ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন

নির্বাচন মানে আর কিছু নয়, নির্বাচন মানে জনতার কাছে যাওয়া। তাদের রায় নিয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া। জনগণকে তাদের শাসক নির্বাচনের অধিকার প্রদান এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করাই হলো ভোটের কাজ। নির্বাচন কোন খেলাধুলা নয়। ফাঁকা মাঠে গোল দেয়াও নয়। বল খেলার নাম রাজনীতি নয়। রাজনীতি হচ্ছে নীতির খেলা। এ খেলায় বিদ্যমান দলগুলো প্রতিপক্ষকে পরাজিত করবে জনগণ ও দেশের কল্যাণার্থে প্রদত্ত তাদের নীতির উৎকর্ষ দ্বারা। গায়ের জোর, ভোট চুরি, টাকার খেলা, গ্রেফতার, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, বিদেশীদের কাছে নালিশ বা সমর্থন চাওয়া অত্যন্ত অশোভনীয়, অপ্রয়োজনীয়, বেমানান এবং জাতির জন্য তা বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক। কিন্তু এসব এদেশবাসীকে দেখতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে। তার পরও জনগণ চায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। অর্থাৎ সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আশার কথা যে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সব দলই অংশ নিতে যাচ্ছে এবং ঘোষণাও দিয়েছে। দেশবাসীর জন্য যা স্বস্তিকর। বিএনপি জোট এবার নির্বাচনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে দলের অস্তিত্ব রক্ষা করতে যাচ্ছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি যে করুণ দশায় পতিত হয়েছে, তা থেকে উদ্ধার শুধু নয়, এবার অংশ না নিলে বাতিল হয়ে যাবে নিবন্ধন। তাই নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাড়া তাদের কাছে আর কোন বিকল্প নেই। আন্দোলন করার শক্তি-সামর্থ্য হারানো বিএনপি এখন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন করতে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ ও গর্বিত বাংলাদেশ গঠনের জন্য আগামী দিনের করণীয় নিশ্চয় তারা জনগণের সামনে তুলে ধরবে। কিন্তু তাদের সহযোগী আত্মীয়সম যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ বিএনপি যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে এবং তাদের রক্ষায় অতীতে হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও চালিয়েছিল। এমনকি জামায়াতকে বর্জনের জন্য বিভিন্ন দল ও পেশাজীবীদের দাবি সত্ত্বেও তা করেনি। সেই জামায়াত দেশের আইনকানুনে বিশ্বাসী নয় বলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে পারেনি। বিএনপি সেই জামায়াত নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে নিজস্ব দলীয় ব্যানারে যেমন, তেমনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। স্বতন্ত্র বা জোটের নেতা হয়ে যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গীবাদের প্রবর্তক দলের লোকজন প্রার্থী হওয়া মানেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ দেশের বিরোধীদের রাজনীতিতে অবস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি বহু পুরনো হলেও তা করা হচ্ছে না। দলটির কোন নেতা বা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোন ব্যক্তি যেন কোনভাবেই নির্বাচন করতে না পারে, তা ইসিকে নিশ্চিত করতে হবে। আর ঐক্যফ্রন্ট নেতাদেরও অঙ্গীকার করা উচিত, তারা বাংলাদেশের বিরোধী কোন রাজনৈতিক দলের নেতাকে মনোনয়ন দেবে না। বিভিন্ন দলের দাবিতে ইসি নির্বাচনের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর থেকে সাত দিন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করেছে। এই তারিখ হতে যেন আর না পেছানো হয়, জনগণ তাই চায়। অতীতে নির্বাচন নিয়ে দেশে অনেক তোলপাড় হয়েছে। ১৯৯৬ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করে বিএনপি-জামায়াত জোট যে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছিল, জনগণ তাতে বিক্ষুব্ধ হয়েছিল। আর সে কারণে ওই সরকার দেড় মাসের বেশি টেকেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে বিএনপি-জামায়াত দেশজুড়ে মানুষ হত্যার যে উৎসব করেছে দেশবাসী তা আর দেখতে চায় না। একাদশ সংসদ নির্বাচন অর্থবহ হয়ে উঠুক দেশবাসী তাই চায়। ভোট মানে উৎসব। সেই উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা ইসিকে নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ জাতিসংঘ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বার বার বলে এসেছে। সরকারী দলও তাই চেয়েছে। আর সে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও করেছে। ইসির তৎপরতায় এবার সব দল নির্বাচনে অংশ নিয়ে একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরিতে এগিয়ে এসেছে, যা অভিনন্দনযোগ্য। আমাদের নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট স্বাধীন। তাই তাকে এমন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যাতে এবারের নির্বাচন একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
×