ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তবে নরেন্দ্র মোদির কাছেই শিখুন!

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

তবে নরেন্দ্র মোদির কাছেই শিখুন!

বাংলাদেশে এখন চলছে জোটের রাজনীতি। নির্বাচন সামনে রেখে জোটের জটে মাথার ভেতর-বাইরে জট পাকিয়ে যাওয়ার দশা হচ্ছে। এই জোটের জটে আলোচিত জোটটির নাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। মূলত নানা নামে এদিক-সেদিক রাজনীতির দোকান দিয়ে বসা কিছু সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এই জোটটির উদ্যোক্তা। তাদের সঙ্গে আছেন দেশের একটি অন্যতম রাজনৈতিক দলের সাবেক চীনপন্থী ধারাটি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে আর বাদবাকিরা ‘দেখি-ই না, কি হলে কি হয়’ টাইপ অনাগ্রহ নিয়ে। এই জোটটি এরই মধ্যে একাধিক জনসভা করেছে। পালন করছে বিভিন্ন জাতীয় দিবসও। ক’দিন আগেই জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করল জেলহত্যা দিবস। জাতির জীবনে অন্যতম একটি কালো দিন এটি। জোটটির জেলহত্যা দিবসের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিল জোটের বৃহত্তম শরিক দলটির প্রতিনিধিত্ব। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে যথেষ্টই। যা লক্ষণীয় তা হলো জোটের ওই বৃহৎ শরিকটির জন্ম ’৭৫’র ৩ নবেম্বরের পর। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। এর প্রতিফলন রয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের আদালত প্রদত্ত রায়েও। কিন্তু দল হিসেবে দলটির জন্ম তার ঢের পরে। অতএব, জেলহত্যা দিবস এড়িয়ে যাওয়ায় তাদের কি প্রাপ্তি তা আমার অন্তত বোধগম্য নয়। এ যেন অনেকটা ‘ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাইনি’ টাইপ অবস্থান। ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে মুজিব কোট পরা সাবেক আওয়ামী লীগ নেতার জয়বাংলা স্লোগান কিংবা জোটটির মূল নেতা আরেক সাবেক আওয়ামী লীগ মন্ত্রী, প্রবীণ আইনজ্ঞের পাঁচ মিনিটের বক্তৃতায় দশবারের বেশি বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে ফ্রন্টের নেতৃত্ব আরও একবার বিভ্রান্তির রাজনীতির বিষবাষ্প ছড়ানোর যে খেলায় নেমেছেন, সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গেও আরও বেশি সঙ্গতিপূর্ণ হতো জেলহত্যা দিবসের ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে তাদের প্রধান শরিক দলের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি। সমস্যা হচ্ছে নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের যে রাজনীতি সেখানে চটক আছে, চমক দেখানোর শঠতা আছে, নেই শুধু রাজনৈতিক সততা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের গত দশ বছরের যে বিপুল অর্জন, তা এমনিতেই রাজনীতির খেলার মাঠকে অসমান করে দিয়েছে। মানুষ তো পড়তে জানে, বুঝতে পারে, জানে হিসাব করতে। আওয়ামী লীগ আর বিএনপি সরকারের অর্জনগুলো পাল্লায় তুললেই বলার আর কিছু থাকে না, লাগেও না। আমার ধারণা জোটের নেতারাও এটা ভালই জানেন, বোঝেন। তাদের লক্ষ্যও সম্ভবত ২০১৯-এ রাজনৈতিক পুনর্বাসন আর পাঁচ বছর পর ক্ষমতারোহণ। আর তাই যদি হয়, তাদের লক্ষ্য তা হলে তো রাজনীতিতে সততার প্রয়োজন সর্বাগ্রে। আবুলকে আবুল আর হাবুলকে হাবুল বলতে শিখতে হবে। আবুলকে হাবুল আর