ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রত্যাবর্তন মাহমুদুল্লাহর

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রত্যাবর্তন মাহমুদুল্লাহর

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ৯ বছর আগে টেস্ট ক্যারিয়ারে যাত্রা শুরু হয়েছিল বাজেভাবেই। অভিষেকে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে নিজের পঞ্চম ইনিংসে ৬৯ ও পরের টেস্টে অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। সেঞ্চুরি হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপটা ভুলতেও বিলম্ব হয়নি, পরের টেস্টেই ১১৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হ্যামিল্টনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। কিন্তু এরপর আরেকটি টেস্ট সেঞ্চুরির জন্য মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৬৮ ইনিংস ও ৮ বছর ১০ মাস। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে চলমান মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে দলের বিপর্যয়ে হাল ধরে অপরাজিত ১০১ রান করেন এ মিডলঅর্ডার। অধিনায়কোচিত এ ইনিংসটি তার সাম্প্রতিক ব্যর্থতাও ঢেকে দিয়েছে। এই টেস্টের আগে ৯ ইনিংসে চরমভাবে ব্যর্থ ছিলেন ১০.৭৫ গড়ে মাত্র ৮৬ রান করে। সেটাও কাটিয়ে আবার ফিরলেন দুর্দান্ত শতক দিয়ে। প্রথম ইনিংসে ২১৮ রানে এগিয়ে থাকার নির্ভার পরিস্থিতিতেও দ্বিতীয় ইনিংসে বিপর্যস্ত হওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল বাংলাদেশ দলের। মাত্র দলীয় ২৫ রানের মধ্যে সাজঘরে ফিরে গেছেন ইমরুল কায়েস (৩), লিটন দাস (৬), প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হক (১) ও ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহীম (৭)। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বের বড় বোঝাটা চেপে বসেছিল মাহমুদুল্লাহর কাঁধে। প্রথম ইনিংসে দীর্ঘ ব্যর্থতা কাটিয়ে রানের মধ্যে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ১১০ বলে ধৈর্যশীল ৩৬ রান করে। তবে সেটাতেও আগের ৯ ইনিংসে তার যে ব্যর্থতা তা কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত ছিল না। মিরপুর টেস্টে নামার আগে ৯ ইনিংসে তার রান ছিল- ২৮*, ১৭, ৬, ০, ১৫, ০, ৪, ০ ও ১৬। সবমিলিয়ে ১০.৭৫ গড়ে মাত্র ৮৬ রান। দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে যা দলের ওপরও প্রভাব ফেলেছিল প্রকটভাবে। টানা ৮ ইনিংস দলীয় রান ২০০ স্পর্শ করতে পারেনি। অথচ বিপর্যয়ের মুখে ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়া মাহমুদুল্লাহর মজ্জাগত স্বভাব। সেই সুযোগটা আরেকবার এসে যায় বুধবার বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে- এবার আর ভুল করেননি মাহমুদুল্লাহ। নিজের স্বভাবটাকে আরেকবার প্রদর্শন করেছেন ভালভাবেই। পঞ্চম উইকেটে অভিষেক হওয়া মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে জুটি বেঁধে ১১৮ রান যোগ করেন। দলেরও বড় লিড পেয়ে স্বস্তি ফেরে। আরও বড় স্বস্তি মাহমুদুল্লাহর জন্য। দীর্ঘ ৯ ইনিংস পর আবার অর্ধশতকের দেখা পেয়ে যান তিনি। মিঠুনের পর আরিফুল হক সাজঘরে ফেরার সময় তার রান ছিল ৮৬ বলে ৫৬। সাবলীল ব্যাটিংয়ের নিশানা এখানেই পাওয়া যায়। এরপরই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন মাহমুদুল্লাহ। আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলার প্রবণতা সবসমই দেখা গেছে তার মধ্যে। তবে টেস্ট ম্যাচেও এবার সেই রূপে আবির্ভূত হলেন তিনি। মূলত দলের অবস্থা নাজুক হওয়ার আগেই লিড বাড়িয়ে নিতেই মাহমুদুল্লাহ বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। মিরাজকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে মাত্র ৭০ বলে ৭৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন যা ওয়ানডে মেজাজকেও হার মানিয়েছে। এমন ঝাঁঝালো মেজাজে ব্যাটিংয়ের সুবাদেই ৮ বছর ১০ মাস পর আবার সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে কিংসটাউনে দুই ইনিংসে ৯ ও ৮ রান করেছিলেন। পরের টেস্টে ২৮ ও ০* করা এ ব্যাটসম্যান ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামে (১৭ জানুয়ারি, ২০১০) ৬৯ ও ২০ এবং চতুর্থ টেস্টে ৯৬* ও ০ রান করেন। ৪ রানের জন্য ভারতের বিরুদ্ধে মিরপুর টেস্টে সেই সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয়েছিল তার দল মাত্র ২৩৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার কারণে। সেই আক্ষেপ ভুলেছিলেন ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে। ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া হ্যামিল্টন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১১৫ রান করেন। তারপর থেকেই তার ব্যাটিং পজিশন ৪, ৫ কিংবা ৬ নম্বরে হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৬৮ ইনিংস খেলার সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু ১৩টি অর্ধশতক পেলেও সেঞ্চুরির দেখা পাননি। চলতি বছর জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ক্যারিয়ারে প্রথমবার অধিনায়কত্ব করতে নেমে ৮৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটিই ছিল এই ইনিংসগুলোর মধ্যে সেরা। তারপর তো ৯ ইনিংস মারাত্মক বাজে সময় কেটেছে তার। এবার সেটাকে পেছনে ফেললেন। শেষ ৪৫ রান করেন ৩৬ বলে, সেঞ্চুরি পূর্ণ হয় ১২২ বলে। ৪ চার, ২ ছক্কায় ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদুল্লাহ। ব্যর্থতা কাটিয়ে রানে ফিরলেন তিনি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকিয়েই।
×