ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শেখ হাসিনাই ভরসা ॥ জনগণ যেন বুঝতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১২ নভেম্বর ২০১৮

  শেখ হাসিনাই ভরসা ॥ জনগণ যেন বুঝতে পারে

অজয় দাশগুপ্ত ॥ দেশের মঙ্গল বা ভাল চাইলে আপনাকে কঠোর হতে হবে- এটাই স্বাভাবিক। তারপরও শেখ হাসিনা নমনীয়। যারা ছাড় না দেয়ার অপরাধে তাঁকে দোষী করেন তারা দেখলেন তিনি একবার না দু’দুবার তাঁর ঘোর বিরোধীদের সময় দিয়েছেন। গণভবনে ডেকে নিয়ে সংলাপ করেছেন। সেখানে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে তারা নিজেরাও জানেন না আসলে তারা কি চান। যে কারণে একেকবার একেক কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রীকে সর্বজনগ্রাহ্য কারও নাম দিতে পারেননি। আর ভেতরে এক বাইরে আরেক কথা বলে লোক হাসিয়েছেন। এটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। নির্বাচন সুষ্ঠু হোক এটা সবাই চায়। কিন্তু তাদের চাওয়া যদি তারা ঠিকভাবে তুলে ধরতে না পারেন তাহলে মানুষের চাওয়া আর নেতাদের চাওয়ার মিলন হবে কিভাবে? মূলত তারা বলতে পারেনি যে- তারা গদি ছাড়া আর কিছুই চান না। ড. কামাল হোসেন দেশের কোন ঘটনায় মুখ খুলেছিলেন আগে? শাহবাগ থেকে ব্যাংকের টাকা বা লাশ থেকে ধর্ষণ কোথাও তার কোন ভূমিকা আছে? সে মানুষ হঠাৎ করে ফ্রন্টের নেতা হয়ে দেশ উদ্ধার করবেন এটা কি করে আমলে নেবেন জনগণ? তারা ভাল জানেন তাদের পথের কাঁটা আসলে শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা আর যাই করুক কথা বলতে ছাড়েন না। কথা বলার হক তিনি আদায় করে নিয়েছেন। সম্ভাবনার দেশকে তিনি সম্ভব করে তুলেছেন তাঁর যোগ্যতায়। যে কারণে গণভবনে যাওয়া নেতাদের রাজনৈতিক লিপ্সা ব্যতীত আর কোন কথা ছিল না। এদের প্রতি মানুষের ভালবাসা আছে কি নাই সেটা তারা ভোটেই জানতে পারবেন। তবে এখনও বিএনপিই মূল বিরোধী দল। যে কারণে তারা বিএনপির পেছনে গেছেন। যাদের ভোট ব্যাংক মূলত শূন্য তারা ধানের শীষে বৈতরণী পার হওয়ার দিন গুনছেনÑ এই যা তফাৎ। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে কি অপরাধ করল তাও তারা বোঝাতে পারেনি। আপনি নির্বাচন চান অথচ তফসিল চান না এটা কেমন আবদার। সম্পর্কহীন সন্তান হবে কি করে? গণতন্ত্রের পাহারাদাররা এমন সব আবদার করেন এমন সব কথা বলেন শুনলে স্বয়ং লিংকনও কবর ছেড়ে উঠে আসবেন। এদের মূল সমস্যা জনবিচ্ছিনতা। নেতা হতে গিয়ে তারা মানুষের কাছ থেকে ক্রমাগত দূরে সরে এখন ষড়যন্ত্র আর প্রাসাদ রাজনীতির শিকার। ফ্রন্ট এখন এমন এক জায়গা যেখানে তার প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলতে ভয় পায় অথবা বলতে নারাজ। এটা কি বিএনপির জন্য সুখকর? আমার ধারণা মাছ যারাই খাক কাঁটা গিলছে বিএনপি। এই কাঁটা গেলাটা আরও ভয়ানক হবে যখন তারা এদের আসল চেহারা দেখতে পাবে। জনগণের সমর্থন আছে বলে মাঠে যে পরিমাণ মানুষ জমায়েত হয় সেটাও অচিরেই শূন্য করে দেবে এসব হেভিওয়েট নামধারী নেতা। নেতার সঙ্কটে ভোগা বিএনপির কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার মানুষজন এখন তাদের দলকে ঘিরে কিলবিল করছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর দল ও দেশকে। আমাদের যারা গালমন্দ করেন তাদের বলি ব্যক্তিগতভাবে আমি নেত্রীর কাছে যাইনি কখনও। তিনি হয়ত আমায় চেনেনও না, তবু আমরা তাঁর কথা বলি। কারণ, আমরা ইতিহাস দেখেছি। আমাদের চোখের সামনে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দেখে ঘুমাতে না পারা মানুষ আমরা। না ছিল উন্নয়ন না কোন প্রত্যাশা। খালি গলাবাজি আর উন্মাদনায় দেশ চলে না। সেখানকার টকশোতে বিদগ্ধজনরা ইমরান খানকে বাংলাদেশ বানিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন জানায়। খেলা শিল্প