ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ ডিজিটাল গুজব

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ ডিজিটাল গুজব

গুজবের আভিধানিক অর্থ হলো, মিথ্যে রটনা, ভুল বা অসঙ্গত তথ্য প্রচার। একজন প-িত বলেছিলেন, মানুষের জীবনে ত্রিগুণ থাকা আবশ্যক। এ কথার ভিত্তিতে অন্য এক পণ্ডিত বলেছেন, ত্রিগুণ নয়, ত্রি-গুল থাকা আবশ্যক। গুল, গুঞ্জন ও গুজব। কারণ, হীনম্মন্যতা ও প্রতিহিংসা থেকে গুলের উৎপত্তি। তারপর গুল থেকে গুঞ্জন এবং গুঞ্জন থেকে গুজব। যা পরবর্তীতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে যুৎসই বলেছেন, অস্কার ওয়াইল্ড। তিনি বলেন, ‘গুজব হলো অনৈতিক, বেআইনী ও বিকারগ্রস্ত রটনা।’ এ তিন ক্ষেত্র থেকে বেশির ভাগ গুল ও গুঞ্জনের সৃষ্টি। তারপর দ্রুত গতিতে হিমালয়সম হয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। প্রখ্যাত মার্কিন কথাসাহিত্যিক মার্ক টোয়েনের মতে, ‘সত্য তার জুতোর ফিতা বাঁধতে বাঁধতে মিথ্যে সমস্ত পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে আসতে পারে।’ বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে সহজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অভাবনীয় প্রসারের কারণে চোখের পলকে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। ‘শেয়ার’ বা ‘টুইট’ করতে যতটুকু সময় লাগে ঠিক ততটুকু সময়ে। সম্প্রতি নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সরকারকে বেদিশা করার মানসে নওশাবা নামক একজন অভিনেত্রী রাজধানীর জিগাতলায় গুজব সৃষ্টিকারীদের পক্ষ নিয়ে কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে অভিনয় করে বলে, ‘আমার এক ছোট ভাইয়ের চোখ তুলে নেয়া হয়েছে, আরও দু’জনকে মেরে ফেলেছে। আপনারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।’ তখন শিক্ষার্থীরা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এ গুজবকে বিশ্বাস করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসে হামলা চালায় এবং কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করে। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ‘এমআইটি’ এর তিনজন গবেষক যথাক্রমে সুরুষ ভসুগি, দেব রয় এবং সিনাল এরাল গুজব সংক্রান্ত তাঁদের এক গবেষণাপত্র ‘অনলাইনে সত্য এবং মিথ্যে সংবাদের বিস্তার’ শিরোনামে অতি সম্প্রতি বিখ্যাত বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল ‘সায়েন্স’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। টুইটারে পরিবের্শিত গুজব ও মিথ্যে তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখতে পান যে, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার গুজব ৪৫ লাখ বার ব্যবহারকারীরা টুইট করেন। এ তিন জন গবেষকের মতে, একটি গুজব প্রকৃত ঘটনার চেয়ে ৬ গুণ বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ হলো বিষয় বৈচিত্র্য এবং তথ্য বা ঘটনার অভিনবত্ব। এত কিছুর পরেও আমাদের গুজব থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় খুঁজতে হবে। কেননা, একটি গুজব অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও কাজের স্বচ্ছতাসহ আমাদের আরও অধিক সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। তাই তো কবির ভাষায় বলতে হয়- ‘নেইকো খালে, নেইকো বিলে, নেইকো মাঠে গাছে; কান যেখানে ছিল আজও সেখানটাতেই আছে।’ দোহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে
×