ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচন আর পেছানো হবে না ॥ ইসি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচন আর পেছানো হবে না ॥ ইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তিন সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানালেও তাদের দাবি নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারা ৩০ ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন আর না পেছানোর আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হবে। আইন ও সংবিধান মেনে নির্বাচন করতে গেলে এর পরে আর নির্বাচন পেছানোর সুযোগ কমিশনের নেই বলে উল্লেখ করেন। এর আগে বুধবার নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে ৩ সপ্তাহ নির্বাচন পেছানোর দাবি জানান। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, কমিশনের সঙ্গে তাদের আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন পেছানোর ঐক্যফ্রন্টের দাবি কমিশন ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে বলেও সাংবাদিকদের তিনি বলেন। ঐক্যফ্রন্টের আলোচনার পরে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে ঘোষিত তারিখের পরে নির্বাচন না পেছানোর দাবি জানান। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ একদিনের জন্যও নির্বাচন না পেছানোর দাবি জানিয়েছে। কমিশন নির্বাচন না পেছানোর এই সিদ্ধান্ত কোন একটি দলের দাবির প্রেক্ষিতে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, কমিশন স্বাধীন এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারা নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অন্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুযোগ কমিশনের নেই। তবে রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু কমিশনের স্টেক হোল্ডার, তারা বিভিন্ন বিষয়ে কমিশনকে পরামর্শ দিতেই পারেন বলে উল্লেখ করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা গত ১২ নবেম্বর রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে নির্বাচন ২৩ ডিসেম্বর থেকে পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। পরে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুনর্তফসিল ঘোষণা করা হয়। পুনর্তফসিলের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানায়। তাদের এই নির্বাচন পেছানোর দাবিতে আওয়ামী লীগসহ অন্যদলগুলো সমর্থন করে। নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হওয়ায় কমিশন নির্বাচন এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছে। যদিও মঙ্গলবার ইসিতে এক অনুষ্ঠানে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফ্রিংকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বলেন, নির্বাচন আর পেছানোর কোন সুযোগ নেই। তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, নির্বাচনের এক মাসের মধ্যে নতুন সংসদ বসবে। এজন্য বিজয়ী প্রার্থীদের গেজেট প্রকাশ, শপথ নেয়া ও উপনির্বাচনের মতো বিষয় রয়েছে। এছাড়াও জানুয়ারিতে বিশ্ব এজতেমার মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠান রয়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবে। সব বিবেচনায় নির্বাচনের পেছানোর সুযোগ নেই। তবে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচন পেছানোর দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমিশনের বৈঠকে নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে নানা পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠক শেষে নির্বাচন আর না পেছানোর সিদ্ধান্তের কথাই সাংবাদিকদের জানান ইসি সচিব। তিনি বলেন, কমিশনের বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের দাবি পর্যালোচনা করা হয়েছে। আইন ও সংবিধানের মধ্যে থেকে নির্বাচন পরিচালনা করতে হলে জানুয়ারি মাসে নির্বাচনের সুযোগ কমিশনের নেই। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পরে বিভিন্ন আসনে উপনির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। কোন আসনে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে সেখানে কমিশনের তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় রয়েছে। ভোটে যারা বিজয়ী হবেন তাদের গেজেট করার বিষয় রয়েছে। এছাড়াও জানুয়ারি মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ব এজতেমায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ লোকের সমাগম হবে। বিশ্ব এজতেমার নিরাপত্তার জন্য সারাদেশ থেকে লক্ষাধিক সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। এসব কারণে ৩০ ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন পেছানোর কোন সুযোগ নেই। ঘোষিত তফসিলেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিদেশী পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, কমিশন বাইরের পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেবে। তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসলে স্বাগত জানানো হবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন কবে হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, কতদিন আগে কখন কিভাবে সেনা মোতায়েন করা হবে এ বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আলোচনা করেই সেনা মোতায়েন করা হবে। নির্বাচনে জোট ও প্রতীকের বিষয়ে তিনি বলেন, পুনর্তফসিলের পর কোন দল কোন জোটে এবং কোন প্রতীকে নির্বাচন করতে চায় তার সময়সীমাও বাড়ানো হয়। বৃহস্পতিবার এই সময়সীমা শেষ হয়েছে। সময়সীমার মধ্যে যেসব দল নির্বাচনে জোট করতে চায় সে সব জোটের পক্ষ থেকে জোট ও প্রতীকের বিষয়ে কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। জোটের পক্ষ থেকে যেমন চিঠি দেয়া হয়েছে এর বাইরেও রাজনৈতিক দলগুলোও আলাদা চিঠি দিয়ে বিষয়টি কমিশনকে জানিয়েছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে কাদের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করবে তা জানিয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও জানিয়েছে। এক্ষেত্রে আইনে যেভাবে আছে, সেভাবে তারা প্রতীক পাবে। আর অনিবন্ধিত দল যেগুলো আছে, তাদের যে দল প্রতীক দেবে সে অনুযায়ী ভোটে অংশ নেবে। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কমিশন সচিব বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ১০ দিন আগ থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকে। বিজিবি মোতায়েন হবে। সুতরাং তাদের থাকার ব্যবস্থাসহ সব প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে। কোথায় প্রিজাইডিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, সেটা এখন থেকে ঠিক করে রাখতে হবে। যেখান থেকে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে, এখন থেকে ঠিক করে রাখতে হবে। আর কোথায় থেকে নির্বাচনী মালামাল সরবরাহ করা হবে সেটার ব্যবস্থাও করতে হবে। তিনি বলেন, বুধবার পল্টনে শোডাউনকে কেন্দ্র করে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। এটা যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়। আচরণবিধি ঠিকভাবে যেন পালন হয় সেদিকে আপনারা নজর রাখবেন। পোস্টার-ব্যানার সরিয়ে ফেলাসহ মাঠের পরিবেশের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, কোন কর্মকর্তা শিথিলতা দেখালে তার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা ইসির ব্রিফ্রিংয়ে অংশ নেন। ভোট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল ॥ একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের কাজে নিয়োজিত সব কর্মকর্তা ও নির্বাচন অফিস সংশ্লিষ্টদের ছুটি বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আদেশ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান ভোটের দায়িত্বে থাকা সব রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন অফিসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ওয়াজ-মাহফিলে নির্বাচনী প্রচার নয় ॥ ভোটের মৌসুমে ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলে কোন ধরনের নির্বাচনী প্রচার যাতে না করা হয় সে বিষয়েও একটি নির্দেশনা জারির পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, বছরের শেষে শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিলসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়। সংবেদনশীলতার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রার্থীরা যাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা হবে। আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, মসজিদ-মন্দির, গির্জা বা অন্য কোন ধর্মীয় উপাসানালয়ে কোন ধরনের নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে না। সেই সঙ্গে ভোটের প্রচারে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য দেয়া, উস্কানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বক্তব্য দেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আচরণবিধিতে।
×