ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ার মানুষ আজও ভোলেনি ভয়াল সিডর ট্রজেডির সেই দিন

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

কলাপাড়ার মানুষ আজও ভোলেনি ভয়াল সিডর ট্রজেডির সেই দিন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ আজ সিডর তান্ডবের ১১ বছর। প্রকৃতির বুলডোজার খ্যাত সুপার সাইক্লোন ঘুর্ণিঝড়ের ভয়াল তান্ডবের কথা সাগরপারের কলাপাড়ার মানুষ আজও ভোলেনি। এখনও কলাপাড়ায় পাঁচ হাজার পরিবার বেড়িবাঁধের বাইরে ঝুপড়ি ঘরে ঝুঁকিতে বসবাস করছে। এছাড়া যাদেরকে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল তারও ৯৫ ভাগ ঘরের বাস উপযোগিতা নেই। বাড়ছে গৃহহারা পরিবারের সংখ্যা। তবে নতুন করে ১২টি ইউনিয়নের ১৩১টি পরিবারকে গৃহপুনর্বাসন সহায়তা দেয়া হয়েছে। ২০০৭ সালে সিডরের ভয়াল তান্ডবে কলাপাড়ায় সরকারি হিসাবে ৯৪ জন মানুষের প্রানহানি ঘটে। বেসরকারি হিসাবে ১০৪ জন। আজও নিখোঁজের রয়েছে সাত জেলে ও এক শিশু। আহত হয়েছে ১৬৭৮জন। এর মধ্যে ৯৬ জন প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। বিধবা হয়েছে ১২ গৃহবধু। এতিম হয়েছে ২০ শিশু। সম্পুর্ণভাবে ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ১২হাজার নয় শ’ পরিবার। আংশিক বিধ্বস্ত হয় ১৪ হাজার নয় শ’ ২৫ পরিবার। তিন হাজার দুই শ’ ২৫জেলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। প্রকৃতির ওই কালো থাবায় শতকরা ৯০ ভাগ পরিবার ক্ষতির শিকার হয়। এর মধ্যে ৫৪৭৩ টি পরিবারকে ঘর ণির্মাণ করে দেয়া হয়েছে । ৫৪০ পরিবারের মধ্যে দেয়ার জন্য ব্যারাক হাউস নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে পাঁচ বছর আগে। কিন্তু এসব ব্যারাকের অন্তত ৩০০ কক্ষে লোকজন থাকছে না। ব্যারাক হাউসের চাল বেড়া পর্যন্ত চুরি হয়ে গেছে। সম্পুর্ণ বিধ্বস্ত আরও চার সহ¯্রাধিক পরিবার আজ পর্যন্ত ঘর পায়নি। আদৌ আর কখনও পাবে কিনা তা খোদ সরকারের মহল থেকে নিশ্চিত করতে পারেনি। বসতঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়া ১২হাজার পাঁচ শ’ ১৬ পরিবারের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে ক্ষতিপুরণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া তিন হাজার, আড়াই হাজার, দুই হাজার এবং এক হাজার টাকা করে আরও ছয় হাজার সাত শ’ পরিবারকে গৃহ নির্মাণে সহায়তা দেয়া হয়েছে । গৃহনির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সহায়তা দেয়া হয়েছে আরও অন্তত সাত হাজার পরিবারকে। খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে অধিকাংশ পরিবারকে। এখবর সরকারের বিভিন্ন সুত্রের। তারপরও সম্পূর্ণ এবং আংশিক বিধ্বস্ত পঁচ হাজার পরিবার আজও মানবেতর জীবন-যাপন করছে। লালুয়ার চারিপাড়ার ভাঙ্গা বাঁধের স্লোপে থাকা অন্তত ৩০টি পরিবারের লোকজন জানান, এখনও এক চিলতে জমির সন্ধান তাঁদের মেলেনি। যে কোন সময় ফের জলোচ্ছ্বাসে সব ভেসে যাওয়ার আতঙ্ক রয়েছে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকছেন। এরা বেড়িবাঁধের বাইরে ঝুপড়ি তুলে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তবে আশ্রায়ন প্রকল্প -২ এর আওতায় জমি আছে ঘর নেই এদের ঘর দেয়ার কার্যক্রম এবছর শুরু হয়েছে। প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে এ পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২০ পরিবারকে ঘরের মালামাল হস্তান্তর করে ঘর তোলার কাজও শেষের পথে। কলাপাড়ার ইউএনও মো. তানভীর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, এছাড়াও এবছরই দুইটি আবাস প্রকল্পের মেরামত কাজ শেষ করে বাস উপযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।
×