্ধতির পাশাপাশি ভোটগ্রহণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহার সফল হয়েছে। জেলা এবং অঞ্চল পর্যায়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে ইভিএমের উপকারিতা সম্পর্কে ভোটারগণকে অবহিত করা হয়েছে। ইভিএম ব্যবহারে তাদের মধ্যে উৎসাহব্যঞ্জক আগ্রহ দেখা গিয়েছে। বিশ্বাস করি ইভিএম ব্যবহার করা গেলে নির্বাচনের গুণগতমান উন্নত হবে এবং সময়, অর্থ ও শ্রমের সাশ্রয় হবে। সে কারণে শহরগুলোর সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা থেকে দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় বেছে নেয়া অল্প কয়েকটিতে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন ঘিরে সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহের জাগরণ ঘটে। তাদের বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা আর উচ্ছ্বাসে গোটা দেশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। রাজনীতিবিদদের কৌশল প্রণয়ন, প্রার্থীদের নির্ঘুম প্রচার, সমর্থকদের জনসংযোগ, ভোটারদের হিসাব-নিকাশ, হাটবাজারে মিছিল-সেøাগান, পোস্টারে অলিগলি সয়লাব, চায়ের দোকানে বিতর্কের ঝড়, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, প্রশাসনের রদবদল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতির ঘটনা ঘটে। ভোটের দিনে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার মধ্যে আনন্দঘন ও উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করে। তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ কার্যক্রম, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় আপনাদের সহযোগিতা, সাহায্য ও সমর্থন কামনা করি। জাতির আকুল আগ্রহের এ জায়গায় সবাইকে নিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সফল হব। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের শুরুতেই জাতির পিতাকে স্মরণ করে হুদা বলেন, আমি স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। একইসঙ্গে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি অকুতোভয় সেসব বীর সন্তানকে যারা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, সম্ভ্রম বিসর্জন দিয়েছেন। স্মরণ করি ’৫২র ভাষাশহীদদের, যাদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মায়ের ভাষা; অর্জিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আন্দোলন, আত্মদান আর সংগ্রামের ফসল স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ। ভাষা আন্দোলনে আত্মদানের প্রত্যয় নিয়ে স্বাধিকার আন্দোলন। স্বাধিকার আন্দোলনের প্রেরণায় মুক্তি সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের অর্জন। দেশ উন্নত বিশ্ব অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, লাল-সবুজ পতাকার এক খ- বাংলাদেশ। চরম ক্ষুধা-দারিদ্র্য, অবনতকর আর্থ-সামাজিক অবস্থান এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত ভৌত অবকাঠামো নিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম। নবীন সেই দেশটি আজ উন্নত বিশ্ব অভিমুখ অভিযানে দীপ্ত পদে এগিয়ে চলছে। এদেশের মানুষের প্রত্যাশা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে, গণতন্ত্রের মজবুত ভিত্তি স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সারিতে দাঁড় করাতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্থিতিশীল ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনে উন্নত ও গণতন্ত্রকে সমান্তরাল পথ ধরে অগ্রসর হতে হবে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এর আগে বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণে বেলা ১১টায় কমিশনের সভা বসে। সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে এই সভা। সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মোঃ রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম এবং শাহাদত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব মোঃ হেলালুদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার শাহাদত হোসেন বলেন, সব কিছু ঠিকঠাক, এখন শুধু অপেক্ষা। ওই বৈঠক শেষে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিটিভি, বেতারের কর্মীরা সিইসির ভাষণ রেকর্ড করার জন্য তার কক্ষে প্রবেশ করেন। সন্ধ্যায় ভাষণে তিনি এই তফসিল ঘোষণা করেন।
×