ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথমবার সিরিজসেরা তাইজুল

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

প্রথমবার সিরিজসেরা তাইজুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সিলেট টেস্টে হারের পর মিরপুর টেস্টে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। তবে হারের ম্যাচেই বেশি জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠেছিলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেয়ার পর, দ্বিতীয় ইনিংসে শিকার করেন ৫ উইকেট। মিরপুর টেস্টে অবশ্য দল জিতলেও একই রূপে উজ্জ্বলতা ছড়াতে পারেননি। তবে প্রথম ইনিংসে ঠিকই ৫ উইকেট তুলে নেন এবং দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ২ উইকেটÑ সবমিলিয়ে সিরিজে ১৮ উইকেট। ক্যারিয়ারের সেরা সিরিজ কাটানোর পুরস্কার পেয়েছেন ধারাবাহিকভাবে ভাল করে। প্রথমবার হয়েছেন সিরিজসেরা খেলোয়াড়। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টেই এক ইনিংসে ৩৯ রানে ৮ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে এ ফরমেটে সেরা বোলিং নৈপুণ্যের রেকর্ড গড়েন তাইজুল। কিন্তু ২০১৪ সালের অক্টোবর-নবেম্বরে হওয়া ৩ টেস্টের সিরিজে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১৭ উইকেট নিলেও সিরিজের সেরা হতে পারেননি। জিম্বাবুইয়েকে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ করেছিল ব্যাটে-বলে দুর্ধর্ষ নৈপুণ্য দেখানো সাকিব আল হাসান। এরপর আর কোন সিরিজেই এতটা ভাল কাটেনি তাইজুলের। কিন্তু এবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে একেবারে ঝলসে উঠেছিলেন এ ২৬ বছর বয়সী নাটোরের ঘূর্ণি জাদুকর। অথচ সিরিজের আগে জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) তেমন সুবিধাই করতে পারছিলেন না। সিলেটে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে জিম্বাবুইয়ে বেশিদূর এগোতে পারেনি, তিনি ১০৮ রানে নেন ৬ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠে ৬২ রানে ৫ উইকেট নেন। এর ফলে টেস্টে মাশরাফি বিন মর্তুজার ক্যারিয়ারে তুলে নেয়া ৭৮ উইকেটের রেকর্ড পেছনে ফেলে দেন তাইজুল, উঠে আসেন বাংলাদেশের টেস্ট বোলিংয়ের ইতিহাসে তিন নম্বরে। তবে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় তার নৈপুণ্য ঢাকা পড়ে, দল হেরে গেলে ম্যাচসেরাও হতে পারেননি। মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের অতীব প্রয়োজন হয়ে পড়ে জয় তুলে নেয়া। জিম্বাবুইয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় সম্মান বাঁচানো এবং সিরিজ বাঁচানোর জন্য অত্যন্ত দরকার হয়ে পড়ে জয়। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ঝলসে উঠে ৭ উইকেটে ৫২২ রানের বিশাল সংগ্রহ পাইয়ে দেয়। জবাব দিতে নেমে তাইজুলের বিভীষিকাময় বোলিংয়ে ৩০৪ রানেই থমকে যায় জিম্বাবুইয়ের ইনিংস। ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো টানা তৃতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেন তাইজুল। সেটি ছিল সাকিব আল হাসান ও এনামুল হক জুনিয়রের পর তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টানা তিন ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের ঘটনা। সে কারণেই দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন তিনি প্রতিপক্ষ ও নিজ দলের ক্রিকেটারদের কাছে। এমনকি দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামার আগেও জিম্বাবুইয়ের কোচ লালচান রাজপুত বলেছেন, ‘আমরা যদি তাইজুলকে ভালভাবে মনোযোগ দিয়ে বলের কাছাকাছি গিয়ে ব্যাট চালাতে পারি সেক্ষেত্রে ড্র করা সম্ভব হতে পারে। সে দারুণ বোলিং করছে, তাকে মোকাবেলা করাটা আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।’ তবে সেই চ্যালেঞ্জটা জিম্বাবুইয়ের ব্যাটসম্যানরা ভালই মোকাবেলা করেছে। তাইজুলকে ২ উইকেটের বেশি নিতে দেয়নি। সবমিলিয়ে এই সিরিজে ২০.৫৫ গড় ও ২.৫৪ ইকোনমিতে ১৮ উইকেট নিয়েছেন। সিরিজে এর আগে সেরা ছিল ১৭ উইকেট। তবে ২০১৪ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সেই সিরিজটি ছিল ৩ ম্যাচের, এবার ২ টেস্টের। ২ টেস্টের সিরিজে সর্বাধিক ১৯ উইকেট মিরাজের, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৬ সালে। এছাড়া ২ টেস্টের সিরিজে সাকিবের দখলে আছে ১৮ উইকেট। দুটি রেকর্ড ছোঁয়ার সুযোগ থাকলেও তা আর সম্ভব হয়নি তাইজুলের, কারণ মিরাজ জ্বলে উঠে ৫ উইকেট নিয়েছেন এবার। তবে ধারাবাহিকভাবে ভাল বোলিং করে প্রথমবার সিরিজসেরার পুরস্কার পেয়েছেন তাইজুল। শুধু সাকিবই ৪ বার সিরিজসেরা হয়েছেন। আর মিরাজ, এনামুল জুনিয়র, জাভেদ ওমর, তামিম ইকবাল, রবিউল ইসলাম ও মুমিনুল হক ১ বার করে সিরিজসেরার পুরস্কার পেয়েছেন।
×