ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ৯ নভেম্বর ২০১৮

কবিতা

সাজানো জীবন নাসরীন নঈম অন্ধকার ঘরের ছিদ্র দিয়ে ঢোকা তীরের ফলার মতো তুমি এক টুকরো রোদ্দুর তোমাকে কোথায় রাখি। যতটুকু আসো সেটুকুই পাওয়া বাকিটুকু কেবল আবছা আঁধার সুসময় গচ্ছিত আমাদের কাছে; তাকে তুমি আনতে গেলেই শুধতে হবে দেনা বাড়তে থাকুক মোটা কাচের পুরনো চশমা হয়ে খোলা কাগজের মতো উড়তে চাই না আর যেখানে মানুষ ঘাম মুছে অধিকার চায় লোহার খাঁচায় মানুষের উত্তরাধিকার বেড়ে ওঠে রক্তের অক্ষরে বঞ্চনার ঋণ শোধ হয় অভিজাত ককটেলে বিপণীতে সাজানো জীবন শো-পিসের মতো ছিটকে পড়েই চুরমার হয়ে যায় ভাঙা চিবুকের শরীরে শৈশবের স্মৃতি জীবনের ধানক্ষেতে হেঁটে বেড়ায় মুখের চামড়ায় কি লেখা থাকে পরকীয়ার রহস্য উপাখ্যান। ** জীবনের আহ্লাদ পলিয়ার ওয়াহিদ মানুষের উচিত মাছেদের মাতৃভাষা শেখা জানা প্রয়োজন গাছেদের নীরবতা পাখিদের কলরব শেষে পানির কল্লোল ঢেউয়ের মাতৃভাষা নৃত্য ফেনিল স্বভাব তোমার হাসি ব্যঞ্জনামুখর মুগ্ধতায় সময়গুলোর ঠোঁট ফেটে যায় কৌতুকের ছলে তুমি কি ভুলিয়ে দিলে আমার প্রকৃত জীবনের স্বাদ! ** লোকটা যেভাবে পাগল হচ্ছিল ফারুক আফিনদী লোকটা ক্ষণে ক্ষণেই হেসে ফেলছিল- শব্দটাই বাকি- কিছু ক্ষণের ‘অপেক্ষা’ মাত্র- এর পর বৈশাখের মেঘের মতো মুখটা হয়ে গেলো- আকাশে- গাঙিনীর বুকে- ডুবে গেছে ডিঙ্গির মতো নদীটা নির্বিকার, ঢেউ দিয়ে যাচ্ছে কূলে কূলে ** আদিম মুহাম্মদ ফরিদ হাসান চোখের কার্ণিশে বসা বসন্ত রোদ আর সকৌতুক নিহত এক গোলাপের নিচে মেয়েটির ঠোঁটে জ¦লে প্রগাঢ় চুম্বন প্রাচীন সুরার পাশে পতিত পেয়ালা ঢের নেশা তার চিবুকে জমা নির্লজ্জ দেহ ছোটে হরিণী পিছে নীলের সীমানা ছোঁয়া অসংখ্য ফানুস খোদাই করে মন উল্কি আগুনে মাতাল শরীর রাখে আদিম কিরিচে ** হেমন্তের প্রত্যাবর্তন মিশকাত উজ্জ্বল এই হেমন্তে নব-বিবাহিত দম্পতিদের মতো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেনি ফসলী জমিগুলো। মৃত্তিকার সফল প্রজননে ব্যাপক গর্ভবতী হয়ে উঠবে ধানগাছ ধাত্রীবিদ্যায় পারদর্শী কৃষকগণ প্রস্তুত থাকবে দড়ি-কাস্তে সমেত। ধান কাটা সারা হলে মঙ্গাক্রান্তরা মেতে উঠবে ঈদোত্তর মহোৎসবে সেমাই-পোলাও, নতুন জামা খোয়াবোপম; অন্ন-নিংড়ানো জল এবং লজ্জাচ্ছদটুকু জোটেনি যাদের