ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গল্প ॥ প্রেমের আলামত পাওয়া গেছে

প্রকাশিত: ০৭:৫৭, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

গল্প ॥ প্রেমের আলামত পাওয়া গেছে

মেয়েটি লাবণ্য। ভাবনার অতল সাগরে সামান্য একজন ডুবসাঁতারু মাত্র। এই মুহূর্তে জানালার গ্রিল ধরে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। গভীর চিন্তা-ভাবনায় মগ্ন। দৃষ্টি নিবদ্ধ একটু দূরের ওই ইউক্যালিপটাস গাছটার দিকে। যেটার ওপর দিয়ে ক্ষণকাল আগেও কাল বৈশাখীর ভয়ঙ্কর তা-বতা বয়ে গেছে। অথচ এখন কত শান্ত ও স্থির। বিধ্বস্তার চিহ্ন ফুটে ওঠা গাছটার সঙ্গে লাবণ্য নিজের কোথাও যেন একটা সাদৃশ্য খুঁঁজে পায়। চিকন সরু সরু পাতার আড়ালে খেলা করছে বৈকালিক মিষ্টি রোদ। যদিও সকাল থেকে চলেছে মুহুর্মুহু বজ্রপাতের সঙ্গে ভারি শিলা বৃষ্টির ধ্রুপদী নগ্ন নৃত্য। প্রচ- বৃষ্টির তোড়ে ভর আষাঢ়েও জেঁকে বসেছে মাঘের হাড়কাঁপানো শীত। গাছের ডালে একজোড়া শালিক পাশাপাশি উঞ্চতা ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। আজব দুনিয়ার বিচিত্র খেলা! যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব, সেখানেই উঞ্চতা, ছোঁয়াছুয়ি প্রেম। যখন তখন হুটহাট বেখেয়ালি মনে একগুচ্ছ ভাবনা-চিন্তার অস্থির পাখিরা ভিড় করে বসে। একটি পরিচিত মুখের প্রতিচ্ছবি বারংবার মনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে। মহিন ছেলেটাকে মনে পড়ে। ভাললাগার আবেশে আচ্ছন্ন হয় মন। মর্ত্যরে পৃথিবীতে বিমূর্ত রঙিন মুহূর্তগুলো তার সঙ্গে শেয়ার করতে মন চায়। উচ্ছলা ফড়িংয়ের মতো দুরন্তপনা ও বাঁধাহীন আনন্দে মেতে ওঠতে মন চায়। ছেলেটার মাঝে নিশ্চয় এমন কিছু একটা রয়েছে। ওর ব্যক্তিত্বে ঠাসা একচিলতে হাসিমাখা মুখটা ভেসে ওঠতেই লাবণ্য ঈষৎ কেঁপে ওঠে। মোচড় দিয়ে ওঠে হৃদয়ের গহীন বনে। শ্বাস-প্রশ্বাসের অস্থির অণুগুলোও দ্রুত সংকোচন ও প্রসারণের নামে ইঁদুরবিড়াল দৌড় খেলে। অথচ কত রঙবেরঙের পুরুষ লাবণ্য’র জীবনে এসেছে। সদা কত চরিত্রের চিত্রায়ন চিত্রিত হচ্ছে। দেহের বেসাতি করতে গিয়ে কত পুরুষের মিথ্যে প্রতিশ্রুতিও পেয়েছে। চোখের সামনে গালভরা বুলি ও রাশিরাশি স্বপ্নের মিথ্যে ফানুস উড়িয়েছে। অঞ্জলি উচিয়ে রাজ্যের লোভ ও প্রলোভন দেখিয়েছে। ঘরের বউ বানাবে, রানী বানাবে। প্রগাঢ় ভালবাসায় প্রেমাতুুর হৃদয়ে এলোকেশী খোপায় লাল রক্তজবা ফুল গুঁজে দেবে, নরম ও পেলব দুপায়ে রঙিন আলতার প্রলেপ লাগিয়ে দেবে- আরও কত