ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নুর আলম ইসলাম মানিক

ভয়াবহ ও ক্ষতিকর

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

ভয়াবহ ও ক্ষতিকর

‘গুজব’ সাম্প্রতিকালে সর্বাধিক আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যা সাধারণ জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ায়। গুজবের ভয়াবহতা এখন মাদকের চেয়েও ক্ষতিকর রূপ ধারণ করেছে। সামাজিক বিজ্ঞানের ভাষায় গুজব হলো, এমন কোন বিবৃতি যার সত্যতা অল্প সময়ের মধ্যে অথবা কখনই নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুজব ভুল তথ্য এবং অসঙ্গত তথ্য এই দুই বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়। ভুল তথ্য বলতে, মিথ্যা বানোয়াট তথ্যকে বোঝায়। এবং অসঙ্গত তথ্য বলতে বোঝায় ইচ্ছাকৃতভাবে ভ্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা। মানুষের মুখে মুখে ভিত্তিহীন, ভুল, বানোয়াট তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কোন একটা খবর বা একটা ঘটনা একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে যাওয়ার পরে তার অর্থ মূল ঘটনা থেকে এমনভাবে পরিবর্তিত হয় যে, তা মূল শব্দের থেকে বিকৃত হয়ে অপ্রাসঙ্গিক একটি অর্থ প্রকাশ করে। এবং এর ফলে সমাজে তৈরি হয় নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা। যা দেশ ও জাতি উভয়ের জন্য একটা হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে মানবজাতিকে মহা সঙ্কটে ফেলে দেয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় গুজবের উৎপত্তি হয় সেই আদিকালে। এর ব্যবহার মাঝেমধ্যে মাত্রাতিরিক্ত হয়েছে। তবে এর প্রয়োগ বর্তমান সময়ের মতো এত ব্যাপক ও ভয়াবহ রূপ পূর্বে দেখা যায়নি। আর এর দূর্বার বিস্তৃতি লক্ষ্য করা গেছে ক্ষুদ্র শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনকে ঘিরে বাংলাদেশের সমাজ ছেয়ে গিয়েছিল বিভ্রান্তির কালো মেঘে, জনজীবন হয়েছিল বিপর্যস্ত। সড়ক নিরাপত্তা দাবিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শুরু হওয়া কোমলমতি শিশুদের শান্তিপূর্ণ এবং অভূতপূর্ব আন্দোলনটি চোখের পলকে একটি ঘূর্ণিঝড়ের মতো তোলপাড় করে দিয়েছিল দেশটাকে, বিভক্ত করে দিয়েছিল দেশের মানুষকে যার প্রধান কারণ ‘গুজব’ নামের প্রতিষেধকবিহীন শব্দটি। ২৯ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম নিহত হওয়ার ঘটনা কে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কিছু দুষ্কৃতকারী মিথ্যা তথ্য সংবলিত বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য অপপ্রচার করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ দেশে অরাজক ও অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্য বিভিন্ন ও বানোয়াট লেখা, পোস্ট, ছবি, অডিও ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রচার করে। আন্দোলনের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুজব ছড়ানো হয়েছিল আন্দোলনের সপ্তম দিন। একটি মেয়ে মুখে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে কেঁদে কেঁদে ভিডিওতে বলে, ‘আওয়ামী লীগ অফিসে মেয়েদের আটকে রাখা হয়েছে এবং কয়েকজনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে ‘ফেসবুক’ এসব অসংখ্য গুজবের বন্যায় প্লাবিত হয়ে যায়। অথচ প্রকৃতপক্ষে যা ছিল ৪ জনুয়ারি ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে পাওয়া এক নারীর লাশের ছবি। গুজবে কান না দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হলেও গুজবকে অহেতুক গুরুত্ব দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা হয় সমাজে যার প্রধান কারণ ‘মানুষের মুক্তচিন্তার অভাব’। মানুষ মুক্ত মনে, ঠা-া মাথায়, স্বচ্ছ বুদ্ধি দিয়ে কোন কিছুকে বিচার-বিশ্লেষণ খুব কম করে বলেই, যে কোন তথ্যকে বিশ্বাস করে ফেলে। ফলে মিথ্যা জিনিসটা সত্য হিসেবে গ্রহণ করে বহু মানুষ। গবেষকদের মতে, ‘যারা গুজব ছড়ায় তারা কোন না কোনভাবে তাদের মনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়’। আর এই মিথ্যা গুজব দেশেক সংকটে ফেলে দেয়। গুজবকে প্রতিরোধ করার দুটি প্রধান কৌশল হলো, গুজবের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও অন্যটি হলো গ্রুপভিত্তিক গুজববিরোধী নেটওয়ার্ক তৈরি করা। কিছুদিন আগে হাসানুল হক ইনু জানিয়েছেন, ‘ইন্টারনেটে অপপ্রচার’ বন্ধে ও ‘গুজব শনাক্তকরণ ও নিরসন কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গুজব ঠেকানোর বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম প্রিভেনশন’ কমিটির নেতৃত্বে পুলিশ সদর দফতরের লিগ্যাল ইন্টারসেকশন সেল, অপরাধ তদন্ত বিভাগ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, মহানগর পুলিশ যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি করবে। শ্রীনগর সরকারী কলেজ এ্যান্ড ইউনিভার্সিটি থেকে
×