ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ঢাকা সত্যিই এখন উৎসবের নগরী। বৃষ্টির আশঙ্কা নেই। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। সময়টা বরাবরই কাজে লাগান রাজধানীবাসী। উৎসব অনুষ্ঠানে মাতেন। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। একটি আয়োজন শেষ হতে না হতেই অন্যটি শুরু হয়ে যাচ্ছে। কিছু আয়োজন আবার মেগা ইভেন্ট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এসব ইভেন্টের প্রতি তরুণ প্রজন্মের দারুণ ঝোঁক। সে কথায় পরে আসি। আগে বলি নবান্নের কথা। বৃহস্পতিবার ছিল ১ অগ্রহায়ণ। এদিন ফসলকেন্দ্রিক সবচেয়ে বড় উৎসবটি উদ্যাপিত হয়। শস্যোৎসবে দারুণ মুখরিত থাকে বাংলাদেশের গ্রাম। একদিকে নতুন ধান গোলায় তোলা হয়। অন্যদিকে চলে নবান্নের নানা আচার-অনুষ্ঠান। নবান্ন মানে নতুন অন্ন। এখন যে শহুরে প্রজন্ম, কিছুই তেমন জানে না। তাদের জন্য বলা, অন্ন অর্থ ভাত। জমি থেকে নতুন আমন ধান সংগ্রহের পর সেই ধান থেকে চাল করা হয়। এই চালে প্রথম রান্না উপলক্ষে যে উৎসব, তাই নবান্ন উৎসব নামে পরিচিত। উৎসবটি ঘিরে বাঙালীর লোকজীবন, ঐতিহ্য ও তৃণমূলের সংস্কৃতি নতুন করে প্রাণ পায়। শেকড়ের সংস্কৃতি উর্ধে তুলে ধরার সচেতন প্রয়াস হিসেবে ঢাকায়ও আয়োজন করা হয় নবান্ন উৎসবের। নাগরিক সমাজের যে অংশটি আত্মপরিচয়ের সঙ্কটে ভোগে না, নিজের কৃষ্টির প্রতি প্রেম যাদের, তারা খুব ভোরে চলে যায় চারুকলার বকুলতলায়। এবারও তাই হয়েছে। ছোট ছোট মেয়ে-তরুণীরা কী সুন্দর শাড়িতে সেজে এসেছিল। নাচ, গান, কবিতার ভাষায় ফেলে আসা দিনের কথা বলেন আয়োজকরা। নিজেরটা নিয়ে বাঁচার, গর্ব করার আহ্বান জানান। সঙ্গে ছিল গ্রামীণ পিঠাপুলির আয়োজন। মুড়ি-মুড়কি, বাতাসায় আপ্যায়ন করা হয় সবাইকে। সব মিলিয়ে অন্যরকম একটি দিন। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ শুক্রবার একই রকম আয়োজনে মুখর থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। মেগা ইভেন্ট প্রসঙ্গে আসা যাক। এ ধরনের আয়োজনের অন্যতম একটি ঢাকা লিট ফেস্ট। তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়। শেষ হয়েছে শনিবার। বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত উৎসবে ইংরেজী মাধ্যমে লেখাপড়া করা ছেলেমেয়েরাই বেশি এসেছিল। সমকালীন বিশ্বসাহিত্যের নানা খোঁজখবর করে তারা। সাহিত্যায়োজনে ছিল সঙ্গীত, নাটক, সিনেমাও। বিশেষ আকর্ষণ হয়ে এসেছিলেন বিদেশী সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী ও পরিচালকরা। আয়োজকদের তথ্য মতে, উৎসবে বিশ্বের ২৫ দেশের প্রায় ২০০ অতিথি যোগ দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ, স্বনামধন্য বক্তা ও পারফর্মার। তিন দিনের আয়োজনে শতাধিক সেশনের আয়োজন করা হয়। সেশনগুলো দারুণ উপভোগ করেন ফেস্টে আগতরা। তবে বিদগ্ধদের অনেকেই বলেছে, আদান-প্রদান হওয়াটা জরুরী। সেটি খুব হয়েছে, বলা যাবে না। বাংলা সাহিত্যকে একদমই খুুঁজে পাওয়া যায়নি লিট ফেস্টে। অন্য ভাষার সাহিত্য থাকবে। থাকবে বাংলাও। তবেই না আদান- প্রদান হবে। ভবিষ্যতে বিষয়টি নিয়ে ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এদিকে, ঢাকা লিট ফেস্টের রেশ কাটতে না কাটতেই বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট। ২০১৫ সাল থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট। সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ। নেপথ্যের মানুষটি অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশের লোকসঙ্গীত শিল্পীদের একত্রিত করে উৎসবটি আয়োজন করেছেন তিনি। বাইরের সাত দেশ থেকে এসেছেন ১৭৪ শিল্পী। তারকা শিল্পীরা নিজ নিজ দেশের ফোক পরিবেশন করে বাংলাদেশী শ্রোতাদের মুগ্ধ করছেন। এ অঞ্চলের লোকসঙ্গীত নিয়েও হচ্ছে ফিউশন। এভাবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলছে। আগামীকাল শনিবার ভাঙবে দেশী-বিদেশী বাউলদের মিলনমেলা। আরও একটি জাদুঘর হলো ঢাকায়। রাষ্ট্রীয় তোশাখানাকে এবার জাদুঘরে রূপ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের দেশ-বিদেশ থেকে পাওয়া সব উপহার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় যথাযথভাবে সংরক্ষণের লক্ষ্যে নতুন এই জাদুঘর নির্মাণ করা হয়। বিজয় সরণির বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর সংলগ্ন এলাকায় নির্মিত এ জাদুঘর বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫০ হাজার স্কয়ার ফিট এলাকাজুড়ে সুরম্য জাদুঘর ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পাঁচতলা বিশিষ্ট জাদুঘর নির্মাণে খরচ হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এটি নির্মাণ করা হয়। জাদুঘরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রীয় উপহার সংরক্ষণে তোশাখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তার নির্দেশনায় ১৯৭৪ সালে তোশাখানা আইন প্রণীত হয়। পরে রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনে এটি নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় তোশাখানার জন্য আলাদা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তার নির্দেশনায় বিজয় সরণির এই তোশাখানা জাদুঘরটি নির্মিত হয়। জাদুঘরের ইন্টেরিওর ডিজাইনের কাজ করেন নাজনীন হক মিমি। অচিরেই জাদুঘরটি সাধারণ দর্শনার্থীর জন্য খুলে দেয়া হবে। শেষ করা যাক বাংলাদেশের টেস্ট জয়ের খবর দিয়ে। খবরটি সবাই জানেন বটে। তবুও বলতে মন চাইছে। জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে দারুণ জয় পেয়েছে টাইগাররা। প্রথম টেস্টে বাজেভাবে হারার পর এমন ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা ঘটল। ফলে দারুণ উচ্ছ্বসিত সবাই। শেষদিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় অপেক্ষা। ক্রিকেটপ্রেমীরা টেলিশনে চোখ রাখেন। মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও প্রচুর দর্শক সমাগম ঘটেছিল। দুপুরের কিছু পরই সফররত জিম্বাবুইয়ের শেষ উইকেটটি তুলে নেন মিরাজ। তারপর থেকেই উদ্যাপন। এখনও চলছে।
×