কী! কিন্তু খেলারাম খেলে যার মতো দেহের পিয়াস মিটে গেলে মুহূর্তে পাষ-গুলো ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। যে চোখে কিছুক্ষণ আগেও ক্ষরিত প্রেমের ফোটা টপাটপ আর্দ্রতায় নুয়ে পড়েছে, সেখানে তখন আগ্নেয়গিরির উপ্তপ্ত লাভা নির্গত হতে দেখা যায়। ঘৃণার চিহ্ন ফুটে ওঠে চোখে-মুখে। সাদা কাগজের দাম থাকে বৈকি কিন্তু লাবণ্যর তখন দুপয়সারও দাম থাকে না। মহিন ছেলেটা অবশ্য খদ্দের নয়। অত্যন্ত ভদ্রগোচের একজন সুঠাম শান্ত ছেলে। পরিচয় হয়েছে ফুড়ুৎ করে কিছুটা কাকতালীয়ভাবে। যথেষ্ট হ্যান্ডসাম ও লাজুক। চোখগুলো অসম্ভব সুন্দর। শহরের এক বিপণিবিতানে অনেকটা নাটকীয়ভাবে পরিচয় হয়। পেটে ভাত থাকুক আর না থাকুক লাবণ্যকে প্রায় নিয়মিতই শপিং করতে হয়। পুরুষ খদ্দেরদের আকৃষ্ট করতে কতো নিত্যনতুন ডিজাইনের বিকিনির পসরা সাজাতে হয়। দেহের সৌন্দর্যের সঙ্গে আজকের যুগে বাড়তি আর্টিফিশিয়াল সৌন্দর্যটুুকুও লাগে। তারওপর লেটেস্ট কালেকশন না হলে খদ্দেরের মুখ রুচে না। উগ্র সাজের সঙ্গে পরিপাটি মেকাপ ও দামী কড়া সুগন্ধিও চাই। এই যুগের পুরুষগুলো হচ্ছে এক একটা আস্ত নচ্ছার। বদের হাড্ডি। এটা নয়, ওটাতে তোমাকে মানাবে। এটা পরে আস কিংবা ওটা পরে আস। ব্রায়ের কালারটা এই রঙের কেন, ওই রঙেরটা নাও। প্যান্টি সাদা পছন্দ নয়, কালোটা পড়ে এসো। ঘরের বউকেও কেউ এতটা হুকুমজারি করার সাহস পায় না। পিটিয়ে এক্কেবারে ছাল তুলে ফেলবে। যত্তসব আদিখ্যেতা ও অদ্ভুত বিকৃত ফ্যান্টাসি দেখায় এখানে এসে। একবার ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধ আসে লাবণ্যের কাছে। লুঙ্গির কাছা খুলে কড়কড়ে টাকার বান্ডিল ছুড়ে দেয় তার দিকে। ‘এ্যাই ছেমড়ি কাছে আয়, আরও টাকা পাবি’ কাছে এগিয়ে আসতেই ভক করে উৎকট দুর্গন্ধ বেরিয়ে আসে লোকটার মুখ থেকে। দাঁতগুলো আরবীয় পাকা খেজুরের মতো লাল। এই জীবনেও বোধ হয় ছাই পেস্ট পড়েনি দাঁতে। লাবণ্য বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। এগোয় না। ঝাঁজালো দুর্গন্ধে টেকা দুস্তর। পেট গুলিয়ে বমি আসে। নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসার জোগার। ‘কীরে ঢেমনি! দেমাগ দেহাস ক্যান? কাছে আয় বলছি! আরও ম্যালা টাকা পাবি!!’ লাবণ্য ভ্যাবাচ্যাকা খায়, অস্ফুটস্বরে বিড়বিড় করে, ‘তুই ঢেমনা বানচুত, তোর চৌদ্দগোষ্ঠী ঢেমনা’ তবুও ওড়নায় নাক চেপে কোন মতে এগিয়ে যায়। গায়ে একটা হাল্কা নীল রঙের হাঁটু অবধি ঝোলা নাইটি-খুব পাতলা। ভেতরে একই রঙের ম্যাচিং করা সরু স্ট্রিপের ব্রা আর প্যান্টি। বৃদ্ধ লোমশ হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে। এক ঠ্যাং কবরে গেলে কী হবে শরীরে অসুরের মতো শক্তি। ময়দার মতো খাবলে খাবলে দলা পাকাতে থাকে লাবণ্যের একরত্তি ছোট্ট দেহটার। ঘৃণায় ও যন্ত্রণায় মুখ বেঁকে আসে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার আসি আসি করেও আসে না। কোথাও যেন দলা পাকিয়ে আটকে যায়। একেকবার ইচ্ছে হয় বুড়ো বজ্জাতটার মুখে থুথুর দলা ছিটাতে। হারামজাদাটা মেরেই ফেলবে বোধহয়। নারীদেহটা নিয়ে সবাই মজে থাকতে চায়, কেউ কখনও মনের দুঃখটুকু বুঝতে চায় না। পেটের খাদ্য থলিতে সারাদিনে দানাপানি কিছু পড়েছে কী-না, সেই খবরটুকুও কেউ নিতে চায় না। অগত্যা রসকষহীন প্রাণহীন দেহটা এক প্রকার বাধ্য হয়ে সপে দিতে হয় সমাজের মুখোশধারী এইসব হিংস্র নরপশুদের কাছে। লাবণ্য ভাবনার আরও গভীর অতলে হারিয়ে যায়। ঘরে অসুস্থ বৃদ্ধা মা ও দুদুটো ছোট ভাইবোন। ওদের ভরণপোষণ, পড়ালেখা ও চিকিৎসা। কতো কী খরচ। অথচ যত মরণদশা হয়েছে তার। পিতৃহারা লাবণ্য তবুও সমাজে মাথা উঁচু করেই অন্যদশটা মেয়ের মতই মানসম্মানে বেঁচে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু পরিবর্তিত সমাজ ও সমাজের কিছু বিষাক্ত কীট লাবণ্যকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার ছলে জোর করে এই জঘন্য পথে নামিয়েছে। ক্ষোভ আর ঘৃণার বিষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে তার নারীত্বের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে। নীরবে নিবৃত্তে ফালি ফালি হয়েছে তার আহত মন। ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত হয়েছে রক্তে মাংসের একরত্তি দেহখানা। দেহের ওপর পাশবিকতার আঁচড়গুলো নিদেনপক্ষে কোন ক্ষুধার্ত হিংস্র নেকড়েকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। লাবণ্য আজকাল এসব ভাবতে চায় না। ভেবে লাভও নেই। এটুকু বুঝে গেছে, নারী মাত্রই ভোগ্যবস্তু। ভোগের রসনাবিলাসে নারীকে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করছে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। কথায় কথায় নারী অধিকার ও নারী সুরক্ষা নিছক গালভরা মিথ্যে বুলি বা প্রতিশ্রুতি মাত্র। লাবণ্য বরং মহিনকে নিয়ে-ই ভাবতে চায়। ছেলেটাকে স্রোতের বিপরীতে ভেসে চলা একখ- ভেলা মনে হয়েছে। যাকে আঁকড়ে ধরা যায়। বিশ্বাস ও অবলম্বন করা যায়। সংগত কারণে তাকে ভাবতে ভাললাগে। এক অজানা অচেনা ভাললাগা ঢেউ খেলে যায় মনে। সেদিন শপিংমলে লাবণ্যকে দেখে মহিনই প্রথম পেছন থেকে ডেকে ওঠে। ‘এ্যাই প্রথমা! দাঁড়াও..