ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১-১ সমতা

টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে সমান সমান

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে সমান সমান

মিথুন আশরাফ ॥ সাত উইকেটের অপেক্ষা ছিল। সেই সাত উইকেট মিলল গিয়ে পঞ্চম ও শেষদিনে দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার আগেই। আবারও সেঞ্চুরি করা ব্রেন্ডন টেইলর ভালই ভোগালেন। তবে শেষ পর্যন্ত আর দলকে হার থেকে বাঁচাতে পারলেন না। ৫ উইকেট তুলে নেয়া মেহেদী হাসান মিরাজ যে তা করতে দিলেন না। মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশও তাই ২১৮ রানে জিতে টেস্ট সিরিজ ড্র করল। টেস্টের পঞ্চম ও শেষদিনে জিম্বাবুইয়ের জিততে ৩৬৭ রান দরকার ছিল। বাংলাদেশের দরকার ছিল ৭ উইকেট। ইনজুরিতে চাতারা ব্যাটিং করতে পারবেন না। তাই সাত উইকেটই বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল। সারাদিন ছিল। এরপরও এত বিশাল রানের টার্গেট জিম্বাবুইয়ের অতিক্রম করা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। তবে ড্র’র সুযোগ ছিল। সেই সুযোগ নিতেও চেয়েছিল জিম্বাবুইয়ে। কিন্তু বাংলাদেশ বোলাররা সেই কাজটি করতে দেননি। মিরাজ জিম্বাবুইয়ের ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। জিম্বাবুইয়েকে ২২৪ রানে অলআউট করে জয়ের আনন্দ সঙ্গী করেই মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। তাতে করে প্রথম টেস্টে ১৫১ রানে হেরে যে টেস্ট সিরিজে ১-০তে পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ, দ্বিতীয় টেস্ট সিরিজে সিরিজ ১-১ ড্র করল। এর আগে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে মুশফিকুর রহীমের অপরাজিত ২১৯, মুমিনুল হকের ১৬১ ও মেহেদী হাসান মিরাজের অপরাজিত ৬৮ রানে ৫২২ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। এরপর প্রথম ইনিংসে টেইলরের ১১০ ও পিটার মুরের ৮৩ রানে ৩০৪ রান করে গুটিয়ে জিম্বাবুইয়ে ফলোঅনে পড়ে। ২১৮ রানে এগিয়ে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু জিম্বাবুইয়েকে আবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। কোন ঝুঁকি নেয়নি মাহমুদুল্লাহর দল। নিজেরা নিরাপদে থাকতেই আবার ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। তাতে করে দ্বিতীয় ইনিংসে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অপরাজিত ১০১, মোহাম্মদ মিঠুনের ৬৭ ও মিরাজের অপরাজিত ২৭ রানে ২২৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। তাতে করে জিম্বাবুইয়ের সামনে জিততে ৪৪৩ রানের টার্গেট দাঁড় হয়। এই টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে চতুর্থদিন শেষ সেশন ব্যাটিং করে ২ উইকেট হারিয়ে ৭৬ রান করে জিম্বাবুইয়ে। টেইলর ৪ ও শন উইলিয়ামস ২ রানে ব্যাটিংয়ে ছিলেন। জিততে পঞ্চমদিনে জিম্বাবুইয়ের দরকার থাকে ৩৬৭ রান। এই টেস্টে বাংলাদেশ হারছে না তা চতুর্থদিনে ইনিংস ঘোষণার সময়ই নিশ্চিত হয়ে যায়। যে বড় টার্গেট পড়ে তা করে জিততে হলে যে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হতো জিম্বাবুইয়েকে। চার সেশনে এই রান করা অসম্ভব। সেই অসম্ভব কাজটি না করতে পারলেও ড্র করার সম্ভাবনা ঠিকই ছিল। কিন্তু মিরাজ এমনই স্পিন জাদু দেখালেন, ৫ উইকেট শিকার করে নিলেন। তাতে জিম্বাবুইয়েও ২২৪ রানের বেশি করতে পারল না। মিরাজের ঘূর্ণিতে একের পর এক ব্যাটসম্যান কাত হতে থাকলেন। মাসাকাদজা, চারি চতুর্থদিনেই সাজঘরে ফিরেছিলেন। পঞ্চমদিনে এসে শুরুতেই উইলিয়ামসকে আউট করে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। এরপর সিকান্দার রাজাকে ফেরান তাইজুল। ১২০ রানের মধ্যে উইলিয়ামস ও সিকান্দার আউট হওয়াতেই ম্যাচের ভাগ্য বাংলাদেশের দিকে পুরোপুরি ঘুরে যায়। শেষ ৫ উইকেটের মধ্যে চারটি উইকেটই মিরাজ তুলে নেন। চাকাভা রান আউট হন। কিন্তু পিটার মুর, তিরিপানো, মাভুতা ও জার্ভিসকে আউট করে দেন মিরাজ। সবাইকে আউট করা গেলেও একজনকে আউট করা যায়নি। যিনি খানিক আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি টেইলর। টানা দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করে দেখালেন। এবার ১০৬ রানে অপরাজিত থাকলেন। ক্যারিয়ারে ছয়টি টেস্ট সেঞ্চুরির মধ্যে আবার পাঁচটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে করলেন। টানা দুইবার এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে দেখালেন তিনি। দুটিই আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে। এর আগে ২০১৩ সালে হারারেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন টেইলর। টেইলরকেই থামানো যায়নি। বাকি সবাইকেই রুখে দেয়া গেছে। পঞ্চমদিনের প্রথম সেশনে ২ উইকেট হারিয়েছিল জিম্বাবুইয়ে। রান করেছিল মোট ১৬১। উইলিয়ামস ও সিকান্দারকে আউট করা গেলেও টেইলর ও মুরকে আটকানো যাচ্ছিল। তাতে করে টেস্ট না আবার ড্র হয়ে যায়, সেই শঙ্কা খানিক তৈরি হয়। তবে ভরসাই ছিল বেশি। যে কোন সময় উইকেট পড়তে থাকলে, অলআউট হয়ে যাবে জিম্বাবুইয়ে। উইকেট স্পিন সহায়ক হয়ে গেলেই হলো। কিন্তু টেইলর ও মুর যে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় সেশন শুরু হওয়ার ১০ ওভার পর, স্পিন ধরতে শুরু করল, জিম্বাবুইয়ের ১৮৬ রানের সময় মুরকে যে আউট করে দিলেন মিরাজ; বাংলাদেশের জয় যেন কাছে চলে আসতে থাকল। দেখতে দেখতে পরের চারটি উইকেট ২২৪ রানেই শেষ হয়ে গেল। ইনজুরিতে পড়া চাতারা ব্যাট হাতে নামতে না পারায় জিম্বাবুইয়েও অলআউট হয়ে গেল। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস যে রানে থেকে ইনিংস ঘোষণা করেছে, জিম্বাবুইয়ে সেখানেই শেষ হলো। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস শেষে যে রানে এগিয়ে থাকে, সেই রানেই জিতে। বাংলাদেশ শিবিরেও স্বস্তি ফিরল। বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাও আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলেন। সব উইকেট পড়লেও টেইলর ঠিকই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলেন। ১৬৭ বলে ১০ চারে অপরাজিত ১০৬ রান করলেন। লড়াই করে গেলেন। কখনই দমে গেলেন না। তবে হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো টেইলরকে। দলকে হারা থেকে যে বাঁচাতে পারলেন না। তা সম্ভব হলো না আসলে মিরাজের অসাধারণ বোলিংয়ে। টেস্ট ক্যারিয়ারে পঞ্চমবারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করার কৃতিত্ব দেখালেন মিরাজ। এবার ৩৮ রান খরচায় ৫ উইকেট তুলে নিলেন। তার এই দুর্দান্ত বোলিংয়ে জিম্বাবুইয়েও দিনের দুই সেশনও শেষ করতে পারেনি। তার আগেই জিম্বাবুইয়ের দ্বিতীয় ইনিংসের দম ফুরায়। বাংলাদেশও সিলেট টেস্টে যে হোঁচট খেয়েছিল, মিরপুর টেস্টে এসে তা থেকে মুক্ত হলো। দ্বিতীয় টেস্ট বড় ব্যবধানে জিতে টেস্ট সিরিজ ড্র করল বাংলাদেশ।
×