ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ

ডায়াবেটিস ॥ সারাজনমের রোগ

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

ডায়াবেটিস ॥ সারাজনমের রোগ

মানুষের কিছু অসংক্রামক দীর্ঘস্থায়ী রোগ দেখা দেয়, তার মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। সোজা কথায়, ডায়াবেটিসে একবার আক্রান্ত হলে সারাজীবন এই রোগ পালতে হবে। তাই সবচেয়ে সহজ উপায় হলো এই রোগ যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা করা। আর কেউ যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েই থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই জানতে হবে এর নিয়ন্ত্রণ কিভাবে করতে হবে, না করলে কি কি জটিলতা হবে ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে একবার জটিলতা হয়ে গেলে তা থেকে মুক্তি পাওয়াও অত্যন্ত দুরূহ। ডায়াবেটিস নামক ঘাতক রোগটি দিন দিন বেড়েই চলেছে। সারা পৃথিবীতে ২৮৫ মিলিয়ন মানুষ নীরব ঘাতক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং এর শতকরা ৭০ ভাগই দরিদ্র ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। ‘ডায়াবেটিস সচেতনতা বৃদ্ধি হোক প্রতিটি পরিবারে’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখেই প্রতি বছরের মতো এবারও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। পৃথিবীর অনেক দেশেই ১৪ নবেম্বর ইনসুলিনের আবিষ্কারক ফ্রেডারিক ব্যান্টিং স্যাঙ্গারের জন্মদিনে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত হয়। আগে মানুষের গড় আয়ু ছিল অনেক কম। কলেরা, ডায়রিয়া, বসন্ত ইত্যাদি সংক্রামক রোগের আক্রমণে মানুষ মারা যেত বেশি, উজাড় হতো গ্রামের পর গ্রাম। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি, উন্নততর চিকিৎসা, নিরাপদ পানি ও খাদ্যের সরবরাহ, বিভিন্ন রোগের টিকাদান কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে সংক্রামক ব্যাধি থেকে আমাদের মুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে অনেক। তাই বয়সজনিত জটিলতা, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সার এখন হয়ে উঠেছে বড় ঘাতক। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে খুব দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। মানুষের ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে, কায়িক শ্রম ও ব্যায়াম কমে যাচ্ছে, মানসিক চাপ বাড়ছে, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে ইত্যাদি কারণে আনুপাতিক হারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। অধিক ক্যালরিসমৃদ্ধ ও অধিক চর্বি-শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস শিশু-কিশোরদের স্থূলতা বাড়াচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খেলার মাঠের অভাব, বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা বা খেলাধুলার সংস্কৃতির বিলোপ, টেলিভিশন আর কম্পিউটার গেম ও ফেসবুক, শহুরে অলস জীবন, গাড়ি-লিফট-চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহারের প্রবণতা। অনেক বাচ্চার বেলায় ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনার অত্যধিক প্রতিযোগিতা, মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ, খেলাধুলার প্রতি অনীহা বা পড়াশোনার ব্যস্ততায় সময়ের অভাব মানুষকে আরও বেশি অলস জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তুলছে আর বাড়াচ্ছে রোগব্যাধি। তার মধ্যে অন্যতম হলো ডায়াবেটিস। গ্রামের শিশুদের ছেলেবেলা অপুষ্টি এবং বড় হয়ে শহরে অভিবাসনের পর অধিক