ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রীড়াবিদ-সংগঠকদের বিদেশ সফরের তদারকি নেই মন্ত্রণালয়ের

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

ক্রীড়াবিদ-সংগঠকদের বিদেশ সফরের তদারকি নেই মন্ত্রণালয়ের

অনলাইন রিপোর্টার ॥ খেলার নামে আদম পাচারের অভিযোগ পুরোনো। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বিদেশ গিয়ে পালিয়ে অতীতে বাংলাদেশি অনেক ক্রীড়াবিদ খবরের শিরোনাম হয়েছেন। কোনো পলায়ন কিংবা আদম পাচারের ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশ হলে ক্রীড়া প্রশাসন একটু নড়েচড়ে বসে। তারপর আবার বিদেশে ক্রীড়াবিদ যাওয়া-আসার নিয়মে ঢিলেঢালা। বিদেশে গিয়ে কারা ফিরছেন, কারা ফিরছেন না সে তদারকি নেই। ক্রীড়া প্রশাসনের কঠোর তদারকি না থাকায় পোয়াবারো সুযোগ সন্ধানীদের। বিভিন্ন সময় আদম পাচার ও পলায়নের ঘটনার পর বিদেশে দল প্রেরণে কঠোর হয়েছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে যে সব খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা সরকারী আদেশ (জিও) আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এবং সভা-সেমিনারে অংশ নিতে যান তাদের মুচলেকাসহ নানা শর্ত পালন করতে হয়। তবে জিও প্রদানের সময় ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যতটা কঠোরতা দেখায় ফিরে আসার ক্ষেত্রে তার ছিঁটেফোটাও থাকে না। তাই জিও নিয়ে কারা বিদেশে গেলেন মন্ত্রণালয় ও ক্রীড়া পরিষদে সে তথ্য থাকলেও কারা ফিরেছেন, আর কারা ফেরেননি তার কোনো তথ্য থাকে না। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কোনো ক্রীড়াদল বা ক্রীড়াবিদকে জিও দেয়ার সময় কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। সফরের ব্যয়ের উৎস, বিদেশে অবস্থানের সময়কাল এবং ফিরে আসার ১৫ দিনের মধ্যে সফরের প্রতিবেদন জমার সরকারী নির্দেশনা থাকলেও সেগুলো মানে না বেশিরভাগ ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া ফেডারেশন। যে কারণে, ক্রীড়াবিদ বা ক্রীড়া দলের বিদেশ গিয়ে কী ফলাফল করছে কিংবা সেখানে প্রাপ্তি কি? ক্রীড়া প্রশাসন তার কিছুই জানে না। এমনকি সফরের সবাই ফিরেছেন কি না সে তদারকিও নেই মন্ত্রণালয় বা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। ২০১৮ সালে এ পর্যন্ত শতাধিক জিও ইস্যু করেছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। যেগুলোর মধ্যে আছে ক্রীড়াবিদ-ক্রীড়া সংগঠকদের একক কিংবা দলগতভাবে বিভিন্ন দেশ সফরের। তবে কিছুক্ষেত্রে ভিসা সমস্যায় জিও নেয়ার পর বিদেশে যাওয়া হয় না ক্রীড়া দলের। তারপরও এই বছরের প্রথম ১০ মাসে যতগুলো জিও ইস্যু করেছে মন্ত্রণালয় প্রতিবেদন জমা পড়েনি তার সিকিভাগও। চলমান বছরে ক্রীড়া দলের যে সফরগুলো হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কয়টি প্রতিবেদন জমা পড়েছে সে তথ্য দিতে অনেকটাই গলদঘর্ম হওয়ার অবস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র চারটি প্রতিবেদন জমার তথ্য দিতে পেরেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। বাকি বিদেশ সফরগুলো ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে ক্রীড়া প্রশাসনের কাছে। সরকারি এ নির্দেশনা কেন মানছেন না বেশিরভাগ ক্রীড়া ফেডারেশ? ক্রীড়া প্রশাসনই বা কেন তদারকি করছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মাসুদ করিম বলেছেন, ‘এ বিষয়ে কী নির্দেশনা আছে তা আমাকে দেখে ও জেনে বলতে হবে। দেখতে হবে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নাকি মন্ত্রণালয়ের।’ তবে যাদের স্বাক্ষরে বিভিন্ন জিও ইস্যু হয় তাদের একজন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদার বুধবার বলেছেন, ‘আমরা জিও দেয়ার সময় শর্তগুলো লিখে দেই। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন এবং আরো দু’একটি বড় ফেডারেশন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দল পাঠানোর প্রতিবেদন আমাদের কাছে জমা দেয়। অন্য ফেডারেশনের ক্ষেত্রে বিদেশ গিয়ে কারা ফিরছেন, কারা ফিরছেন না সে তথ্যগুলো আমাদের কাছে থাকে না।’ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এ সহকারী সচিব দায়টা চাপিয়েছেন তাদেরই অধিনস্থ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উপর, ‘ফেডারেশনগুলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিবন্ধিত সংস্থা। ক্রীড়াদল ও ক্রীড়াবিদ-সংগঠকদের বিদেশ সফরের মনিটরিং তাদেরই কাজ।’ আগের জিও’র প্রতিবেদন না দিয়ে নতুন জিও চাওয়ার পর ফেডারেশনগুলোর কাছে কোনো কৈফিয়ত চাওয়া হয় কি না জানতে চাইলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব বলেন, ‘এটা একটা ভালো ধারণা। দেখি স্যারদের সঙ্গে কথা বলে কী করা যায়।’
×