ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুরে জিম্বাবুইয়ে অলআউট ৩০৪ রানে

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

মিরপুরে জিম্বাবুইয়ে অলআউট ৩০৪ রানে

মিথুন আশরাফ ॥ সেঞ্চুরিয়ান ব্রেন্ডন টেইলর ও হাফসেঞ্চুরিয়ান পিটার মুর কী দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন। ষষ্ঠ উইকেটে দুইজনের ১৩৯ রানের জুটিতে প্রথম ইনিংসে ভালই জবাব দিলো জিম্বাবুইয়ে। তবে তাইজুল ইসলামের স্পিন ফাঁদে পড়ে শেষপর্যন্ত ফলোঅন এড়াতে পারল না মাসাকাদজার দল। প্রথম ইনিংসে যে ৫২২ রান করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। আর তাই এখন বাংলাদেশের সামনে ইনিংস ব্যবধানে জেতার হাতছানি দিচ্ছে। বাংলাদেশ এখনও ২১৮ রানে এগিয়ে রয়েছে। ফলোঅনে পড়ায় জিম্বাবুইয়েকে আজ চতুর্থদিনে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে পাঠালে, আর ২১৮ রানও যদি করতে না পারে, তাহলেই ইনিংস হার হয়ে যাবে। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইনিংসে কোন দলকে হারানোর সুযোগ আছে বাংলাদেশের সামনে। প্রথম ইনিংসে ৪৯৭ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয়দিনের খেলা শুরু করে জিম্বাবুইয়ে। প্রথম সেশনে খুব বেশি রান স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারেনি। দ্বিতীয়দিন ১ উইকেট হারিয়ে ২৫ রান করে জিম্বাবুইয়ে। তৃতীয়দিন প্রথম সেশনে এরসঙ্গে আরও ৭৫ রান যোগ করে। হারায় আরও দুটি উইকেট। উইকেটে স্পিন ধরতে শুরু করে। বল ঘুরতে শুরু করে। জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরাও চাপে পড়ে থাকেন। এরমধ্যেও দ্বিতীয়দিন ১০ রানে অপরাজিত থাকা ওপেনার ব্রায়ান চারি উইকেট আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করে শেষপর্যন্ত ৫৩ রান করেন। রিভিউ নিয়ে চারিকে আউট করেন মিরাজ। ৪০ রানের সময় তিরিপানোকে সাজঘরে ফিরিয়ে দেন তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয়দিন মাসাকাদজাকে আউট করার পর তিরিপানোকেও আউট করেন। এরপর চারি ও ব্রেন্ডন টেইলর মিলে বড় জুটি গড়ার দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। দুইজন মিলে ৫৬ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। জিম্বাবুইয়ের স্কোরবোর্ডে যখন ৯৬ রান যোগ হয় তখন চারিকে ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চারিকে হারিয়ে জিম্বাবুইয়ে পুরোই বিপদে পড়ে যায়। বোঝা হয়ে যায়, স্পিনাররা ঝেঁকে বসেছেন। তাতে জিম্বাবুইয়েকে দ্রুত অলআউট করার সম্ভাবনাও জেগে যায়। জিম্বাবুইয়েকে ফলোঅনেও ফেলা যাবে, সেই আশাও তৈরি হয়ে যায়। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই তাইজুলের দুই অসাধারণ ডেলিভারিতে শন উইলিয়ামস ও সিকান্দার রাজা বোল্ড হতেই জিম্বাবুইয়ের বারোটা বেজে যায়। ১৩১ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। কিন্তু টেইলর ও পিটার মুর মিলে দলকে আস্থা দিতে থাকেন। দ্বিতীয় সেশনে আর কোন উইকেটই হারায়নি জিম্বাবুইয়ে। টেইলর এরমধ্যে হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। মুরও একই পথে এগিয়ে যেতে থাকেন। দুইজন মিলে দ্বিতীয় সেশন শেষে যখন ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা শুরু করেন, তখন দলের স্কোরবোর্ডে ১৯৫ রান জমা হয়ে যায়। দুইজন মিলে ৬৪ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। প্রথম সেশনে ৭৫ রান করে জিম্বাবুইয়ে। দ্বিতীয় সেশনে ৯৫ রান করে। জিম্বাবুইয়ে স্কোরবোর্ডে রান জমা করার চেয়ে উইকেট ধরে রাখার দিকেই বেশি মনোযোগ দেয়। উইকেট না হারিয়ে সময় যত বেশি নেয়া যাবে, ততই যে জিম্বাবুইয়ের জন্য ভাল। তৃতীয় সেশনের শুরুতেই স্কোরবোর্ডে ২০০ রান জমা হয়ে যায়। চাপমুক্ত হতে থাকে জিম্বাবুইয়ে। টেইলর ও মুর মিলে ১০০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। দুইজনই সেঞ্চুরির কাছাকাছি চলে যান। দলের যখন ২৫৮ রান হয়, এমন মুহূর্তে মুরের থাকে ৭৫ রান। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে কাভারে ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচেন মুর। তাইজুল ইসলাম বলটি ধরতে পারেননি। তখন দুইজনের জুটি ছিল ১২৭ রানের। দেখতে দেখতে সেই জুটি আরও বড় কিছুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। যখন ১৩৯ রানের জুটি হয়, দলের রান ২৭০ এ চলে যায়; তখন ত্রাতা হয়ে যেন আবির্ভাব হয় আরিফুল হকের। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বল হাতে তুলে দেন আরিফুলের। প্রথম ওভারেই ৮৩ রানে থাকা মুরকে এলবিডব্লিউ করে দেন আরিফুল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি মুর। তবে টেইলরকে কোনভাবেই আটকানো যাচ্ছিল না। টেইলরতো ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরিও করে ফেলেন। পাঁচ টেস্ট সেঞ্চুরির চারটিই আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে করেন টেইলর। বাংলাদেশকে পেলেই যেন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরি এখন টেইলরেরই। এতদিন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও টেইলর মিলে ৩টি সেঞ্চুরি করে সমান অবস্থানে ছিলেন। মঙ্গলবার ১৮৭ বলে আরেকটি সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করে সবার উপরে চলে যান টেইলর। তবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবার টেস্ট সেঞ্চুরি করেন টেইলর। এর আগে হারারেতে সবকটি সেঞ্চুরি ছিল তার। উপরে উঠে নিচেও নামতে হয়। সেঞ্চুরি করার পর খুব বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি টেইলর। আর ১০ রান করতেই দলের ২৯০ রানের সময় মিরাজের ঘূর্ণির ফাঁদে পড়ে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে তাইজুলের অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন টেইলর। বাংলাদেশও যেন স্বস্তি পায়। টেইলর যে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। টেইলর আউট হতেই মাভুতাকেও সাজঘরে ফেরান মিরাজ। হাতে থাকে আর এক উইকেট। পেসার চাতারা যে দ্বিতীয়দিন বোলিং করতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েন। তার পায়ের মাংসপেশিতে টান লাগে। ব্যাটিং করতে পারবেন না, তা আগেই জানা। তাই চাকাভা অথবা জার্ভিসের আউটের অপেক্ষাই থাকে। চাকাভাকে শেষপর্যন্ত আউট করে দেন তাইজুল। ৫ উইকেট শিকার করে নেন। এনামুল হক জুনিয়র ও সাকিব আল হাসানের পর টানা তিন ইনিংসে ৫ বা বেশি উইকেট শিকার করার কৃতিত্ব দেখান তাইজুল। জিম্বাবুইয়ের ইনিংস ৩০৪ রানে শেষ হয়। দিনও শেষ হয়। ইনিংস শেষ হতে পারত ৩০২ রানেই যদি মিরাজের বলে মুমিনুল ৯ রানে অপরাজিত থাকা জার্ভিসের ক্যাচটি ধরতে পারতেন। তা হয়নি। তবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৫২২ রান করায় ৩২৩ রান করলে যে জিম্বাবুইয়ে ফলোঅন এড়াতে পারত, তা পারেনি। ফলোঅনেই পড়েছে জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশ এখনও ২১৮ রানে এগিয়ে রয়েছে। এখন জিম্বাবুইয়েকে আবারও ব্যাট করাতে পারবে বাংলাদেশ। যদি জিম্বাবুইয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে, তাহলে ইনিংস ব্যবধানে জেতার সম্ভাবনাও থাকছে বাংলাদেশের।
×