ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের সঙ্গে দু’দিনের মধ্যে আসন বন্টন নিয়ে সমঝোতা : হাওলাদার

প্রকাশিত: ০২:২৬, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

আওয়ামী লীগের সঙ্গে দু’দিনের মধ্যে  আসন বন্টন নিয়ে সমঝোতা : হাওলাদার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তিনদিনে এক হাজার ৯৮৬টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। মঙ্গলবার বিকেলে দলের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে জাপার শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফের মহাজোট গঠনের মধ্য দিয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন তারা। আগামী দুই দিনের মধ্যে আসন্ন বন্টন চূড়ান্ত হবে বলেও জানান দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বন্টন নিয়ে জাপার আলোচনা চলছে। এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, শরিকদের সঙ্গে আসন বন্টন করতে আরো অন্তত চারদিন সময় লাগবে। দলের চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, প্রতিটি আসনেই জাতীয় পার্টির রিজার্ভ ভোট আছে, তারাই প্রতিটি আসনের জয়পরাজয়ে মূল ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টি থাকলে প্রতিটি আসনে মহাজোটের প্রার্থীর বিজয়ের পথ সহজ হবে। নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনা দেখা যাচ্ছে একথা উল্লেখ করে সাবেক মন্ত্রী কাদের বলেন, প্রতিদিনই শতশত নেতা-কর্মী মনোনয়ন পত্র গ্রহণ করছেন। তাদের কথা বিবেচনা করে ১৪ ও ১৫ নবেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, যতদ্রুত সম্ভব মহাজোটের আসন বন্টন শেষ হবে। চুলচেরা বিশ্লেষণে চুড়ান্ত হবে প্রার্থী তালিকা। দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে মনোনয়নপত্র বিতরণ পরিদর্শনে এসে পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টি মহাজেটে থেকেই নির্বাচনে অংশ নেবে। তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই দু’একদিনের মধ্যেই মহাজোটের আসন বন্টন চুড়ান্ত। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আশা করছি শরিক দলগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন পাবে। তবে, সব কিছুই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চুড়ান্ত হবে। সাবেক মন্ত্রী হাওলাদার বলেন, আশা করছি সকল রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য হবে। নির্বাচনের পরিবেশ দেশে-বিদেশে সমাদৃত হবে। জাতীয় পার্টি এখন যে কোন সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ এবং অনেক শক্তিশালী। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোন বিভেদ নেই। আমরা সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ। তাই সারাদেশে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মানুষের এত আগ্রহ। জাতীয় রাজনীতিতেও জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নে হাওলাদান বলেন, আমরা চাই একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। আন্তর্জাতিকভাবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে হলে ফলাফল যাই হোক তা মেনে নেয়া উচিত হবে সকল রাজনৈতিক দলের। তাছাড়া দেশের মানুষ এখন শান্তির পক্ষে। নির্বাচনে না গিয়ে সহিংসতা, হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও, পোড়াও এটা কোন গণতান্ত্রিক চর্চা হতে পারে না। আমরা জাতীয় পার্টি সহিংসতার রাজনীতি বিশ্বাস করি না। তাই গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষায় সব সময় প্রয়োজনীয় কাজটি জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। জাতীয় পার্টি কখনই সাংবিধানিক সংকট তৈরী হতে দেয়না। তাই আগে ভাগে আমরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছি। এখন সব দল ও জোট নির্বাচনমুখী। এসময় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, সুনীল শুভ রায়, এসএম ফয়সল চিশতী, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু সহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে মঙ্গলবার আজ জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ঢাকা-১৮ থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া ইসলামী মহাজোট চেয়ারম্যান আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক, সদস্য সচিব আবু হানিফ হৃদয়, জাতীয় পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুস সবুর আসুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, সালাহ উদ্দিন মুফতি, ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, এম হাবিবুল্লাহ, আলমগীর শিকদার লোটন, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, শফিকুল ইসলাম শফিক, ফখরুল আহসান শাহাজাদা, ক্যাশেঅং মারমা, আহাদ চৌধুরী শাহিন, ডাঃ আবুল কাশেম, চাঁদপুর-৪ থেকে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মিলনসহ ৮৮৫টি মনোনয়ন পত্র বিতরণ হয়েছে। এনিয়ে তিন দিনে মোট ১ হাজার ৯৮৬ টি মনোনয়র পত্র বিতরণ হয়েছে। আজ হিরো আলম সহ কয়েকশ’ মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের মনোনয়নপত্র জাতীয় পার্টির বনানীন অফিসে জমা দিয়েছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দলীয় ফরম বিক্রি চলবে বলে জানিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস এণ্ড পলিটিকাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায়। তিনি জানান, মঙ্গলবার জাপার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ৮৮৫টি ফরম ক্রয় করেছেন। আগামী ১৬ নভেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরশাদের নেতৃত্বে মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করবেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট গঠন করে জাতীয় পার্টি। এরপর ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে একক ভাবে অংশ নেয়ার কথা বলে জাপা। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে যায় দলটি। মূলত ২০০৮ সালের নির্বাচনে পর থেকে মহাজোট আর কার্যকর নেই। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের মহাজোটে এরশাদের নির্বাচন করা নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল। তবে সবকিছু নির্ভর করছিল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়ে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় ফের মহাজোটে এরশাদের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে মহাজোটে থেকে ৮০টি আসন, ১২জন মন্ত্রী পরিষদের সদস্য রাখতে এরশাদ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আনুষ্টানিক দাবি জানিয়েছেন। যদিও আগে ১০০ আসন চাওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের কাছে। শেষ পর্যন্ত ২০টি আসন ছাড় দেয়া হয়েছে।
×