ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলছে ফেক নিউজ?

প্রকাশিত: ১৭:৫৭, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

ভারতের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলছে ফেক নিউজ?

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারতে 'ফেক নিউজ' বা ভুয়ো খবর নিয়ে বিবিসির গবেষণায় ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে জাতীয়তাবাদী চেতনা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে কীভাবে সে দেশের সোশ্যাল মিডিয়াতে ফেক নিউজের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাশাপাশি সে দেশের বিরোধী দলগুলি বলছে, ক্ষমতাসীন বিজেপিই অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও সুসংগঠিত ভঙ্গীতে এই ফেক নিউজকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে চলছে - এবং সেটা হচ্ছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মদতেই। কিন্তু সত্যিই কি ফেক নিউজ ভারতে রাজনৈতিক প্রচারণা বা নির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলছে? ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি বরাবরই গর্ব করে বলে থাকে, দেশের ডিজিটাল বিপ্লবে কোনও রাজনৈতিক দল যদি সঠিক সময়ে সামিল হয়ে থাকতে পারে, সেটা একমাত্র তারাই। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির অভূতপূর্ব জয়ের পেছনে দলের তথ্যপ্রযুক্তি বা সোশ্যাল মিডিয়া সেলের অবদানও কেউ অস্বীকার করেন না। কিন্তু এখন বিরোধীরা বিজেপির সেই ভূমিকায় প্রমাদ গুনছেন। দিন-কয়েক আগেই পার্লামেন্টে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন বিজেপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, "এরা দেশে ডিজিটাল মব তৈরি করছে - যাদের একমাত্র কাজ সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে মগজ-ধোলাই। আর ফেক নিউজ ছড়ানোই তাদের প্রধান শখ।" কিন্তু বিজেপির এই সব কথিত ডিজিটাল আর্মি ঠিক করে কী? কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের প্রধান দিব্যা স্পন্দনা বিবিসিকে বলছিলেন, "এদের কাজটাই হল বিরুদ্ধ মতকে ট্রোল করা, হেনস্থা করা আর ভুলভাল তথ্য ছড়ানো। এদের অনেক স্বেচ্ছাসেবীও আছেন, আবার অনেকে হয়তো টুইট প্রতি পনেরা রুপি পেয়ে থাকেন।" "ধরা যাক কংগ্রেস কোনও দুর্নীতির কথা সামনে নিয়ে আসছে - তখন এদের কাজটাই হল নেহরু-গান্ধী পরিবারকে দোষ দিয়ে ফেক নিউজ ছড়ানো, কংগ্রেসের নামে স্ক্যাম বানানো, যাতে আমাদের তোলা ইস্যুগুলো থেকে মানুষের দৃষ্টি সরে যায়।" মাত্র মাস-কয়েক আগে খোদ বিজেপির সভাপতি অমিত শাহকে দলের কর্মকর্তাদের এক সভায় ফেক নিউজ ছড়াতে উৎসাহ দিতে শোনা গিয়েছিল। তিনি উদাহরণ দিয়েছিলেন, সমাজবাদী পার্টির প্রবীণ নেতা মুলায়ম সিং যাদবকে তার ছেলে অখিলেশ যাদব চড় মেরেছেন - এই ধরনের একটা খবর কী প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি সেদিন বলছিলেন, "খবরটা ভুয়ো হলেও এতে একটা বাতাবরণ তৈরি হয়। কাজটা করারই মতো, কিন্তু না-করাই উচিত। বুঝতে পারছেন তো কী বলতে চাইছি?" পুরো সভাগৃহ তুমুল করতালিতে ফেটে পড়েছিল তার ওই মন্তব্যে। সেদিন তার গল্পের অন্যতম চরিত্র ও উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব এসেছিলেন লখনৌতে ফেক নিউজ নিয়ে বিবিসির অনুষ্ঠানে। ফেক নিউজ যারা ছড়াচ্ছে তাদের তিনি শুধু 'দেশবিরোধী' বলেই থেমে থাকেননি, তুলনা করেছেন ভাইরাসের সঙ্গেও। ফলে ভারতের প্রায় গোটা রাজনৈতিক স্পেকট্রাম যে ফেক নিউজ নিয়ে চিন্তিত তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নের যুক্তি দিয়ে অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনও রাশ টানতে রাজি নয়। পার্লামেন্টেই আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছেন, "ফেক নিউজ একটা চ্যালেঞ্জ ঠিকই - কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার নামে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা খর্ব করতে পারি না।" "এই ডিজিটাল পাওয়ার ভারতের সাধারণ মানুষের আঙুলের ডগাতেও তথ্য এনে দিচ্ছে, তাদের প্রশ্ন করার ক্ষমতা দিচ্ছে - সেটা ভুললে চলবে না।" ভারতে বিরোধী দলগুলি অবশ্য মনে করছে এযাবৎ দেশে ফেক নিউজের রাজনৈতিক লাভ একমাত্র বিজেপিই পেয়েছে, তাই তাদের সুরও ওরকম। তবে তাদের অনেকেরই ধারণা, ফেক নিউজ একদিন অনায়াসেই বিজেপির 'ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে'ও পরিণত হতে পারে।
×