ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পার্শ্ব নায়ক তরুণ মিরাজ

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

পার্শ্ব নায়ক তরুণ মিরাজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সেঞ্চুরি উদযাপন শেষ করলেন ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর স্টেডিয়ামের মাটিতে সেজদা দিয়ে। তাকে অনুসরণ করে মেহেদী হাসান মিরাজও তাই করলেন। কিন্তু তরুণ এ অলরাউন্ডার অর্ধশতক বা শতক হাঁকাননি এবং ব্যাটসম্যান হিসেবে কোন মাইলফলকও অর্জন করেননি। এরপরও মিরাজ এমনটা করার মতো সবকিছুই করে দেখিয়েছেন মিরপুর টেস্টের দুই ইনিংসে। প্রথম ইনিংসে ৯ নম্বরে নেমে তার দৃঢ়তাপূর্ণ হার না মানা ৬৮ রানের জন্য ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাতে পেরেছেন মুশফিকুর রহীম। সেই পথে অনেকগুলো রেকর্ডের জন্ম দিয়েছিলেন। সে জন্য কৃতিত্বটা মিরাজকে দিয়ে মুশফিক ঘোষণা করেন, ভবিষ্যতের তারকা মিরাজ! আর দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিকের ভায়রা মাহমুদুল্লাহও সেঞ্চুরি হাঁকাতে পেরেছেন মিরাজের দারুণ সঙ্গ পেয়ে। ৮ নম্বরে নেমে এবার অপরাজিত ছিলেন ২৭ রানে। আবার বল হাতেও জিম্বাবুইয়ের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়া তাইজুল ইসলামকে সঙ্গ দিয়ে তুলে নেন ৩ উইকেট। নিশ্চিতভাবেই জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে চলমান মিরপুর টেস্টে বিশাল অবদান রেখে অন্যতম পার্শ্ব নায়ক তিনি। নিজেকে ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে অনুর্ধ-১৯ দলে নিজেকে প্রমাণিত করলেও জাতীয় দলে আসার পর পরিচয়টা বোলিং অলরাউন্ডার হয়ে গেছে। কারণ দলের কম্বিনেশনে ব্যাটিং পজিশন কখনও টেস্ট ক্রিকেটে দুয়েকটি ইনিংস ছাড়া ৮-এর ওপরে ওঠেনি। তবে এরপরও মিরাজ ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি আদায় করে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্টে নিজের নবম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে। গত বছর ভারতের মাটিতে প্রথমবার টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ দল হায়দরাবাদে। ৮ নম্বরে নেমে ৫১ রানের একটি দারুণ ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। সপ্তম উইকেটে তার সঙ্গে ৮৭ রানের জুটি গড়ে ওঠাতেই ঐতিহাসিক সেই ম্যাচে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন মুশফিক। যদিও মুশফিক শতক হাঁকানোর আগেই সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। একই বছর মার্চে গলে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ৮৫ রানেই থামতে হয়েছিল মুশফিককে। কারণ শেষ নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হিসেবে মিরাজ সেদিন ৪১ রানেই সাজঘরে ফেরার কারণে শতক পাননি তিনি। মিরাজ হয়তো সে জন্যই পণ করেছিলেন দারুণ কিছু উপহার দেবেন মুশফিককে। চলমান মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে মিরাজ যখন ৯ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন তখন মুশফিকের সেঞ্চুরি হয়ে গেছে। ১৪৩ রানে দাঁড়িয়ে থাকা মুশফিকের জন্য তখন অপেক্ষা ডাবল সেঞ্চুরির। তাকে ৩৩ ওভার সঙ্গ দিয়েছেন মিরাজ এবং সেই সুযোগে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ২১৯ রানের অপরাজিত ইনিংস পেয়েছেন তিনি। আর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ইতিহাসে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির একমাত্র ঘটনার জন্ম দিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। সে কারণেই দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক ২১ বছর বয়সী মিরাজকে নিয়ে বলেন, ‘মিরাজের সঙ্গে ব্যাটিং আমি সবসময় উপভোগ করি। ও আমাকে যেভাবে বোঝাচ্ছিল মনে হচ্ছিল, ও দুই শ’ রানে ব্যাট করছে, আমি মাত্র ক্রিজে এসেছি। আমি সবসময়ই বলি, ওর মাঝে অমিত সম্ভাবনা আছে। ওর মনোযোগ আর প্রত্যয় ওর সবচেয়ে বড় ব্যাপার। অনেক সময় হয়তো বাজে শটে আউট হয়ে যায় কিন্তু আজকে (সোমবার) যেভাবে ব্যাটিং করেছে তাতে ও আগামী দিনে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হতে পারে। ভবিষ্যতের তারকা হবে সে।’ বল হাতে অভিষেক সিরিজেই ১৯ উইকেট নিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়ে অবশ্য তারকা খ্যাতি হয়েই গেছে মিরাজের। তবে ব্যাট হাতেও সুযোগটা তার আছে। মুশফিকের কথার প্রমাণ দিতেই যেন প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ৩৩ ওভার উইকেটে থাকা এবং বল হাতে ২০ ওভার করার পরেও দ্বিতীয় ইনিংসে দলের বিপর্যয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। এবার যখন তিনি নেমেছেন সেই ৮ নম্বরে তখন মাহমুদুল্লাহর রান ছিল ৫৬। প্রায় ৯ বছর অপেক্ষার পর তিনি সেঞ্চুরিটি পেয়েছেন মিরাজের দৃঢ়তাপূর্ণ অপরাজিত ২৭ রানের কল্যাণে। এবার ১২ ওভার উইকেটে থেকেছেন তিনি, সেঞ্চুরি পেতে বিধ্বংসী হয়ে ওঠা মাহমুদুল্লাহ বাকি ৪৫ রান করেছেন মাত্র ৩৬ বলে। পূর্বের দুটি আক্ষেপ মিরাজ এক ম্যাচেই ভুলিয়ে দিয়েছেন দুইবার ব্যাট হাতে দুই ব্যাটসম্যানের বিশেষ অর্জনে ভূমিকা রেখে। প্রথম ইনিংসে অষ্টম উইকেটে ১৪৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়ার সময় তিনি ১০২ বলে ৫ চার, ১ ছক্কায় ক্যারিয়ারসেরা অপরাজিত ৬৮ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৪ বলে ২ চারে অপরাজিত ২৭ রান করেন। এর আগে বল হাতে দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠা তাইজুলকেও দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন মিরাজ। ২০ ওভারে ৬১ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেছেন। তাই সবদিক থেকে মিরাজ হয়ে উঠেছেন মিরপুর টেস্টের অন্যতম পার্শ্ব নায়ক। এমন অবদান রাখতে পেরেই সেঞ্চুরি উদযাপনে মাহমুদুল্লাহ যখন সেজদা করেছেন তিনিও অনুসরণ করেছেন তাকে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ বলেন, ‘ব্যাটসম্যানরা রান পাচ্ছিল না অনেকদিন। এই ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা রান পেয়েছে, আমিও পেয়েছি এবং কিছুটা অবদান রাখতে পেরে আমিও তাই উদযাপন করেছি সেটা।’
×