উন্নতি বা অগ্রযাত্রায় পাকিস্তান আজ কত পেছনে। সে রাষ্ট্রের অনুগামী একটি সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশে শাসনে আসলে কি হবে ভাবুন। যারা সম্প্রতি শেখ হাসিনার হেফাজতের অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে নানা কথা বলেন, সে তারাই কিন্তু তাঁকে কঠোর মনোভাব আর দমনকালে নিষ্ঠুর বলে গালাগাল দিতেন। আপনাদের নিয়ে এ এক সমস্যা। না দমালে বলেন সুবিধাবাদী আর দমালে বলেন হত্যাকারী। তিনি যে সেখানে গিয়েছিলেন সে কি আসলেই তাঁর সৃষ্ট কোন ঘটনা? না আমরাই তার পথ খুলে দিয়েছি তাঁকে? খালেদা জিয়া গেলে দোষ নাই। শেখ হাসিনা গেলেই দোষ। এ ব্যাপারে তাঁকে সমর্থন না করেও বলি নির্বাচনের কৌশল বা দেশের পিছিয়ে পড়া এসব তারুণ্যের সঙ্গে মূল রাজনীতির সংযোগের দরকার আছে। তাদের চোখ খোলার রাস্তা তৈরি হলে দেশ ও জাতিই লাভবান হবে। শেখ হাসিনা আর যাই করুক, এদেশ ও জাতির সঙ্গে বেঈমানি করেন না। তাঁর নেতৃত্বে এতদূর আসা দেশকে যারা পিছিয়ে দিতে রাজি তারাই তাঁকে এসব করতে বাধ্য করেন। সবাই মুখে বলেন তারেক জিয়া শয়তান বা তার কারণেই বিএনপির এই হাল। আবার এরাই মনে মনে চায় দেশে এসে এই নেতা রাজত্ব করুক। এটা ভ-ামি না? দেশ ও জাতির উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় যে দলের কোন ভূমিকা নেই। বরং যারা গত দশ বছর ধরে তার বিরোধিতা করল তাদের প্রতি এই সহানুভূতি বা সমর্থনের আসল কারণ মানুষের অজানা নয়। তলে তলে সাম্প্রদায়িকতা আর প্রতিবেশী দেশের বিরোধিতাই এর মূল কারণ। মধ্যবিত্ত বাঙালীর এই মন মানসিকতা না বদলালে আমাদের দুর্ভাগ্যের ইতি ঘটবে না। শেখ হাসিনা একদিনে শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেননি। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে জনমনে আসন পাতা নেত্রী যখন সুবিধাবাদীরে চোখে দুশমন তখনই বুঝি তিনি সঠিক পথে আছেন। এমনটা বঙ্গবন্ধুর বেলায়ও হয়েছিল। তিনি যেমন দমেননি ইনিও দমবেন না। নারী শক্তির মূল্যায়ন নারীদের অগ্রগতি যাদের চোখের বিষ তারাই তড়পান। তারাই তাঁর বিরোধিতা করেন যারা বাংলাদেশকে নিজেদের স্বার্থের জন্য গোলাম বানিয়ে রাখতে চায়। এদের জবাব দেয়ার উপযুক্ত সময় এবারের নির্বাচন। যেখানে ফয়সালা হবে দেশ কি আরও আলোর দিকে যাবে না তাকে এদের হাতে ছেড়ে দিয়ে জাতি আবার মাইনাস থেকে শুরু করবে। নির্বাচন কেবল ভোটাধিকার না। কেবল মানুষের রাগ বা ক্রোধ কিংবা অসন্তোষ প্রকাশের হাতিয়ারও না। এখানে মেধা বিদ্যাবুদ্ধি ও যুক্তি কাজ করা চাই। আর তা যদি হয়ত শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তিনি না থাকলে কি হবে বা হতে পারে তা অনুমান করাও ভয়ের। উটকো নেতা বা জঙ্গীবাদ কিংবা উত্তেজিত মানুষের দেশ না বাংলাদেশ। এর ইতিহাস আছে। আছে অতীত। বিগত এক দশকে তার অর্জনের মাইলফলকগুলো যেন কথা বলে। বিশ্বে নন্দিত ও স্বীকৃত হওয়ার এমন সময়ে কেউ যেন তাকে ব্যক্তি আক্রোশ কিংবা সামষ্টিক স্বার্থে পিছিয়ে দিতে না পারে। একবার তাহলে আমাদের দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না। তফসিল ঘোষণার পর গাত্রদাহ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এরা মুখে বললেও আসলে ভোট চায় না। চায় গদি। আর শেখ হাসিনা বার বার বলছেন তিনি যা করার করেছেন। করবেনও। এরপর যদি জনগণ না চায় তাতেও তাঁর কোন আফসোস থাকবে না। এই তো নেতার মতো কথা। নৌকা আরও একবার বৈতরণী পার না হলে বাংলাদেশের মঙ্গল হবে না। বাকিটা জনগণের হাতে। তাদের সজাগ করা সচেতন করা আর ঠিক কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করার সময় এখন। সরকারী দলের নেতারা খাই খাই ভাব ছেড়ে সে কাজ করলেই শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী হবে। [email protected]
×