রাগ একটি ইমোশনাল বিষয়, যার বহির্প্রকাশ হয় বিভিন্ন মানুষের বিভিন্নভাবে কেউ নিজের শরীরে আঘাত করে, কেউ অন্যকে আঘাত করে আবার কেউ বা আত্মহত্যা করে। কিন্তু এর প্রভাব পড়ে ব্যক্তির নিজের ওপর পরিবারের ওপর এবং সমাজের ওপর।
ঘটনা : ১. রহিমার বয়স ২৫ বছর। এই বয়সে ডিভোর্সি হয়েছে রাগের কারণে। স্বামীর একটি কথাকে মানতে না পেরে নিজ থেকে ডিভোর্স দিয়ে চলে এলেন বাপের বাড়িতে। এখন কোথায় তাঁর সন্তান, কোথায় তাঁর স্বামী।
২. বাপের সঙ্গে রাগ করে হঠাৎ কেরোসিন খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সুমী।
৩. প্রেমে ব্যর্থ হয়ে হাত কেটে উদাহরণ করে অনেকে। কমবেশি রাগ সবার মধ্যেই আছে কিন্তু এই রাগের কারণে কারও পড়াশুনা, কর্মকা- ও সংসার জীবন ব্যাঘাত ঘটে তখন রাগ একটি সমস্যা এবং সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো উচিত।
কি কি কারণে রা হতে পারে :
১. ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা।
২. বিষণœতা নামক অসুখ।
৩.সুচিবাই।
৪. নেশাগ্রস্ত।
৫. ঘুমের সমস্যা।
৬. দীর্ঘদিন শারীরিক রোগে ভুগে থাকলে যৌন সমস্যা।
৭. বংশগত কারণে অনেকে রেগে যেতে পারে। খেলার মাঠে রাগে যার উৎপত্তি হয়। ঞৎধহংভবৎ ধৎধংঁষ ঃৎধহধংভধৎ হয়।
৮. বিভিন্ন মানসিক রোগের কারণে
৯. পারিবারিক অশান্তি।
১০. পরিবেশের মধ্যে শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ।
কেন রাগে : বিভিন্ন মতামত :
১. প্রত্যেকটি মানুষের জীবনের মধ্যে বায়োক্যামিনাল ব্যালেন্স রাগ করে বিভিন্ন ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার যা রোগীকে সহযোগিতা করে।
২. বাইরের মানসিক চাপের কারণে, শারীরিক অক্ষমতার কারণে, ব্যক্তিদের কারণে এগুলো হেরফের হয় তখন মানুষটি রাগ তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
১. মনোবিজ্ঞানী ফ্লরোডের মতে রাগ জন্মগত কুঅভ্যাস।
২. বিজ্ঞানী ডোনাও মিলনের মতে ঋৎঁংঃৎধঃরড়হ ষবধফ ঃড় ধমমৎবংংরাব
৩. সোশ্যাল ঃবধৎরহম থিওরির মতে ৎবরহঃড়ৎব ধহফ রসরঃধরড়হ বিভিন্নভাবে রাগকে লালিত করেও বহির্প্রকাশ করে এজন্য সামাজিক প্রেক্ষাপট ও সামাজিক ব্যবস্থা দায়ী। সব রাগই জন্মগত নয়।
৪. ফ্রয়েডের মতে মানুষ যেমন খায়, পান করে ও যৌন ক্ষুধা মিটায় তেমনি রাগ একটি বিষয় যা ক্ষণে ক্ষণে হতে পারে যা ভেতরের ক্ষুধা মিটায়। তাঁর মতে মানুষের অবচেতন মনেই লুকিয়ে আছে আগ্রাসনের স্পৃহা। সভ্যতা শুধু একটা মুখোশ পরিয়ে সেই আগ্রাসন স্পৃহাকে লুকিয়ে রেখেছে।
রাগের ক্ষতিকর দিকগুলে কী কী ?
১. শারীরিক ক্ষতি।
২. মানসিক।
৩. অর্থনৈতিক।
৪. সামাজিক।
কী কী ক্ষতি হতে পারে :
১. সংসারে অশান্তি হয় ও সন্তান শিখে ফেলে।
২. সংসার ভেঙ্গে যায়।
৩. হার্ট এ্যাটাক হয়।
৪. অন্যকে মেরে ফেলা।
৫. আত্মহত্যা বিষপান, মদ্যপানের অভ্যাস করা।
৬. হাত পা কাটা।
৭. ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়া।
৮. ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকা।
১. উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে রাগ তার জীবনকে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে, অনেকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়, নেশা খাওয়া শুরু করে, অনেকে রাগ করে বিয়ে করে ফেলে, রাগ করে খারাপ পথে চলে যায়।
২. রাগ করে বাবা-মাকে প্রতিশোধ দেখাতে তার পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করে ফেলে। এসবই পরিকল্পনাহীন বয়সের বহির্প্রকাশ।
৩. মহিলাদের ক্ষেত্রে রাগ সংসার চালানোর ক্ষেত্রে বড় বাঁধা হতে পারে।
৪. মা-বাবার রাগ সন্তানের মানসিক বিকাশ, বুদ্ধি বিকাশ ও শারীরিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
৫. বাবাকে ভয় পায় বলতে পারে না, বাবা বাসায় আসলেই শিশুটির মাথাব্যথা।
৬. সন্তানের সামনে হৈ চৈ করা, রাগারাগি করা, জোরে জোরে কথা বলা শিশুরা এসব আচরণ নকল করে অভিনয় করে তার মগজ দখল করে নেয়।
রাগের উৎস কোথায় :
কি রক্তে কি মাথায় কি জীবনের মধ্যে এই বিভেদ এখনও পরিষ্কার নয়। তবে অনেক কিছুর সমন্বয়ে মানুষ রাগে। রাগ হচ্ছে রোগের লক্ষণ, পারমোনালিটির সমস্যার লক্ষণ, রাগ একটি উপসর্গ কখনও রাগ উপকারে আসে কখনও রাগ অপকারে আসে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতি করে । পরিণাম হয় অনেক খারাপ, দুঃখজনক, অনেক বেদনাজনকও আপত্তিকর ভয়াবহ।
রাসায়নিক বিশ্লেষণ : সেরোটনিকের কমবেশি তারতম্য ডোপামিনেক বেশি তারতম্য এ্যাসিটাইমকলিনের তারতম্য গাবার ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।
ডাঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি
০১৮১৭০২৮২৭৭
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: