ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টাকা দিয়ে প্রশাসন কেনার ষড়যন্ত্র সরকার বিরোধী জোটের

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

টাকা দিয়ে প্রশাসন কেনার ষড়যন্ত্র সরকার বিরোধী জোটের

তপন বিশ্বাস ॥ এবার চলছে নির্বাচনী ষড়যন্ত্র! টাকার বিনিময়ে প্রশাসন যন্ত্রকে হাতের কব্জায় নিয়ে ক্ষমতায় বসার লক্ষ্যে সরকারবিরোধী একটি রাজনৈতিক জোট উঠেপড়ে লেগেছে। এই কাজে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। টার্গেট ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসিকে হাতের মুঠোয় রাখা। শুধু টাকা নয়, ক্ষমতায় এলে তাদের জন্য থাকবে আরও লোভনীয় পুরস্কার। প্রায় এক বছর আগে থেকে তারা ধীরে ধীরে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে প্রাথমিক ধাপও নীরবে সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে তারা মনে করে। এ বিষয়ে সরকারের একধিক গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট দিলেও তা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়নি বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্ষমতায় বসতে সরকারবিরোধী একটি জোট দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে আসছে। কিন্তু একের পর এক তা ব্যর্থ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এরপর থেকে একের পর এক নানামুখী ষড়যন্ত্র চলে। কিন্তু একটির পর একটি ষড়যন্ত্র সরকার ব্যর্থ করে দেয়। এবার চলছে নির্বাচনী ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে প্রায় তিন হাজার কোট টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে সরকারবিরোধী এই জোট। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে সরকারকে অবহিত করলেও তা সরকার প্রধানের হাতে পৌঁছায়নি বলে সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে যাওয়ার আগে তা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সূত্র মতে, সরকারবিরোধী এই জোট যে কোন প্রকারেই ক্ষমতায় বসতে চায়। এই লক্ষ্যে তারা ২৫ থেকে ৩০ জেলাকে টার্গেট করে কাজ করে যাচ্ছে। এ জেলার ডিসি, এসপি, ইউএনও ও ওসিকে টাকার বিনিময়ে হাতের কব্জায় নিতে চায়। ডিসি-এসপি পর্যায়ের কর্মকর্তাকে প্রয়োজনে তারা ২০ থেকে ৫০ কোটি পর্যন্ত টাকা দিয়ে কব্জায় নেয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। আর ইউএনও ও ওসিকে ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। এর মধ্যে একাধিক ডিসি- এসপিকে তারা কব্জায়ও নিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের একাধিক ডিসি-এসপিকে তারা হাতের মুঠোয় নিয়েছে, বিশেষ করে বর্তমান ডিসিদের মধ্যে কেউ কেউ অতীতে ছাত্রদলের ক্যাডার ছিলেন। ঢাকা শহরের পশ্চিমের এক জেলা প্রশাসক মোটা অঙ্কের টাকা লুফে নিয়ে তাদের বশ্যতা স্বীকার করেছেন। ওই কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের ক্যাডার ছিলেন। চাকরি জীবনে আওয়ামীপন্থী এক সিনিয়র সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সুবাদে তিনি ডিসিও হয়েছেন। সূত্র জানায়, মনোনয়ন বাছাই শেষ হলেই তাদের কার্যক্রম শুরু হবে। প্রশাসনে নিরপক্ষেতার আড়ালে তারা মূলত সরকারবিরোধী ওই জোটের স্বার্থেই কাজ করবেন। তাদের (সরকারবিরোধী জোট) প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এই কর্মকর্তারা কাজ করবেন। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে নানা কৌশলে প্রতিহত করাই এদের কাজ। নির্বাচন কমিশনও এর প্রতিকার করতে পারবে না। তাদের কাজে নির্বাচন কমিশন বাধা সৃষ্টি করলে তারা পাল্টা ইসিকে বিতর্কিত করতে মিডিয়াকে উস্কে দেবে। এসব ডিসি, এসপি, ইউএনও ও ওসি মূলত নিরপেক্ষতার আড়ালে সরকারবিরোধী জোটের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। শুধু কোটি কোটি টাকা নয়, সরকারবিরোধী এই জোট ক্ষমতায় এলে এসব কর্মকর্তা পাবেন রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন লোভনীয় পুরস্কার। পদোন্নতি দিয়ে তাদের বসানো হবে সরকারের আরও দায়িত্বশীল পদে। তাদের লোভনীয় প্রস্তাবে কয়েক কর্মকর্তা ইতোমধ্যে তাদের ভক্ত বনে গেছেন বলে সূত্র জানায়। সূত্র মতে, এই নীলনক্সা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক বছর আগে থেকে কাজ করছে সরকারবিরোধী ওই জোট। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তাদের কর্মকর্তা বসানো ও সরকারের আস্থাভাজন করে তোলার কাজ করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা সফলও হয়েছে। সিভিল প্রশাসনে পদোন্নতি দিয়ে এদের আস্থাভাজনদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য যোগ্য করে তোলা এবং ডিসিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের বসানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ডিসি ফিটলিস্টে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের আস্থাভাজন অনেক কর্মকর্তাকে এই সকল ফিটলিস্টে অযোগ্য করে রাখা হয়েছে। আর ফিটলিস্টে নাম অন্তর্ভুক্তির পর প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বিভিন্ন জেলার ডিসি হিসেবে বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করানো হয়েছে। শুধু সিভিলে নয়, পুলিশ প্রশাসনেও এমন কাজ করা হয়েছে। সরকারের আস্থাভাজন কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তার কাউকে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে ফাঁসিয়ে সার্ভিসের বাইরে রাখা। কাউকে আবার তদ্বিরের মাধ্যমে পদোন্নতি দিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সরকারবিরোধী জোটের নীলনক্সা অনুয়ায়ী মাঠ প্রশাসনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের পছন্দের কর্মকর্তাদের বসানো হয়েছে বলে এবার নির্বাচনের সময় প্রশাসনে কোন রদবদলের দাবি কেউ তুলছে না। বরং এই কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। তারা মনে করছে, দাবি না তুললে ইসিও রদবদল করবে না। নির্বাচনী তফসিল পেছানোর দাবি করলেও এবার কেউ প্রশাসন নিয়ে কোন অভিযোগ তোলেনি।
×