ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরবরাহ বাড়ায় কমেছে শীতকালীন সবজির দাম

প্রকাশিত: ০১:০৫, ১০ নভেম্বর ২০১৮

সরবরাহ বাড়ায় কমেছে শীতকালীন সবজির দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরবরাহ বাড়ায় কমতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজির দাম। স্থিতিশীল রয়েছে চাল, ডাল আটা, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। পেঁয়াজ ও আদার দাম আরও কমেছে। বাজারে সরবরাহ বেড়েছে দেশী জাতীয় ও ইলিশ মাছের। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকায় নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি বিরাজ করছে। এছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর কোন অপকৌশল গ্রহণ করা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, কাপ্তান বাজার, ফার্মগেট কাঁচা বাজার, ও মিরপুর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, শীতকালীন সবজিতে বাজার ভরপুর। ফুলকপি, বাধাকপি, লাউ, শিম, শালগম, মূলা, লাউশাক, পালংশাক সব ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। দামও কম। বাজার ও মানভেদে প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকায়। ২০-২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে প্রতিপিস ফুলকপি। টমেটো কেজি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩০-৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে লাউ। লাউশাক ও পালং শাক বিক্রি হচ্ছে ১০-২০ টাকায়। একমাস আগেও এসব সবজি পেতে ভোক্তাকে দ্বিগুন থেকে তিনগুন টাকা গুনতে হয়েছে। সস্তায় টাটকা সবজি পেয়ে খুশি ভোক্তারা। ফার্মগেট বাজারের সবজি ক্রেতা নাসিম বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। টাটকা সবজি পাওয়া যাচ্ছে পছন্দ সই দামে। তিনি বলেন, সবজির দাম কমায় খুশি সাধারণ ভোক্তারা। এদিকে, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাওরান বাজারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সারি সারি ট্রাকে সবজি আসতে থাকে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত রাজধানীর খুচরা বিক্রেতারা এসব সবজি কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন বাজারে। পরে তা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাওরান বাজারের সবজির পাইকারি বিক্রেতা মো. জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। সব ধরনের সবজির উৎপাদন ভাল হওয়ায় টাটকা সবজি আসছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। তিনি বলেন, পাইকারিতে সবজির দাম বেশ কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। পাইকারিতে যেহারে দাম কমেছে সেইভাবে খুচরা বাজারে কমছে না। তিনি বলেন, খুচরায় দাম আরও কমা উচিত। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দাম আরও হ্রাস পাবে। প্রতিদিন সবজির সরবরাহ বাড়ছে। রাজধানীতে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০, মুলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেজে ৫০ টাকা, ঝিঙা ৪০ টাকা, করলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাকরোল ৩৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ মানভেদে ৪০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে দেশীয় জাতের মাছের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। নদী, নালা ও খালবিল ও হাওর-বাওরের পানি কমতে শুরু করায় জেলেদের জাল ভরে উঠছে বিভিন্ন জাতের দেশী মাছে। সেই মাছে ভরপুর এখন রাজধানীর বাজার। এছাড়া বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ইলিশ মাছ। গত ছয়মাস ধরে বাজারে বেশি দামে মাছ বিক্রি হয়েছে। সর্বশেষ ইলিশ ধরা বন্ধ হলে দেশী জাতের সব মাছের দাম বেড়ে যায়। আবার এখন কমে এসেছে সেই দাম। মাছের দাম কমায় খুশি সব ধরনের ভোক্তারা। ভাতে-মাছে বাঙালির মাছ হলে আর কিছু তেমন প্রয়োজন হয় না। সেই মাছ এখন বেশ সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। কাপ্তান বাজারের মাছ বিক্রেতা আবুল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, এখন সব ধরনের মাছের দাম কিছুটা কমেছে। নদীনালা ও খাল বিলের পানি কমায় দেশীয় জাতের মাছের সরবরাহ বেড়েছে। এছাড়া এ বছর নদী ও সাগরে এই সময় প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। ফলে বাজারে মাছের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, সরবরাহ ঠিক থাকলে আগামী দিনগুলোতে মাছের দাম আরও হ্রাস পাবে। এদিকে, গত পনের দিন আগে যেসব চিংড়ি ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে তা এখন ৬০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ৭০০-৮০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। এছাড়া মাঝারি সাইজের ইলিশের জোরা ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতিকেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-৩৫০ টাকায়। বাজারে মাছের আকারভেদে প্রতিকেজি টেংরা মাছ ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, শিং ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, কৈ ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, কাচকি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মলা ২৭০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে মুদিপণ্য বিশেষ করে চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতলে ও চিনির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আমন ধান কাটা শুরু হওয়ায় মোটা চালের দাম কিছুটা কমেছে। ৪০ টাকার নিচে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ভালমানের মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬৫ টাকায়। প্রতিকেজি মসুর ডাল দেশি ১০০ টাকায়, মসুর ডাল মোটা ৬০-৭০ টাকায়, মুগ ডাল ১২০ টাকায়, ভোজ্যতেল প্রতিলিটার খালা ৮০-৮৪ টাকায় ও বোতলজাত প্রতিলিটার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি আদা ১০০-১৬০ টাকা, রসুন ৬০-৮০ টাকা, পেঁয়াজ দেশি ৩৫-৪০ টাকা, ভারতীয়টি ২৫-৩০ টাকা, চিনি ৫০-৫৫, আটা ২৬-৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১২০-১৩৫ টাকা, গরুর মাংস ৪৭০-৫০০ টাকা এবং প্রতিকেজি খাসির মাংস ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে নতুন উঠতে শুরু করেছে রাজ ও পাতি হাঁস। শীত আসায় এসব হাঁসের বিক্রিও শুরু হয়েছে বলে জানালেন বিক্রেতারা।
×