ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর রেয়াতের সুবিধায় নতুন কোম্পানির মুনাফায় উত্থান

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

কর রেয়াতের সুবিধায় নতুন কোম্পানির মুনাফায় উত্থান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৮ সালের জুনের পর নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো কর রেয়াত সুবিধা পেয়েছে। এই সুবিধার কারণে প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে কোম্পানিগুলোর মুনাফায় অস্বাভাবিকভাবে উত্থান ঘটেছে। কর রেয়াতের অর্থ মুনাফায় যোগ হওয়ায় শেয়ার প্রতি আয়ও বেড়েছে। জুনের পর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে আমান কটন, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, সিলভা ফার্মা, এমএল ডাইং ও কাট্টালি টেক্সটাইল। সবকটি কোম্পানিরই অস্বাভাবিক উত্থান হয়েছে মুনাফা। তাই বিনিয়োগকারীদের এই মুনাফায় বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবসায় উন্নতি না হলেও আগের অর্থবছরে লনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে নিট মুনাফা বেড়েছে ১৩০ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে ১০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধায় ডেফার্ড টেক্স সমন্বয়ের কারণে এই উত্থান হয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের জন্য কোন সুখবর না বলে মনে করেন হিসাববিদরা। এমতাবস্থায় বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এএফসি ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুব এইচ মজুমদার (এফসিএমএ) বলেন, তালিকাভুক্তিতে কোম্পানিগুলো সাধারণত কর রেয়াত সুবিধা পেয়ে থাকে। যাতে তালিকাভুক্তির বছরে কোম্পানিগুলোর মুনাফায় ডেফার্ড টেক্সজনিত কারণে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেমনটি চলতি অর্থবছরে তালিকাভুক্ত হওয়া প্রায় সব কোম্পানির ক্ষেত্রেও পড়বে। তবে এমন ইতিবাচক মুনাফা বিনিয়োগকারীদের জন্য কোন সুখবর না। এতে কোম্পানির লভ্যাংশ বেশি দেয়ার সক্ষমতা তৈরি হয় না। তাই এ জাতীয় মুনাফায় বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত হওয়া থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। দেখা গেছে, সিলভা ফার্মার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে করপূর্ব মুনাফা হয়েছিল ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে হয়েছে ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে করপূর্ব মুনাফা বেড়েছে ৮ লাখ টাকা বা ২ শতাংশ। এদিকে কোম্পানিটির ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছিল ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে হয়েছে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে মুনাফা বেড়েছে ২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বা ১৩০ শতাংশ। কোম্পানিটির এই নিট মুনাফায় উত্থানের পেছনে রয়েছে ডেফার্ড টেক্সের জটিল হিসাব। কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির আগে ৩৫ শতাংশ টেক্স হিসেবে ডেফার্ড টেক্স হিসাব করা হয়েছে। তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির কারণে সেই টেক্স হার কমে এসেছে ২৫ শতাংশে। এতেই কোম্পানিটির আগের বছরের ডেফার্ড টেক্স ব্যয় এ বছর আয়ে পরিণত হয়েছে। সিলভা ফার্মায় ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ হারে ডেফার্ড টেক্স গণনা করা হয়েছে। এতে ওই বছর শেষে ৯ কোটি ১২ লাখ টাকার ডেফার্ড টেক্স দায় দাঁড়ায়। কিন্তু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে সেই টেক্স হার ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এ হিসাবে কোম্পানিটিতে আগের বছরগুলোতে বেশি ডেফার্ড টেক্স গণনা করা হয়েছে। আর সেই অতিরিক্ত অংশটুকু চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সমন্বয় করা হয়েছে। ফলে এই প্রান্তিকে ডেফার্ড টেক্সবাবদ আয় হয়েছে এবং দায় কমেছে। দেখা গেছে, আগের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সিলভার ১০ লাখ টাকার ডেফার্ড টেক্সবাবদ ব্যয় দেখাতে হয়েছিল। তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে ১০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা প্রাপ্তিতে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ডেফার্ড টেক্সবাবদ আয় হয়েছে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার। যাতে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে। তবে এই উত্থানে বিনিয়োগকারীদের খুশি হওয়ার মতো কিছু নেই। কারণ কোম্পানিটির ব্যবসায় কোন উত্থান হয়নি। এছাড়া আগামী প্রান্তিক হিসাবগুলোতে প্রথম প্রান্তিকের ন্যায় ডেফার্ড টেক্সের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে না।
×