ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নাইকো দুর্নীতি মামলা

খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ৩ জানুয়ারি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ৩ জানুয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ৩ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। এবার পুরাতন কারাগারে নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচার কাজ চলছে। বুধবার এ মামলার অন্যতম আসামি মওদুদ আহমদের অব্যাহতির আবেদনের আংশিক শুনানির পর ঢাকার নবম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মাহমুদুল কবির ৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করে আদেশ প্রদান করেন। এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে দেয়া ৭ বছরের কারাদ-াদেশের রায়ের সার্টিফায়েড কপি আইনজীবীদের কাছে হস্তান্তর করেছে আদালত। বুধবার বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হাজির করা হয়। তিনি হুইল চেয়ারে বসে আদালতে আসেন। ১২টায় শুনানি শুরু হয়ে দুপুর সোয়া ১টায় শেষ হয়। শুরুতেই কারাগারের ভেতর আদালতের পরিবেশ ও আইনজীবীদের বসার মতো জায়গা নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মওদুদ আহমদ। মওদুদ আহমদ বলেন, এই আদালতে বিচার করার মতো কোন পরিবেশ নেই। নাইকো মামলাকে এত বড় করে দেখার কি আছে? এত টাইট সিকিউরিটি কেন? তিনি আরও বলেন, একটা মামলা পরিচালনার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ প্রয়োজন। এখানে আইনজীবীরা বসতে পারছেন না। আদালতে মওদুদ আহমদ নিজেই শুনানি করেন । খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন, এখানে উপস্থিত আইনজীবীদের অধিকাংশই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এখানে যদি শুনানিতে অংশ নিতে হয় তাহলে তারা নির্বাচন করতে পারবেন না। অপরদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানি শেষ করতে বলেন। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আগামী ৩ জানুয়ারি এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন, সুপ্রীমকোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন । খালেদা জিয়া শুরুতে বলেন, আমাদের মামলাগুলো এত দ্রুত বিচার হচ্ছে কেন? আদালতের ভেতরে মামলা পরিচালনা করার মতো কোন পরিবেশ নেই। আমার মামলাগুলো কেন এত দ্রুত বিচার করা হচ্ছে? কয়টা মামলা দ্রুত বিচারে নিষ্পত্তি করা হয়েছে? সেভেন মার্ডার (নারায়ণগঞ্জের সাত খুন) কি দ্রুত বিচার আইনে হয়েছে? বর্তমান রাজনীতির সঙ্গে সব কিছু চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শুনানির এক পর্যায়ে তার অন্যতম আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘তাকে প্রতিমন্ত্রী করে এ মামলা পরিচালনার পুরস্কার দেবে আওয়ামী লীগ।’ তার কথা টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘না, তাকে ফুল মন্ত্রী করে দেবে।’ তখন দুদকের আইনজীবী কাজল তার উদ্দেশে বলেন, ‘ম্যাডাম, আমার জন্য দোয়া করবেন।’ গত ৮ নবেম্বর খালেদাকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে ফিরিয়ে এনে দীর্ঘদিন পর নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানি শুরু হয়। সেদিন মওদুদ আহমদ তার অব্যাহতির আবেদনের ওপর নিজেই শুনানি শুরু করেন। বুধবারও তার বক্তব্য উপস্থাপন শেষ হয়নি। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা যুক্তি উপস্থাপনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতা মওদুদ নির্বাচনের কারণ দেখিয়ে সময়ের আবেদন করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি সাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন। মামলা করার পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মোঃ শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদ-ে দ-িত হয়েছে। আপীলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদ- বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদ-ে প্রদান করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দী রাখা হয়। সেখান থেকেই গত ৬ অক্টোবর চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেয়া হয়। টানা এক মাস ২ দিন বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা নেয়ার পর ৮ নবেম্বর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। খালেদার রায়ের কপি হস্তান্তর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে দেয়া ৭ বছরের কারাদ-াদেশের রায়ের সার্টিফায়েড কপি আইনজীবীদের কাছে হস্তান্তর করেছে আদালত। বুধবার ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন রায়ের ৬৩২ পৃষ্ঠার সার্টিফায়েড কপি খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে হস্তান্তর করেন। এর আগে ৩০ অক্টোবর খালেদার রায়ের সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করেন আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও জয়নুল আবেদীন মেজবাহ। ২৯ অক্টোবর এ মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদ-াদেশ দেয় নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত।
×