ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গুজব হতে সাবধান

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

গুজব হতে সাবধান

গুজবের কোন সত্যতা থাকে না। বরং মিথ্যা ও বানোয়াটকে কেন্দ্র করেই গুজবের হাত প্রসারিত হয়। কিন্তু গুজবে বিশ^াস করার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই লক্ষণীয়। গুজবের ডালপালা জনমনে এমনভাবে বিস্তার লাভ করে যে তখন আসল সত্যকে আছড়ে ফেলে গুজবটাই সত্য হয়ে উঠে। সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে গুজবে বিশ^াসী হয়ে মিথ্যার পিছনে দৌড়ানোর স্বভাব ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সমাজ জীবনের প্রতিটি স্তরেই বিদ্যমান। ফলে সত্যের বাণী নিভৃতে থাকে আর গুজবের বাণী ক্ষণিক সময় ধরে তরবারি শাণিত করে এক প্রকার হত্যার খেলায় মেতে ওঠে। রামায়ন মহাকাব্যের অধিপতি রাম সীতাকে নিয়ে বনবাস থেকে ফিরে এলে জনমহলে সীতার সতীত্ব নিয়ে গুজব ওঠে। কারণ সীতা রাবণের কাছে অনেকদিন যাবৎ বন্দী অবস্থায় ছিল। অবশেষে সীতাকে তার সতীত্বের পরীক্ষা দিতে আগুনের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হয়। মহাধিপতি রাম গুজবের কাছে হন পরাজিত। জনমনকে তুষ্ট করার জন্য নিজের স্ত্রীর সতীত্বের পরীক্ষা নিতে হয় তাকে। এই রকম গুজবের ঘটনা প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সাহিত্যে আরও অনেক রয়েছে। আর এর ফলে এটাই প্রকাশিত হয় যে, গুজবে কান দেবার প্রবণতা আগে যেমন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছিল এখনও তদ্রƒপ বিদ্যমান। তবে যুগের প্রবাহে এর ধরন পাল্টেছে। এক সময় গুজব ছড়াতো মানুষের মুখে মুখে। আর এই আধুনিক যুগে এসে মুখে মুখে ছড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল মাধ্যম সেই স্থান দখল করে নিয়েছে। কবি শামসুর রাহমান তাঁর ‘প-শ্রম’ কবিতায় বহু আগেই ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যকার গুজবের বাস্তব চিত্র ব্যক্ত করেছেন ‘ঐ নিয়েছে ঐ নিল যা! কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।’ আমাদের গুজবে কান দেবার প্রবণতা যেন একটু বেশিই। আসল ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন না করে মিথ্যের পিছে দৌড়ে মরি। আর শেষে দেখি সবই প-শ্রম। এরই মধ্যে ক্ষতি যা হবার তা তো হয়েই গেল। ফলে অনেক সময় সত্যি সত্যিই কান হারাতে বসি। ফেসবুকে দ্রুত গতিতে গুজবের ডালপালা ছড়ায়। অনেক সময় এমন ঘটনাও ঘটে যে, যাকে নিয়ে পরিকল্পিত গুজবের রটনা সেই ব্যক্তিই গুজব সম্বন্ধে অবগত নন কিন্তু দেশের বাইরে তার সম্বন্ধে গুজব ছড়িয়ে যায়। আর একজন ব্যক্তি এই গুজবের বলি হলে তার পরিণাম কিই না ভয়াবহ! গুজবের এই ভয়াবহতা এ দেশের মানুষ বিভিন্ন ঘটনায় দেশের একাধিক স্থানে বেশ কয়েকবার প্রত্যক্ষ করেছে। বিশেষভাবে বান্দরবানের রামুতে ঘটে যাওয়া ঘটনা অন্যতম। ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব ছড়ানো যেন দিনকে দিন শুধু বৃদ্ধিই পাচ্ছে। একবার যদি কোন বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে যায় তাহলে তা আর রোধ করা যায় না। ফলে যে ক্ষতি হবার তা হয়েই যায়। ডিজিটাল মাধ্যমে গুজবের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছেন। এই আইন প্রণয়ন ডিজিটাল গুজবকে কতটুকু রোধ করতে পারবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটা বলা যায় যে, সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি ও সামাজিক সচেতনতাই ডিজিটাল গুজবকে রোধ করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। তাই ডিজিটাল গুজব হতে সাবধান। কাকরাইল, ঢাকা থেকে
×