গত ঈদে তাদের মুখে উঠবে নবান্ন-ব্যঞ্জন, পরিধেয়। গ্রাম্যবধূ ও বালিকারা যারা শহরে গিয়েছিল কাজের খোঁজে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করবে পাক-সাফ হয়ে। সুন্নতি আলখাল্লা পরিহিতরা দুধের মাছির মতো ছড়িয়ে পড়বে; আবার যথারীতি গ্রাম-গঞ্জে; ওয়াজ-নসিহতে। ** পরাধীন জাহিদ আল হাসান মাতাল হবার পর হন্যে হয়ে ঘুরে আসি যেই দেশ, তার রাজধানী তুমি পৃথিবীকে ভুলে গিয়ে যেই নদী কাঁদতে বসেছে তোমাকে স্মরণ করে সে সাগর হতে চায়। তোমাকে মনে পড়লে জীবিত হয়ে উঠছি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মতো তোমাকে ভুললে সিরিয়ার মতো মৃত। তুমি আমার হোয়াংহো নদী তুমি আমার ডেড সি তুমি আমার বিপ্লব তুমি আমার সংগ্রাম যুদ্ধেই বাঁচিয়ে রাখি তোমাকে পরাণে, ভালোবেসে করি ঋৃণ আমি প্রেমিক তবুও অন্যের অধীন। ** গোড়ায় গন্ডগোল এনাম রাজু তখন চাঁদ-সূর্যের মিলন ক্ষণ নদীর তীর ধরে হেঁটে গেলো অনন্তে একদল এ্যানাকোন্ডা ও রেটল... সেই কথা রটে গেছে ইতিহাস পাড়ায় দলিলে দলিলে আসন নিয়েছে গ্রন্থপাড়ায় তাদের ঔরসে জন্মেছে হেমলক কব্জা করেছে প্রেম মাতাহারি রূপে। সেই ক্ষণের রোদ-তাপে মিশে একাকার রক্ত হয়েছে ঘাসবুকে গালিজা চাদর। নিয়মকে আঙুল দেখায় তাই ব্লাক আউট ইনডোর-আউটডোরে জেহেলি হাত। ** ভীষণ অন্ধকার নাসির আহমেদ দুর্জয় কোন কোন দিন ভেতরটা খুব বেশি পোড়ায় অনল নেই, জ্বলন নেই তবুও যেন পুড়ে পুড়ে ছাই অভাবের হাহাকারে বিচূর্ণ আমার অনুভূতির তেপান্তর বিষের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে মরে হাজারবার এক তোমার অনুপস্থিতির ভীষণ অভিযোগে। দিন শেষে রাত নামলেই সবটুকু বিষাদ আমায় ঘিরে ধরে আমি হাত দিয়ে সরাতে থাকি ভীষণ অন্ধকারে তুবও যায় না ছেড়ে আমায়, এ যেন আগুন নেই, ধোঁয়া নেই তবুও কালো দাগ সাদা দেয়ালে ভীষণ কলঙ্ক আমার পরতে পরতে। নিখোঁজ আমার খোঁজ মিলবে হঠাৎ এক মহুয়ার বনে কবে যে হারিয়ে গেছি কোন অকালে পাপিয়া আর কোকিলের মধ্য রাতের গানের তানে তবুও পরানেই রবে পরানের পিয়াসা তুমিবিহীন নির্বাক নিঃশব্দ অসাড় চলনে। এমনি করে আমার সিলেবাস ফুরিয়ে গেলে একদিন কানের কাছে শুনবো হাজারো কথোপকথন আমি অক্সিজেনের অভাবেই পড়েছি ঝরে, আর কেউ বুঝুক আর নাই বুঝুক, আমি তো বুঝি আমি তোমার অভাবেই গেছি মরে।
×