ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি পুনরায় নির্বাচন থেকে পালিয়ে যাবার পথ খুজছে ॥ মেনন

প্রকাশিত: ০৩:০১, ৯ নভেম্বর ২০১৮

বিএনপি পুনরায় নির্বাচন থেকে পালিয়ে যাবার পথ খুজছে ॥ মেনন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন ঠিক করে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি। আজ শুক্রবার দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ১৪ দলের আসন সমঝোতা করারও আহ্বান জানানো হয়। এদিকে ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ডিসেম্বর নির্বাচন চায় বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট। এদিকে ৩০ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে যুক্তফ্রন্ট। বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সভা অনুষ্ঠিত হয় শুক্রবার। বৈঠকে নেতৃবৃন্দ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে এবং পার্টি মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও যথাসময়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। উল্লেখ্য ওয়ার্কার্স পার্টির পার্লামেন্টারী বোর্ড গত ১৪ আগস্ট প্রার্থীদের সাক্ষাতকারের মাধ্যমে পার্টির প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। পলিটব্যুরোর সভায় ১৪ দলের আসন সমঝোতা অবিলম্বে সম্পন্ন করার আহ্বান জানান হয়। বৈঠকে নির্বাচন সম্পর্কিত গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, জাতীয় ঐক্যফন্টের নেতৃত্বাধীন বিএনপি সংলাপে তাদের দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে পুনরায় নির্বাচন থেকে পালিয়ে যাবার পথ খুজছে। এ কারণেই নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী তফসিল নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সভায় দেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে আহ্বান জানান হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রততির স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে এখন এক কাতারে সামিল হওয়া জরুরী। কারণ নির্বাচন নিয়ে সহিংসতার পথ বেছে নেয়া মানেই দেশকে পিছিয়ে দেয়া। এতে গোটা জাতি পেছনের দিকে যাবে। যা উন্নয়নের পথে অন্তরায়। নেতারা বলেন, সবাই এখন রাজনৈতিকভাবে সচেতন। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের মধ্যে থেকেই তফসিল ঘোষণা করেছে। আমরা মনে করি সংবিধানের প্রতি সম্মান রেখেই সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনমুখী হওয়ার বিকল্প নেই। সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। সভায় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারের (খসড়া) উত্থাপন করেন। সভায় আলোচনা করেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, নুরুল হাসান, সুশান্ত দাস, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমদ বকুল, হাজেরা সুলতানা, মনোজ সাহা, কামরূল আহসান, আমিনুল ইসলাম গোলাপ, এ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ প্রমুখ। ৩০ ডিসেম্বর চায় যুক্তফ্রন্ট ॥ বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ভোট গ্রহণের তারিখ ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে ১৯ নবেম্বরের পরিবর্তে ২৬ নবেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২২ নবেম্বরের পরিবর্তে ২৯ নবেম্বর এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ২৯ নবেম্বরের পরিবর্তে ৬ ডিসেম্বর করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এক লিখিত প্রতিক্রিয়ায় এ আহ্বান জানান। প্রতিক্রিয়ায় বি. চৌধুরী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে আমরা গভীর অভিনিবেশ সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় অত্যন্ত কম মনে হয়। তিনি বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ, যাচাই-বাছাই, সাক্ষাৎকার গ্রহণ ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ কঠিন হবে। বি. চৌধুরী বলেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সৎ ও সুশীল প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার প্রয়োজনে আমরা মনে করি মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে ১৯ নবেম্বরের পরিবর্তে ২৬ নবেম্বর করা হোক। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২২ নবেম্বরের পরিবর্তে ২৯ নবেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ২৯ নবেম্বরের পরিবর্তে ৫ ডিসেম্বর করা হোক। অনুরুপভাবে ভোটগ্রহণের তারিখ ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর করা হোক। নির্বাচনের প্রতিটি পদক্ষেপ জনস্বার্থে নেয়া হোক। তিনি বলেন, এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ১ ডিসেম্বর হতে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং পরবর্তী ৭দিন কোনো ঘটনা হয় কি না এবং নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত অনুসারে ওইসব স্থানে যাওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাম জোটের নির্বাচন তফসিল প্রত্যাখ্যান-পুনঃতফসিল দাবি বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সভায় গৃহীত প্রস্তাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক ঘোষিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বলা হয় নির্বাচন কেন্দ্রিক সংকট উত্তরণে চলমান সংলাপ ও সমঝোতার প্রয়াসকে বিবেচনায় না নিয়ে একতরফাভাবে তফসিল প্রদান বিদ্যমান সংকট আরো ঘনীভূত করেছে। বাম জোটসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটের পক্ষ থেকে সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা স্থগিত রাখার দাবি করা হলেও নির্বাচন কমিশন তা বিবেচনায় নেয়নি। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা বাস্তবে সরকারি দলের নির্বাচন ছকেরই অনুসরণ মাত্র। দমন-নিপীড়নের পরিস্থিতিতে দেশে যখন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ন্যূনতম কোন গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই তখন বিরোধী দলকে চাপের মধ্যে রেখে নির্বাচনের তফসিল প্রদান যে সরকারের আরো একবার একতরফা নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সভার প্রস্তাবে বলা হয়, এমনিতেই এই নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের কোন আস্থা নেই। তদুপরি বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের দাবি উপেক্ষা করে তফসিল ঘোষণা, বিতর্কিত ইভিএম চালুর সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতাকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সভায় প্রস্তাবে নির্বাচনের তফসিল স্থগিত করে রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি জানানো হয়। বাম জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় উপস্থিত ছিলেন জোটের কেন্দ্রীয় নেতা শাহ আলম, বজলুর রশীদ ফিরোজ, জোনায়েদ সাকি, মোশাররফ হোসেন নান্নু, আলমগীর হোসেন দুলাল, হামিদুল হক, মোমিনুর রহমান বিশাল, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বহ্নিশিখা জামালী, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, রাজেকুজ্জামান রতন, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, মানস নন্দী, ফখরুদ্দীন কবীর আতিক প্রমুখ।
×