ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘সুজন’ ও ‘হাঙ্গার’ প্রজেক্টের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

‘সুজন’ ও ‘হাঙ্গার’ প্রজেক্টের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের নামে কৌশলে সরকারবিরোধী প্রচারের অভিযোগ উঠেছে দুটি এনজিওর বিরুদ্ধে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট নামের দুুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসার পর তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের পর সারাদেশে অলিম্পিয়াডের নামে সক্রিয় হয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি। তবে ইতোমধ্যেই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) নির্বাচনী অলিম্পিয়াড বন্ধ করে দুদিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেছেন, হ্যাঁ আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের অঞ্চলগুলোর কর্মকর্তাদের তথ্য পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছি। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে এমন অনুষ্ঠান হচ্ছে এসব তথ্য পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. শরমীন ফেরদৌস চৌধুরী বলেছেন, আমরা আমাদের সকল অঞ্চলের উপ-পরিচালককে চিঠি পাঠিয়েছি। কোন প্রতিষ্ঠানে এমন অনুষ্ঠান হয়েছে কি না? হলে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আমরা পাঠাতে বলেছি। এদিকে অধিদফতরের অঞ্চলগুলোর কর্মকর্তারাও কাজ শুরু করেছেন। ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ সাখায়েত হোসেন জানিয়েছেন, আমরা মাউশির নির্দেশনা পেয়েছি। সরকারী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট নামের দুুটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনী অলিম্পিয়াড তো চলতে পারে না। তারা তো সরকারী কোন প্রতিষ্ঠান নয়। আমরা চিঠি পেয়েছি। এ কর্মসূচী বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে ভেন্যু বানিয়ে নির্বাচনী অলিম্পিয়াড করা হচ্ছে তার সকল তথ্য আমরা পাঠাচ্ছি। আমরা শিক্ষা অফিসারদের জানিয়ে দিচ্ছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের নামে সরকারবিরোধী প্রচারের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যেই জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সুজন এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্টের যৌথ উদ্যোগে সারাদেশের ৩০টি নির্বাচনী এলাকার ২৭৫টি সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত ও সরকারবিরোধী কার্যক্রমের আয়োজন করা হচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে প্রশাসন। এ দুুটি প্রতিষ্ঠানের মূল ব্যক্তি হচ্ছেন ড. বদিউল আলম মজুমদার। জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদফতরের পূর্বানুমতি ছাড়াই প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এই অলিম্পিয়াডের জন্য এনজিও দুটিকে ভেন্যু ব্যবহার করতে দেন। স্থানীয় পর্যায়ে অলিম্পিয়াড শুরু হয় ২৬ সেপ্টেম্বর। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে শিক্ষা অধিদফতর দেশের সকল জেলা, উপজেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠানের তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়। অধিদফতরের চিঠিতে বলা হয়, সুজন ও দি হাঙ্গার প্রজেক্টের যৌথভাবে আয়োজিত অলিম্পিয়াডের ভেন্যু হিসেবে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবহৃত হয়েছে তার তালিকা জানাতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেন্যু হিসেবে ব্যবহারের পূর্বে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়া হয়েছিল কি না তাও দুই দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে মানিকগঞ্জ সরকারী দেবেন্দ্র কলেজ, রাজশাহীর চারঘাট এম এ হাদি কলেজ, নওগাঁ সরকারী কলেজ, মুন্সীগঞ্জের কে বি ডিগ্রী কলেজে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজ, কক্সবাজার মডেল হাই স্কুল, নেত্রকোনার দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ, হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারী কলেজ, মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ, ভোলা সরকারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজ, বরিশালের বাবুগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাটি সরকারী কলেজ, মেহেরপুর গাংনী মহিলা ডিগ্রী কলেজ, যশোরের নওয়াপাড়া সরকারী মহাবিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রী কলেজ, কুড়িগ্রাম উলিপুরের শতদল কিন্ডারগার্টেন ইত্যাদি। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েকটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠানে কোন কর্মসূচী হতে দেয়া হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অধিদফতর থেকে তালিকা পাওয়ার পর সরকারী প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হবে।
×