হাবুলকে আবুল বলে মানুষকে ‘আবুল’ বানানোর রাজনীতি এখন বিগতপ্রায়। খুবই জরুরী ইতিহাসের সত্যগুলো মেনে নিয়ে ইতিহাসকে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় চলতে দেয়া। তাতে যদি নিজের লাভ নাও হয়, আখেরে ক্ষতি নেই। লাভ কোন না কোনভাবে কোন না কোন একদিন হবেই। একটু আশপাশে তাকিয়ে দেখুন। স্বাধীন ভারতবর্ষের ইতিহাস সঠিকভাবে লিখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু সিঙ্গাপুরে গঠন করেছিলেন আজাদ হিন্দ সরকার। সাতটি দেশ নেতাজীর সেই সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতিও দিয়েছিল। নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফৌজ স্বাধীন করেছিল ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। এসে পৌঁছেছিল মণিপুর অবধি। পরবর্তীতে হিরোশিমা-নাগাসাকিতে মার্কিন আণবিক বোমা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাপান আত্মসমর্পণ করলে থেমে যায় নেতাজীর জয়যাত্রাও। কিন্তু যেকোন বিবেচনাতেই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু। ঠিক যেমন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ। আমাদের ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি নেই, ছিল ভারতীয়দের। সেই বিভ্রান্তি দূর করার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজাদ হিন্দ ফৌজের আন্দামান জয়ের ৭৫তম বার্ষিকীতে আজাদ হিন্দ সরকারের পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উড়িয়ে। এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বিজেপির অর্জন কি? নেতাজী তো বিজেপি করতেন না। তার আদর্শের সঙ্গে বিজেপির আদর্শের যোজন যোজন ফারাক। বিজেপির জন্মও তো এর অনেক পরে। এর মাধ্যমে কি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের অবদানকে খাটো করা যাবে? মোটেও না। ভারতের স্বাধীনতা আর ভারতীয় কংগ্রেস তো একে অপরের পরিপূরক মাত্র। তাহলে প্রশ্ন জাগে, কেন নরেন্দ্র মোদির এই উদ্যোগ। উত্তরটা সহজ- রাজনৈতিক সততার জায়গা থেকেই তিনি এই কাজটি করেছেন। আর কাজটিই তার জন্য রাজনীতিতে আলাদা একটা জায়গা করে দেবে। এই রাজনৈতিক সততা ছিল বলেই তিনি আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তার সামনে সমর্পিত এমনকি উত্তরপ্রদেশ আর ত্রিপুরাও। রাজনীতির আলোচনায়, আসরে, মিডিয়ায়, টকশোতে প্রায়ই দেখি আমাদের রাজনীতির নীতিনির্ধারকদের বিদেশ প্রীতি। দেখেছি ২০১৪’র নির্বাচনের আগে। দেখেছি ক’দিন আগেও। দেখেছি অর্থহীন কারণে জাতিসংঘ সদর দফতরে বিরোধী দলের বড় নেতার উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি। এই সেদিনও তো দেখলাম ফ্রন্ট গঠন করে নেতারা ছুটলেন বিদেশী কূটনীতিকদের দ্বারে। এতে কি অর্জিত হয় জানি না। তবে তারা রাজনীতির বোদ্ধা, আমি না। যদি এতে সত্যিই কিছু হয় তবে তাদের উচিত নরেন্দ্র মোদির দুয়ারে ধর্ণা না দিয়েই বরং তার রাজনীতি থেকে শেখার চেষ্টা করা। তারা তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিখবেন না। সাধে কি কথায় বলে ‘গেঁয়ো যুগি ভিখ পায় না’। ২০১৮ তে না হোক তার পরের দফায় যদি কিছু পেতে হয় তবে না হয় নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকেই শিখুন। তাতে দেশ বাঁচবে, দেশের মানুষ বাঁচবে আর বাঁচবে আপনাদের মুখও! লেখক : চিকিৎসক ও গবেষক
×