ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জে হোন্ডা বাইক ফ্যাক্টরির উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১২ নভেম্বর ২০১৮

মুন্সীগঞ্জে হোন্ডা বাইক ফ্যাক্টরির উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ বিশ্বনন্দিত মোটরসাইকেল কোম্পানি হোন্ডা এবং বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্টিল এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (বিএসইসি)-এর যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের উদ্বোধন হয়েছে। রবিবার শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার চর বাউশিয়ার আব্দুল মোমেন ইকোনমি জোনে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইন্টার-পার্লামেন্ট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, বাংলাদেশ ইকোনমি জোনের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, বাংলাদেশ স্টিল এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানী রাষ্ট্রদূত হিরোয়াসু ইজুমি। এছাড়া হোন্ডার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন, হোন্ডা মোটর কোম্পানি লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রডাক্শন অপারেশন চীফ অফিসার ইয়োশি ইয়ামানে, হোন্ডা মোটর কোম্পানি লিমিটেডের অপারেটিং অফিসার নোরিয়াপি আবে, অপারেটিং অফিসার এশিয়া হোন্ডা মোটর কোম্পানি লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসায়াকি ইয়াগাবাশি, বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়োইচিরো ইশি। মুন্সীগঞ্জে ২৫ একর জমির ওপর ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে যৌথভাবে এই কোম্পানি গড়ে তোলে হোন্ডা এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ স্টিল এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন। হোন্ডার ৭০ ভাগ ও ৩০ ভাগ বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশ স্টিল এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন। ২০১৭ সালের ৫ নবেম্বর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মাত্র ১ বছরের মধ্যে ফ্যাক্টরিটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে সক্ষম হলো। ১৪ হাজার আয়তনের এই ফ্যাক্টরিটিতে বছরে ১ লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। বাজারের প্রবণতা বুঝে এই ফ্যাক্টরিটি ২০২১ সালের মধ্যে ২ লাখ মোটরসাইকেলের উৎপাদনের ব্যবস্থা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সম্পূরক কর হ্রাস করায় সরকারের সহযোগিতায় এটি দ্রুত অগ্রসর হয়। যার ফলে বিএইচএল স্থানীয় বাজার হতে কাঁচামাল ক্রয় করে নতুন এই ফ্যাক্টরিতে স্বল্পমূল্যে উৎপাদন করে এদেশের মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে পারবে। প্রাথমিকভাবে ফ্যাক্টরিটি বডিফ্রেম ও সুইং ইর্ম তৈরি করলেও খুব শীঘ্রই অন্যান্য অংশের উৎপাদনও শুরু করবে। নতুন এই ফ্যাক্টরিটি চালু হওয়ায় যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে তেমনি এখানকার কর্মীরাও আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে ও কাজ করতে পারবে। বর্তমানে ৩৯০ জন জনবল নিয়ে কাজ শুরু করলেও সম্প্রসারণ বাজারের সঙ্গে সঙ্গে জনবল বাড়ারও ব্যবস্থা নিবে কোম্পানিটি। প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, এটি জাপান ও বাংলাদেশের বিনিয়োগের একটি সফল দৃষ্টান্ত। আজ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। দীর্ঘ ৫ বছরের প্রচেষ্টায় হোন্ডা ব্রান্ডের মোটরসাইকেল সংযোজন থেকে নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন শুরু হলো। আমার বিশ্বাস এর মাধ্যমে জাপান বাংলাদেশর দ্বি-পাক্ষিক বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। ২০২১ সালের মধ্যে শিল্প সমৃদ্ধ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় তৃণমূল পর্যায়ে জ্ঞানভিত্তিক ও সবুজ শিল্পায়ন প্রসারে জোরদার করা হচ্ছে। এসডিজি লক্ষ অর্জনে আমরা টেকসই ও পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব আধুনিক শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন নীতি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। মন্ত্রী বলেন, সরাসরি কিংবা যৌথ বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এক শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যে উন্নত দেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল আব্দুল মোনেম ইকোনমি জোনে গড়ে উঠা আজকের এই মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানাও বিদেশী বিনিয়োগের একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত। তিনি আরও বলেন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আমরা শুধু অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেইনি, এর পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রকার নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা দিয়ে আসছি। আমাদের এসব প্রণোদনায় আকৃষ্ট হয়ে বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেড ২০১২ সালে এ দেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কারখানাটি নিজস্ব জায়গায় সংযোজন থেকে ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যক্রম শুরু করেছে। আমির হোসেন আমু আরও বলেন, দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে বিশ্বমানের মোটরসাইকেল উৎপাদন আমাদের সরকারের অন্যতম লক্ষ। ২০২৫ সালের মধ্যে মোটরসাইকেল শিল্প খাতের ব্যাপক উন্নয়নের লক্ষ নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ লক্ষ অর্জনে শিল্প মন্ত্রণালয় ‘জাতীয় মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন নীতি-২০১৮’ প্রণয়ন করেছে। এ নীতি প্রণয়নের ফলে উদীয়মান শিল্প খাত হিসেবে মোটরসাইকেল শিল্প খাত আত্মপ্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে এ খাতে কয়েক হাজার দক্ষ জনবল সৃষ্টির পাশাপাশি দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। হোন্ডা মোটর কোম্পানি লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রডাক্শন অপারেশন চীফ অফিসার ইয়োশি ইয়ামানে বলেন, হোন্ডার ২০৩০ সালের লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনের সম্ভাবনা বৃদ্ধির কাজ করা। বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়োইচিরো ইশ বলেন, শীর্ষ স্থানীয় মোটরসাইকেল কোম্পানি হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি। হোন্ডা লিমিটেডের জাপানের দক্ষতা ও দিক নির্দেশনা কাজে লাগিয়ে এদেশে মোটর শিল্পের পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরি, কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি সরবরাহ, কাঁচামাল ও পার্টস শিল্পের উন্নয়ন এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে সর্বোপরি এ দেশের উন্নয়ন হবে। সুলভ মূল্যে সেরামানের পণ্য সরবরাহ করে এ দেশের মানুষের জীবনের গতিশীলতা বৃদ্ধি করে জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাংলাদেশ হোন্ডা।
×