বর্তমান যুগ হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির যুগ। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে যোগাযোগ ও তথ্য পাওয়ার এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে। কিশোর থেকে প্রবীণ সবাইকে আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘাঁটাঘাঁটি করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৫ লাখ। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত ফেসবুকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে দুই কোটি ৪০ লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন। তথ্যের সহজলভ্যর কারণে ও ফেসবুকে বিভিন্ন নিউজ পেজের মাধ্যমেই বর্তমানে মানুষ বিশ্বের খোঁজ খবর নিয়ে থাকেন বেশি। কোন তথ্য গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে কিংবা আকর্ষণীয় হলে প্রায় মানুষই সেটা নিজের এ্যাকাউন্টে শেয়ার করে থাকেন। কেউ যখন কোন ভুয়া খবর ছড়ায় কিংবা গুজব ছড়ায় দেখা যায় সবাই সেটা শেয়ারের মাধ্যম মুহূর্তেই চারদিকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে। গুজব ছড়ানোর কারণে অনেক সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সৃষ্টি হয়, যা বেশিরভাগ সময়ই খারাপ ফলাফল বয়ে আনে। সহজ ইন্টারনেট এক্সেসের কারণে আজকাল দেখা যাচ্ছে নামে বেনামে হাজার হাজার অনলাইন পত্রিকা গড়ে উঠছে যারা বেশিরভাগই সরকারী রেজিস্ট্রেশন বহির্ভূত। এসব অনলাইন পত্রিকার কোন নীতিমালা নেই, কোন নিয়মতান্ত্রিক পরিচালনা পর্ষদ নেই, কোন নিজস্ব সাংবাদিকও নেই। বিভিন্ন নামকরা পত্রিকার খবর তারা কপি করে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। এসব নামী-বেনামী রেজিস্ট্রেশনবিহীন অনলাইন পত্রিকা-ই গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এসব পত্রিকার ভুয়া খবরের লিংক বেশি শেয়ার হতে দেখা যায়। এছাড়া ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ আছে যারা ট্রলের নামে ভুয়া খবর ও গুজব ছড়ায়, সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সত্য মিথ্যা যাচাই না করে এসব খবর শেয়ার করে যাচ্ছেন। ফলে তাদের অজান্তেই গুজব চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে, এ আইন এসব গুজব বন্ধ করতে পারবে কিনা তা দেখার বিষয়। তবে গুজব দূর করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা হলো রেজিস্ট্রেশনবিহীন নামে বেনামে গড়ে ওঠে অনলাইন পত্রিকা বন্ধ কিংবা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা যাতে তারা ভুয়া খবর প্রকাশ করতে না পারে। আর জনসাধারণকে গুজবের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার চালানো। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে গুজব বন্ধ করতে গিয়ে যেন সংবিধানে প্রদত্ত মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করা না হয় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে