ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা থাকায় এসডিজি অর্জিত হবে’

প্রকাশিত: ০২:৩৩, ১০ নভেম্বর ২০১৮

‘রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা থাকায় এসডিজি অর্জিত হবে’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা থাকায় এমডিজি’র মতো স্থায়ীত্ব উন্নয়নেও বাংলাদেশ সক্ষমতার পরিচয় দিতে সমর্থ্য হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বর্তমান সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় দেশে এখন ধারাবাহিক উন্নয়ন হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে অর্থায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ একটি বড় সমস্যা। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করা সম্ভব যদি রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা থাকে। এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার যথেষ্ট আন্তরিক এবং সেই সঙ্গে চেষ্টাও চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির উদ্যোগে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব অভিমত ব্যক্ত করেন। অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে ওই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। প্রধান অতিথি হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি এম তাফাজ্জাল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। এর আগে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ এফসিএ। ড. কাজী খলীকুজ্জামান বলেন, জাতিসংঘের নেয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) লক্ষ্য অর্জনে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরী। এছাড়া টেকসই উন্নয়নে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা থাকতে হবে। অর্থায়নের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বড় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হলেও এখাতে দাতারা ন্যায্য অর্থায়ন করছে না। সুস্থ্য বাজার অর্থনীতির ঘাটতি রয়েছে দেশে। উন্নয়ন আগে না অধিকার আগে, এটাও নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। তিনি বলে, এ দুটো একসঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। তবে বর্তমান সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে আন্তরিক। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং সরকার বাজেট প্রণয়নে এসব বিষয় বেশ ভালভাবেই খেয়াল রাখছে। তিনি বলেন, সবকিছুতে নেতিবাচক মনোভাব পরিবর্তন করে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। কেউ কেউ বর্তমান সরকারের অগ্রগতিকে স্বীকারই করতে চান না। আবার কেউ কেউ সব হয়ে গেছে ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে থাকেন। এখন দেশে ধারাবাহিক উন্নয়ন হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা সরকারী অফিসে কাজ করেন তারা যেন দ্রুত ফাইলটা ছেড়ে দেন। সবার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না হলে নিজের অধিকার অর্জন করা যায়। এসডিজি বাস্তবায়নে বছরে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থের প্রয়োজন। আর ৬৬ বিলিয়ন ডলার অর্থের প্রয়োজন বাংলাদেশে। কিন্তু এই অর্থ কোথা থেকে আসবে? সেটা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। খলীকুজ্জামান আরও বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে সাধারণ মানুষকে বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্যে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি এম তাফাজ্জাল ইসলাম বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সংবিধানের আর্টিকেল আট-এ সবার জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এটাই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, সংবিধানের মৌলিক অধিকার দেয়া হয়েছে। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। যে শিশু আজ ভুমিষ্ট হলো-তার অধিকারও নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। জিডিপি ৭-৮ বছর ছয়ের উপর সাত এর কাছাকাছি অবস্থান করছে। কিন্তু এই সময়ে বড় লোকরা যেভাবে আরও ধনী হয়েছেন সেই তুলনায় গরিবরা কতদূর এগিয়েছে? এটাও অর্থনীতি সমিতিকে দেখতে হবে। ড. আবুল বারকাত বলেন, এসডিজি নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেক আলোচনা হয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার। আইনস্টাইনের একটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বিশ্ব সীমাহীন নয়। কিন্তু অজ্ঞতা যে অসীম এটা আমি জানি। এসডিজিতে ১৭টি লক্ষ্য এবং লক্ষ্যমাত্রার ১৬৯টি ধারা রয়েছে। এখানে কোন কিছুই বাদ দেয়া হয়নি। এ কারণে মনে হয় এসডিজি বাস্তবায়ন হবে না। তিনি বলেন, যখন বলা হয়- ফর অল। তখন বুঝবেন এটা আর হবে না। এসডিজিতে এখন ফর অল কথাটি বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মিলিনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোলে দারিদ্র্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি পুষ্টির অভাব দূরীকরণে সর্বোচ্চ তাগিদ দেয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রায় এমডিজি বেশ ভালভাবেই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, এসডিজি অর্জনে বৈষম্যদূরীকরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে আর্থিক, সামজিক ও রাজনৈতিক সব ধরনের বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, বিশ্বে ধনীদের সংখ্যা মাত্র ১ শতাংশ। এই ১ শতাংশের হাতে পৃথিবীর ৫০ ভাগ সম্পদ রয়েছে। বাকি ৯৯ ভাগ মানুষ ৫০ ভাগ সম্পদের মালিক। এ কারণে বিশ্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেশের বর্তমানে এই প্রবৃদ্ধি থেকে বেশি মানুষ উপকৃত হয়নি। এই প্রবৃদ্ধির সুফল পেতে হলে বন্টন ব্যবস্থা সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আফ্রিকার উদাহরণ টেনে বলেন, বর্ণ বৈষম্যও বিশ্বে প্রবল। নেলশন ম্যান্ডেলার দেশ আফ্রিকায় বর্ণ বৈষম্য প্রবলভাবে আছে। বৈশ্বিক পুঁজিবাদী কাঠামো এখন বড় সত্য। পুঁজিবাদীর এই অশৃঙ্খল থেকে নিরাপদ থাকার জন্যই উদারীকরণ ও বেসরকারীকরণের উপর গুরত্ব দেয়া হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে মানব সভ্যতা ভবিষ্যতে টিকবে কিনা সেটাও একটি জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন,এসডিজি অর্জনে প্রবৃদ্ধি দেখানো বড় কোন বিষয় নয়। অর্থনীতিবিদরা কনভিন্স হলে প্রবৃদ্ধি দ্বিগুনও দেখানো সম্ভব। কিন্তু বর্তমান যে প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে তা আরও বড় হতে পারে। কারণ দেশে যে পরিমাণ কালো টাকা রয়েছে তা ঐ প্রবৃদ্ধির মধ্যে আসেনি। এছাড়া গৃহকর্মীদের পরিশ্রমের আর্র্থিক মূল্যও প্রবৃদ্ধিতে ধরা হয় না। এসব হিসেব উঠে আসলে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।
×