ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকের মঞ্চায়ন কাল

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকের মঞ্চায়ন কাল

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ উত্তরার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমির চতুর্দশ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবের সমাপনী আগামীকাল শুক্রবার। এ উপলক্ষে উত্তরার স্থানীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান এবং নাটক মঞ্চায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিন বিকাল ৫-৩০ মিনিটে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি সচিব মোঃ নাছির উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বকরবেন গীতাঞ্জলির উপদেষ্টা দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যা ৭টায় নাট্যদল থিয়েটার অঙ্গনের দশম প্রযোজনা শহীদ বুদ্ধিজীবি মুনীর চৌধুরীর জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মিত ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকের মঞ্চায়ন হবে। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রবীর দত্ত। বাংলা নাটকের পথিকৃত শহীদ বুদ্ধিজীবি মুনীর চৌধুরীর জীবন ও কর্ম নিয়ে নাট্যদল থিয়েটার অঙ্গনের দশম প্রযোজনা নাটকটি ‘মুনীর চৌধুরী’। নাটকের প্রধান চরিত্র মুনির চৌধুরীর নাম ভূমিকায় অভিনয় করবেন মাহবুব আমিন মিঠু। অন্য অভিনয়শিল্পীরা হলেন সাবিনা আক্তার, মোঃ রাজীব আহমেদ, মোঃ জয় আক্তার সজিব, সম্বিতা রায়, জান্নাতুল ফেরদৌস রশনি, মির্জা সাইফুল ইসলাম সুমন, অক্ষয় কুমার সরকার, মোঃ আলম, সিরাজুল ইসলাম, আজিম আহমেদ সালমান ও মোঃ আবু উবায়দা। ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনায় আলি আহমেদ মুকুল, পোশাক পরিকল্পনায় ড. আইরিন পারভীন লোপা, আবহ সঙ্গীত শিশির রহমান, আলো শামীমুর রহমান, ভিডিও অরণ্য আলমগীর, কোরিওগ্রাফি সম্বিতা রায়, রূপসজ্জা শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, সেট নির্মাণ মনির, প্রচ্ছদ নকশা শিল্পী রফিকুন নবী, প্রযোজনা অধিকর্তা মাহবুব আমিন মিঠু।শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর জীবন এবং কর্মের নানা দিক ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকে তুলে ধরা হয়েছে। ব্যক্তি মুনির চৌধুরীর বহুমাত্রিক নাট্যভাবনার নির্মাণ প্রতিফলিত হয়েছে মৌলিক নাট্য রচনায় ও বিদেশী নাটকের অনুবাদ-রূপান্তরে-যেখানে বেদনার সঙ্গে মিশ্রিত হয়েছে কৌতুক বোধ এবং এর সঙ্গে সূক্ষ্ম শৈল্পিক প্রতিবাদ। দ"ষ্টি উন্মোচনকারী এই নাট্যকার, প্রাবন্ধিক এবং সাহিত্য সমালোচক ১৯৭১ সালে বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর, আলশামসদের হাতে অন্য বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে নির্মমভাবে শহীদ হন। কোথাও তাঁর মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। একুশের প্রথম নাটক ‘কবর’ যাকে অমর করে রেখেছে, তারই কোন কবর নেই। তবে কি ‘কবর’ মুনীর চৌধুরীর জীবনের প্রতিচ্ছবি? মূলত নাটকীয় মুহূর্ত তৈরির মাধ্যমে মুনীর চৌধুরীর জীবনালেখ্যই প্রতিফলিত হয়েছে এ নাটকে। এদেশের নব-নাট্যান্দোলনের পথিকৃৎ মুনীর চৌধুরীর বুদ্ধিদীপ্ত প্রচেষ্টায় বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় এদেশের আত্ম সচেতন ও সমাজ সচেতন নাট্যভাবনার সূত্রপাত ঘটে। অল্পকাল ব্যবধানে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর গোটা দুনিয়াব্যাপী শিল্প-সাহিত্যের উদার উঠানে, যখন চিন্তার বিলোড়ন তৈরি হয়েছে তখন বাংলাদেশেও সে প্রবণতার প্রভাব ছায়া বিস্তার করেছে অনিবার্যভাবে। শিক্ষিত-সচেতন মানুষ হিসেবে নাট্যকার মুনীর চৌধুরী বিশ্বমননে স্নাত হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় থেকেই তিনি ঝুঁকে পড়েন নাটকের শিল্প কৌশলের দিকে। তাঁর প্রথম নাটক নওজোয়ান কবিতা মজলিস রচিত হয় ১৯৪৩ সালে। তাঁর নাটকে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকার নগরকেন্দ্রিক জীবনপ্রবাহ এক কর্মচাঞ্চল্যের অভিজ্ঞতা প্রাধান্য পেয়েছে। আর পেশাগতভাবে শিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় শিক্ষার্থী-অধ্যাপক-প্রক্টর-হাউস টিউটর, সাংবাদিক-উকিল-পুলিশ-ডাক্তার নেতা, রিকশাওয়ালা দোকানদার-অভিভাবক প্রেমিক-প্রেমিকা প্রভৃতি চরিত্র তাঁর নাটকের ক্যানভাসে সাবলীল ভাবে জায়গা করে নিয়েছে। গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমি গত ১৪ বছর ধরে রাজধানীর উত্তরা জনপদে নিবেদিত ভাবে সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। থিয়েটার অঙ্গন নাট্যদল গীতাঞ্জলির অভিনয় বিভাগের শিক্ষার্থী ও আশপাশের এলাকার নাট্যকর্মীদের জন্য ২০০৮ সালে গঠিত হয়। থিয়েটার অঙ্গন এ যাবৎকাল পর্যন্ত ১১টি প্রযোজনা করতে সামর্থ্য হয়েছে। প্রসঙ্গত, গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার চতুর্দশ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে গত ২৬ অক্টোবর থেকে তিনদিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে। উৎসবের উদ্বোধনী ২৬ অক্টোবর দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ শিল্পী মুর্তজা বশীর, কবি নির্মলেন্দু গুণ ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব মফিদুল হককে গীতাঞ্জলি সম্মাননা পদক-২০১৮ প্রদান করে।
×