পুষ্টির মন্দ চক্রও এখানে ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী। সর্বোপরি চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে বেশি সংখ্যায় এই রোগ শনাক্ত হচ্ছে, যা কয়েক দশক আগেও এত সহজ ছিল না। ডায়াবেটিসের কিছু টিপস: আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা অথবা ডায়াবেটিস হয়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা তা বোঝার জন্য কিছু টিপস জেনে রাখুন। যে কোন সময় কিছু সন্দেহ হলেই দ্রুত রক্তের সুগারটি মেপে নিন। ১. ডায়াবেটিসের মূল লক্ষণ যেমন অতিরিক্ত পিপাসা, ঘনঘন প্রস্রাব, রাতে উঠে প্রস্রাব করতে হয়, প্রচুর খিদে পায় ইত্যাদি। ২. আপনি সব সময় সুস্থ ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ মনে হচ্ছে ওজন কমে যাচ্ছে, অথচ খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতোই চলছে এবং রুচি বা ক্ষুধাও বেশ বেশি, অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত। ৩. যদি এমন হয় দ্রুত ওজন হারাচ্ছে শরীর, অথচ তার কোন চেষ্টা করা হয়নি যেমন হাঁটাচলা, ব্যায়াম কিছুই হচ্ছে না বা খাদ্য নিয়ন্ত্রণের কোন চেষ্টা চলছে না, অযথা অকারণে ওজন কমছে, তাহলে ধরে নিতে পারেন রক্তের সুগার বেড়েও যেতে পারে। ৪. আপনি ভাল ছিলেন অথচ বেশ কিছুদিন যাবত বাড়তি ক্লান্তি বা অবসাদ বোধ করেন। ৫. বারবার ছোটখাটো অসুখ হচ্ছে, যেমন ঘনঘন শরীরে ফোঁড়া হচ্ছে, বারবার প্রস্রাবে ইনফেকশন হচ্ছে, জিহ্বায় সাদা সাদা ক্যানডিডার আক্রমণ, মহিলাদের যৌনাঙ্গে ঘনঘন ছত্রাক জাতীয় রোগের আক্রমণ ইত্যাদি। ৬. কোথাও সামান্য কাটাছেঁড়া বা ঘা হওয়ার পর তা দ্রুত শুকাচ্ছে না। ৭. কারণে-অকারণে হাত-পা অবশ হয়ে আসে বা ভারি ভারি লাগে। এগুলোকে মেডিক্যাল টার্মে নিউরোপ্যাথি বলে, যার অন্যতম কারণ ডায়াবেটিস। ৮. পায়ে ঘা হওয়া বা পায়ের আঙ্গুলের মাঝে ছত্রাকের আক্রমণ। ৯. যারা গ্রামেগঞ্জে খোলা জায়গায় প্রস্রাব করেন, সেখানে দেখা যায় পিঁপড়া আসছে। ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার জন্য প্রতিরোধ করাটাই জরুরী। ডায়াবেটিসের কারণে সমাজ হারাতে পারে কর্মক্ষম ও সম্ভাবনাময় এক তরুণ যুবা প্রজন্মকে, যার সামাজিক ও অর্থনৈতিক মন্দ প্রভাব গোটা জাতিকে স্থবির করে দেবে। আরও যোগ হবে অন্ধত্ব, স্নায়ুর রোগ, কিডনি ও হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া, পা কাটা যাওয়া ইত্যাদি। এতে হাজার হাজার রোগী নিজেদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে, পরিবারের ও সমাজের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। তাই এই ব্যাধিকে প্রতিহত করতে হবে এবং প্রতিরোধ করার উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। ডায়াবেটিসজনিত অকাল মৃত্যু ও পঙ্গুত্বকে প্রতিরোধ করতে হলে গোড়ায় ঠেকানো ছাড়া বিকল্প নেই। শুধু জীবনযাত্রার একটু পরিবর্তন, একটু সচেতনতা ও সদিচ্ছা শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করতে পারে। কিভাবে প্রতিরোধ করতে হবে রোগটি যেহেতু চিরজনমের, তাই এই রোগে যাতে আক্রান্ত না হতে হয় সে লক্ষ্যে রোগ হওয়ার আগেই একে প্রতিরোধ করাটাই জরুরী। অর্থাৎ রোগটি আদতে না হতে দেয়া। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র হচ্ছে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন। এর মাধ্যমে রোগকে দূরে রাখা সম্ভব। নিচের কিছু টিপস মেনে চললে এ দানব থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব - ১. খাদ্যাভ্যাস : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো এবং পরিমাণমতো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ছোটবেলা থেকেই বেশি বেশি সবুজ শাকসবজির সঙ্গে প্রয়োজন অনুযায়ী মাছ খেতে হবে। কম চর্বি ও শর্করাযুক্ত খাদ্য গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চকোলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি পরিহার বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন মিষ্টি, সরবত, গ্লুকোজ, পায়েস ইত্যাদি কম খেতে হবে। ধূমপানের বিরুদ্ধে যেমন গণসচেতনতা গড়ে উঠেছে, তেমনিভাবে মন্দ খাদ্যাভ্যাসের বিরুদ্ধেও সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। ২. কায়িক শ্রম ও ব্যায়াম : ডায়াবেটিসের রোগীর ব্যায়ামের বিকল্প নেই। অবশ্যই রোগীদের নিয়মিত কায়িক শ্রম এবং যত অল্পই হোক সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত হাঁটাচলা, হাটে-বাজারে কোথাও গেলে অল্প দূরত্বে রিক্সা বা গাড়ি ব্যবহার না করা, অল্প কয়েক তলার জন্য লিফট ব্যবহার না করা ইত্যাদি। আরও সম্ভব হলে সাঁতার বা জগিং করা, ব্যায়ামাগারে গিয়ে সুশৃঙ্খল ব্যায়াম করা। মোট কথা, নিজেকেই ঠিক করে নিতে হবে তিনি কি ধরনের ব্যায়াম করবেন, কি করতে পারবেন। শিশু, কিশোর ও বয়স্ক সবার মধ্যেই কায়িক শ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খেলার মাঠ ছাড়া কোন স্কুল-কলেজ থাকতে পারবে না। পাড়ায় পাড়ায় থাকবে পার্ক বা খোলা জায়গা, হাঁটার উপযোগী ফুটপাত এবং সর্বোপরি নিরাপদে হাঁটার পরিবেশ। জেনে রাখা ভাল, ব্যায়াম মাংসপেশির জড়তা দূর করে, রক্ত চলাচলে সাহায্য করে, ইনসুলিনের কার্যকারিতা এবং নিঃসরণ বাড়ায়। ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তে ভাল কোলেস্টেরল কম থাকে, যা করোনারি হার্ট ডিজিজের একটি বড় ঝুঁকি বলে স্বীকৃত। ব্যায়ামের মাধ্যমে একে বাড়ানো যায়। ৩. শিক্ষা ও সচেতনতা : একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে তা হবে আজীবনের রোগ, সারাজনম একে নিয়েই বাঁচতে হবে। তাই রোগটি যাতে না হয় তার জন্যই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্যই প্রয়োজন রোগটি সম্পর্কে জানার যথাযথ শিক্ষা। সচেতন রোগীকে নিজেই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। পরবর্তী সময়ে জীবনপ্রণালি সহজভাবে গ্রহণ এবং যে কোন জরুরী অবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান রাখতে হবে। রোগের লক্ষণ ও ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত, কখন কেন রক্তের চিনি পরীক্ষা করা জরুরী, শনাক্তকরণ পরীক্ষার সহজলভ্যতা ও ব্যয় সংকোচন বিষয়গুলো সবার জানা উচিত। এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে পাঠ্যপুস্তকে সঠিক জীবনাচরণ সম্পর্কে তথ্য অন্তর্ভুক্তি, মিডিয়ার ব্যবহার, শিক্ষক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক নেতাদের প্রশিক্ষণ, সমাজ কর্মীদের সচেতন করে তোলা, সচেতনতা ক্যাম্প ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ৪. শৃঙ্খলা : ডায়াবেটিস রোগীর জীবনকাঠি হলো শৃঙ্খলা। এর মানে সবকিছু নিয়মমাফিক মেনে চলা। যেমনÑ খাওয়া-দাওয়া, ঠিকমতো হাঁটা-চলা বা ব্যায়াম, ওষুধপথ্য নিয়মমাফিক ব্যবহার করা ইত্যাদি। যারা শৃঙ্খলা মেনে চলেন তারা যেমন ডায়াবেটিস হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন, তেমনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে একে নিয়ন্ত্রণে রাখাও তার পক্ষে সহজ ব্যাপার হবে। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপন যেমন সম্ভব, তেমনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগীর জন্য প্রতিনিয়ত বয়ে আনা সমস্যা থেকেও বাঁচা সম্ভব। ৫. মনে রাখতে হবে, প্রাথমিক অবস্থায় রোগের জটিলতা সম্পর্কে ভালভাবে জেনে এবং এগুলো শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাড়তি সমস্যা থেকে বাঁচা সম্ভব। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কি না-তা দেখার জন্য মাঝে মধ্যে রক্তের সুগার টেস্ট করাতে হয়। গ্লুকোমিটার দিয়ে বাড়িতে বসে সহজেই তা করা যায়। এসব ছোট মেশিন অল্প দামে আমাদের দেশেও পাওয়া যায়। অভুক্ত অবস্থায় রক্তের সুগারের পরিমাণ ৬ মিলিমোল এবং খাওয়ার পরে ৮ মিলিমোলের কাছাকাছি হলে সুগার নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করতে হবে। রক্তের ‘এইচ.বি.এ১.সি’ মেপেও নিয়ন্ত্রণের ধারণা করা যায়। ‘এইচ.বি.এ১.সি’ ৭%-এর নিচে হলে তিন মাস ধরে সুগার ভাল নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। ৬. চল্লিশ পরবর্তী সব মানুষের মাঝে মাঝে রক্তের সুগার পরীক্ষা করা জরুরী। স্থূলতা, পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদি ঝুঁকি থেকে থাকলে তাদের এ ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া জরুরী। গর্ভবতী হলে অবশ্যই রক্তের সুগার পরীক্ষা করাতে হবে। চিকিৎসা পদ্ধতি : ডায়াবেটিসে একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে রোগী যেমন চিকিৎসা সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখবেন, সঙ্গে মাঝে মাঝে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসাও গ্রহণ করবেন। রোগীকে মনে রাখতে হবে, বারডেমের প্রতিষ্ঠাতা এবং এ দেশে ডায়াবেটিস চিকিৎসার পথিকৃৎ প্রফেসর মোহাম্মদ ইব্রাহিমের মূল তিনটি বিখ্যাত উপদেশই আপনার চিকিৎসার মূলমন্ত্র। তা হলো ইংরেজীতে তিনটি ‘ডি’। ১. প্রথম ‘ডি’ - ডায়েট বা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ৬০ থেকে ৮০ ভাগ রোগী এতেই ভাল থাকেন। ২. দ্বিতীয় ‘ডি’ ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলা সুশৃঙ্খল জীবনযাপনই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি। ৩. তৃতীয় ‘ডি’ ড্রাগ বা ওষুধ, খুব অল্পসংখ্যক রোগীরই এর প্রয়োজন পড়বে। আবারও মনে রাখতে হবে, প্রথম ও দ্বিতীয় ‘ডি’ অর্থাৎ শৃঙ্খলা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই ডায়াবেটিসকে ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব, ওষুধের ভূমিকা এখানে কম। আবার প্রথম দুটিকে বাদ দিয়ে শুধু ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করতে গেলে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই দুরূহ হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসা একটি সমন্বিত সামাজিক পদক্ষেপ। সরকার, চিকিৎসক, কোন প্রতিষ্ঠান বা কারও একার পক্ষে কখনও এই বিপুল কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সমাজের প্রতিস্তরে, পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে একে প্রতিরোধ করার জন্য। আসুন, একটি সুস্থ, কর্মোদ্যম ও প্রাণবন্ত জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবাই মিলে এই নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আধুনিক পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ, স্বাভাবিক, কর্মময় জীবনযাপন করা সম্ভব। তাই আসুন, ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানি, এ সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করি, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করি। লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, চেয়ারম্যান মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
×