দাঁড়াও বলছি!!’ শপিংমলে বহু মানুষ। প্রথমাকে ডেকেছে বলে লাবণ্য পেছনে ফিরে তাকাবে কেন। লাবণ্য দোকানির সঙ্গে জিনিসপত্রের দরদস্তুর নিয়েই ব্যস্ত। হঠাৎ পেছন থেকে কোন একজনের মায়াবী স্পর্শ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাবণ্যের চোখ দুটি দুহাতে পেছন থেকে মৃদু চেপে ধরে। ‘বলতো সোনাকে আমি?’ ‘একি (!) কে আপনি? কে!?’ গলার স্বর শুনে মহিন এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নেয়। মনে মনে ভাবে প্রথমার গলার স্বর তো এমনটি নয়। তবে কি অবিকল প্রথমার মতো দেখতে অন্য কেউ!? কিন্তু কে সে? বুঝতে পারে কেলেঙ্কারি কিছু একটা হয়ে গেছে। মহিন লজ্জায় দাঁতে দাঁত কাটে। লাবণ্য ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে ফিরে তাকায়। শীতল গলায় প্রশ্ন করে। কে আপনি বলুন তো? পেছন থেকে আমাকে এভাবে চেপে ধরলেন কেন? ‘সরি, ইয়ে মানে..আমার ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন?’ লাবণ্য বুঝতে পারে পুরো বিষয়টাই কাকতালীয়। তবুও মাথায় হঠাৎ অদ্ভুত এক দুষ্টুমি ভর করে বসে। এমনিতেই জীবনের উচ্ছ্বাস, সুখ-শান্তি ও অনাবিল হাসি আনন্দ প্রায় একপ্রকার মরেই গেছে। মরিচীকার মতো যেটুকু মাঝেমধ্যে উঁকিঝুকি মারে সেটুুুকুও মিথ্যে। তবুও খেয়ালিমন চট করে সিদ্ধান্ত নেয় লোকটাকে একটু বাজিয়ে নিলে কী আর এমন ক্ষতি? দেখাই যাক না। পানি কতদুর গড়ায়। ‘এই যে মশাই, এখন তো শুধু শুধু সরি বললে হবে না!’ ‘জ্বি,মানে..?’ ‘একটা অপরিচিত মেয়ে মানুষের শরীরে বলা নেই কওয়া নেই, সরাসরি হাত চালিয়ে দিলেন?’ ‘ক্ষমা চাই। আসলে আমি বুঝতে পারিনি। আপনি অবিকল প্রথমা‘র মতো!’ ‘সেকি (!) প্রথমা আবার কে?’ মহিন লজ্জায় ভেঙে পড়ার জোগাড়। কোন রকমে বলে, ‘প্রথমা আমার বন্ধু’ ‘গার্ল ফ্রেন্ড?’ ‘হুঁ’ ‘আই সি..! ওকে, আপনাকে ছেড়ে দিতেই পারি। কিন্তু ছোট্ট একটি শর্তে!’ ‘শর্ত! আচ্ছা কী শর্ত,বলুন?’ ‘আপনার সততার পরীক্ষা নেব। কাল যথারীতি আপনাকে এখানে আবারও আসতে হবে। ক্ষমার বিষয়টি তখন না হয় ভাবা যাবে। নচেৎ বুঝব আপনি ইচ্ছে করে ঘটনাটা...’ ‘ওকে ডান। কথা দিলাম। আমি আসব।’ মহিন কথা রেখেছিল। পরদিন যথাসময়ে ছেলেটি হাজির হয়। লাবণ্য এসে মহিনকে একটি বেঞ্চে বসে থাকতে দেখতে পায়। মেরুন রঙের টি-শার্ট এর সঙ্গে হালকা নীল জিন্স। দারুণ মানিয়েছে। হাসি বিনিময় করে দুজন। তারপর পাশেই একটা কফিশপে ঢুকে পড়ে। পাশাপাশি বসে। ঘণ্টা কালব্যাপী কথাবার্তা হয় দুজনের মাঝে। আলাপচারিতায় লাবণ্য জেনে নেয় মহিন একটা পত্রিকা অফিসে চাকরি করে। ভাল মাইনে। গল্পের ছলে জেনে নেয় তার সঙ্গে প্রথমার গাঢ় সম্পর্কের বিষয়টি। প্রথমা মেয়েটি নিঃসন্দেহে ভাগ্যবতী। মহিনের মতো একটা লক্ষ্মীমন্ত ছেলে পেয়েছে। লাবণ্য পুরুষ বিদ্বেষী হলেও হীরে চিনতে ভুল করেনি। লাবণ্য পরিষ্কার এও বুঝতে পারে, মহিন আর প্রথমার মাঝখানে সে ছোট্ট একটা সেমিকোলন মাত্র। ব্যবহার না হলেও খুব একটা ক্ষতি নেই। স্রেফ ক্ষণিকের অনাহুত অতিথি। থাকা না থাকার সমান। আড্ডার ছলে নিজের অন্ধকার জীবনটা কৌশলে এড়িয়ে যায় লাবণ্য। মহিনকে জানতে দেয়নি। ছেলেটির সরলতা ও ব্যক্তিত্বে মুহুর্মুহু মুগ্ধ হয় সে। সেই থেকে মহিনের সঙ্গে লাবণ্যের একটা অলিখিত স্বাভাবিক সম্পর্ক চলতে থাকে। মাঝে মধ্যে দেখা সাক্ষাতটুকুও হয়। কাছাকাছি হয়। ছোঁয়াছুইও হয়। সাদামাটা বন্ধুত্বটুকুই। ব্যস্ এরচে বেশি কিছু নয়। মহিন পুরোপুরিভাবে মজে রয়েছে প্রথমাতে। শক্ত বন্ধনে গেঁথে রয়েছে দুজনের সম্পর্ক। তবুও লাবণ্য মনকে বুঝাতে পারে না। কোথাও যেন ছেলেমানুষি হয়। বোবা কান্নায় কেঁদে ওঠে মন। উথলে ওঠে প্রেম। প্রেমের কুঞ্জবনে অবাধ্য দুষ্টু কোকিলটা কুহু কুহু করে ডেকে ওঠে। খোলা আকাশের নিচে পথের পর পথ ছেলেটির হাত ধরে পাশাপাশি হেটে যেতে মন চায়। উচ্ছল ফড়িং এর মতো উড়ে যেতে মন চায় দৃষ্টির সীমানা ছাড়িয়ে। কখন যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে আসে লাবণ্য টেরি পায়নি। বড় একখান নিঃশ্বাস ছাড়ে লাবণ্য। মনে মনে ভাবে লাবণ্যদের প্রেমের খায়েশ থাকতে নেই। এমনটা ভাবাও যে পাপ। বরং মহিনের সঙ্গে যেটুকু রয়েছে তাতেই ঢের। রাতের আঁধারে রং নিয়ে যত খেলা লাবণ্যের, কিন্তু নিজের জন্য এতটুকুন রংও অবশিষ্ট নেই। মহিন লাবণ্যের রংহীন জীবনে কিঞ্চিৎ রঙের ছটা মাত্র। সমাজ ও বাস্তবতায় সম্ভব না হলেও কল্পনায় মহিন রোজই আসে। সেখানে বাঁঁধা-বিপত্তিহীন এক স্বপ্নিল আপন ভুবন গড়ে তুলেছে লাবণ্য। সেখানে সেই সর্বেসর্বা। কোন প্রথমার অস্তিত্ব-ফস্তিত্ব নেই। নিরেট বাস্তবতার চোরাগলিতে যদিও এসব রং ও ভাবাবেগের কোন মূল্য নেই। এখানে বেঁচে থাকার নিরন্তর সংগ্রামে দিনশেষে কামনার জৈবিক চাহিদাটুকুই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। কাল বৈশাখের উন্মত্ততা ছাপিয়ে পশু খায় পশুর মাংস, মানুষ মানুষের। যুগে যুগে মাংসের প্রতিই যত কামনা বাসনা ও লোভ। ভেতরের মানুষটাকে নিয়ে নয়।
×