ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নবান্ন ও নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

নবান্ন ও নির্বাচন

‘চারিদিকে গ্রাম-গঞ্জে পড়ে গেছে সাড়া’। একদিকে নবান্ন, অন্যদিকে নির্বাচন। দুটোই উৎসব। আপাতত নির্বাচনী তফসিল ও দলীয় মনোনয়নকে ঘিরে নির্বাচনী ঢেউ রাজধানীসহ শহর-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়লেও গ্রামগঞ্জে সাড়া পড়েছে ধানকাটা ও মাড়াই মৌসুমের। অচিরেই রাজনৈতিক দলগুলো চূড়ান্ত মনোনয়নের ঘোষণা দিলে নির্বাচনী ডামাডোল ছড়িয়ে পড়বে গ্রামগঞ্জেও। এমনকি প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলেও তা ছড়িয়ে পড়তে আদৌ সময় নেবে না। আপাতত কৃষকরা ব্যস্ত ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে। আর গৃহস্থ বধূরা মাড়াই-বাছাই ও ধান শুকাতে ব্যস্ত সকাল-সন্ধ্যা। মাঠ পর্যায়ের খবর অনুযায়ী এবার ধান ভাল হয়েছে। কেননা তেমন বৃষ্টি ও বন্যা হয়নি। পাহাড়ী ঢল কিংবা হরকা বানও আসেনি প্রতিবেশী দেশ থেকে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় আমনের ফলন হয়েছে আশাব্যঞ্জক। ধানের বাজারদামও উৎসাহব্যঞ্জক। গত কয়েক বছর ধরেই সরকার বাজার থেকে প্রতিযোগিতামূলক দরে ধান-চাল ক্রয় করায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ক্রমশ। সুতরাং ‘কৃষকের মুখে হাসি’। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় তার শারীরিক পরিশ্রমও কমে গেছে অনেকাংশে। উচ্চ পারিশ্রমিকে কৃষি শ্রমিক পাওয়ার দুঃখও ঘুচেছে। অধুনা দেশে এমন কৃষিযন্ত্রও এসেছে, যা দিয়ে চাষের ক্ষেতেই ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই এমনকি বস্তাবন্দী করে ফেলা যায়। আগের মতো জোড়া বলদ দিয়ে আর ধান মাড়াই করতে হয় না উঠানে দাঁড়িয়ে। ধান মাড়াইয়ের যন্ত্র ভাড়ায়ও পাওয়া যায় গ্রামগঞ্জসহ প্রায় সর্বত্র। সুতরাং কিষানীর মুখেও হাসি ফুটছে বৈকি। তদুপরি আপাতত আমন মৌসুমে দেশের আবহাওয়া মোটামুটি ভাল থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। নি¤œচাপজনিত ঘূর্ণিঝড় ‘গাজা’ ভারতের ওপর দিয়ে চলে যাওয়ায় ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা দূরীভূত হয়েছে আপাতত। ধান চাষের বাইরের জমিগুলো এখন নানাবিধ শাকসবজি, তরিতরকারী, রবিশস্যসহ সর্ষের হলুদ হাসিতে সমুজ্জ্বল। গ্রামগঞ্জের ঘরে ঘরে এখন শুরু হয়েছে নবান্নের উৎসব। বাজার সহনশীল থাকায় চলছে পিঠা-পুলি-পায়েসসহ বিবিধ ব্যঞ্জন সহযোগে খাওয়া-দাওয়ার ধুম। টিভি-মোবাইলসহ প্রযুক্তির কল্যাণে গ্রামীণ জীবনেও যোগ হয়েছে বিনোদনের নতুন মাত্রা। এর পাশাপাশি নিত্য হাট-বাজারসহ রকমারি মেলা, যাত্রাপালা, সার্কাস, পুতুল নাচ, ঘোড়দৌড়, ষাঁড়দৌড়, লাঠিখেলা ইত্যাদি তো আছেই। সব মিলিয়ে দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, আধুনিক হচ্ছে, জীবনমানে মানুষের সক্ষমতা বেড়েছে, এর ছাপ গ্রামগঞ্জের প্রায় সর্বত্র। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন আবহমানকালের এই আনন্দ-উচ্ছ্বাস-উৎসব নিয়ে এসেছে আরও এক মহোৎসবের বার্তা। পাঁচ বছর পর পর অনুষ্ঠেয় জাতীয় পর্যায়ের সংসদ নির্বাচন, যা নিশ্চিত করে থাকে সাধারণ মানুষের নাগরিকত্ব ও মানবাধিকার। তা একটি মহোৎসব বৈকি। অবশ্য নির্বাচন নিয়ে শেষ পর্যন্ত যে একটা আশঙ্কা ছিল না, তা নয়। ২০ দলীয় জোট বিএনপি নির্বাচনে আসবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়-সন্দেহ ছিল। তবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলে তাতে যোগ দেয় বিএনপি। বিষয়টা প্রায় তেল-জলের মতো হলেও নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার অদম্য স্পৃহায় শেষ পর্যন্ত তাও সম্ভব হয়েছে। তবে এতে শেষ পর্যন্ত সম্ভব করে তোলার অন্যতম কৃতিত্বের দাবিদার ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। জাতীয় পর্যায়ে সব দলের সঙ্গে ঐকান্তিক পরিবেশে সংলাপের আয়োজন করে তিনি প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলেন শেষ পর্যন্ত। তারই অনিবার্য পরিণতি সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন। এ থেকে প্রধানমন্ত্রী যে সত্যি সত্যি দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান, তারই প্রতিফলন ঘটেছে। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী-মানবতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামী বাদে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই ঝাঁপিয়ে পড়েছে নির্বাচনে। আর তাই নবান্ন উৎসবের পাশাপাশি নির্বাচনী মহোৎসবকে ঘিরে সর্বস্তরের মানুষের উৎসাহ-উন্মাদনা-আনন্দের মাত্রাটা একটু বেশি বৈকি।
×