ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হ্যাশ ট্যাগ মি টুর ব্যানারে প্রতিবাদী নারীরা

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

হ্যাশ ট্যাগ মি টুর ব্যানারে প্রতিবাদী নারীরা

বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) তে কাজ করে আসমাউল হুসনা নামের একটি সাবলীল, প্রাণচঞ্চল মেয়ে। সিপিডি মানেই প্রচলিত ব্যবস্থার উন্নয়ন, অধোগতি কিংবা দেশের সামগ্রিক অবয়বের বিজ্ঞাপনভিত্তিক জরিপ। এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিজেকে সম্পৃক্ত করার পরও তাকে শারীরিক সহিংসতার শিকার হতে হয়। আর এই অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগ জীবনকে কতখানি শিহরিত এবং অসহনীয় করে তোলে তা বুঝতে গেলে পরিস্থিতির আবর্তে দৃষ্টি ফেরাতে হয়। এই প্রত্যয়ী এবং সচেতন মেয়েটি যেভাবে নিজের জবানিতে জীবনের দুঃসহ ঘটনাটি বর্ণনা দেয় তা শুধু অসম সাহসিকতার পরিচয়ই নয় অত্যাচারী, পাশবিক মানুষের জন্য একটি প্রতিবাদী বার্তাও। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে মেয়েরাও সময়ের বলিষ্ঠ পথিক। তারা অধিকার সচেতন, প্রতিবাদী এবং প্রতিপক্ষের দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও রাখে। নীরবে, নিঃশব্দে সয়ে যাওয়ার দিন এখন প্রায়ই শেষ। সময়ের স্রোতে তারা শুধু দুঃসাহসীই নয় পরিস্থিতি বিবেচনায় আত্মরক্ষার তাগিদে সোচ্চার হওয়া ছাড়াও এমন জঘন্য অপকর্মকে জনসমক্ষে নিয়ে আসতে একেবারে দ্বিধাহীন। বিবেকহীনতায় যে অমানবিক হিংস্রতা পশুত্বকে জাগিয়ে তোলে তাকে প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে নারীরা আজ সম্মিলিতভাবে ঐক্যবদ্ধ। মিটু নামে এই অশুভ বার্তাটি নারীদের আতঙ্কিত করার পরিবর্তে অনমনীয় প্রতিবাদের আওয়াজ তোলা হচ্ছে। এমনই একটির প্রতিবাদী, সাহসী কণ্ঠ আসমা-উল হুসনা। বাংলাদেশের মতো একটি ঐতিহ্যিক সমাজ যেখানে আজো ‘লজ্জাই নারীর ভূষণ’ এই বার্তা মানুষের ঘরে ঘরে। সেখানে একজন দুঃসাহসী মেয়ে তার লজ্জাহরণের কথা যেভাবে গণমাধ্যমে উম্মোচন করে তা যদি নরপশুদের কিছুটা হলেও শায়েস্তা করতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আত্মপ্রত্যয়ী এই নারী উদ্দীপ্ত চেতনায় নারী নিপীড়কদের যে মাত্রায় বিবেকের কাঠগড়ার দাঁড় করায় সেখানে আইনানুগ বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। সমস্ত ঘৃণ্য নৃশংস অপরাধকে যদি শাস্তির মাধ্যমে সুরাহা করতে হয় তাহলে মানুষের ভেতরের মানবতাকেও সমানভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। যে কোন পুরুষের জীবনে প্রথম নারী তা মা কিংবা বোন। এরপরে স্ত্রী এমনকি কন্যা সন্তানের বাবা হয়েও মেয়েদের প্রতি সামান্যতম সম্মানবোধ জেগে না ওঠা সভ্যতা বিবর্জিত যুগেও ছিল কিনা জানি না। জ্ঞান বিজ্ঞানের সীমাহীন অগ্রযাত্রার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনে তথ্য প্রযুক্তির নিরন্তর অভিগমনে সভ্যতা সূর্য আজ মধ্য গগনে। কিন্তু চেতনায়, মানসিকতায় শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল নারী জাতির প্রতি সহিংস এবং পশুর মনোবৃত্তিতে এই উদ্দীপ্ত সূর্য আজ অস্তমিত পর্যায়ে। বিশ্বজুড়ে চলছে এমন অশোভন, বিকৃত, অমানবিক মূল্যবোধের আস্ফালন। নারীর প্রতি এমন অযৌক্তিক হামলার প্রতাপশালী পুরুষরা সমাজে প্রতিষ্ঠিতই শুধু নন ব্যক্তি জীবনেও একজন খ্যাতিমান মানুষ। যারা ভদ্রতার মুখোশ পরে সমাজ সংসারে নিজেদের দাপট অব্যাহত রাখেন যেমন প্রকাশ্যে দিবালোকে একইভাবে আড়ালে, আবডালে, অন্তরালেও। মিটু আবার এই সব দুশ্চরিত্রের সত্যিকারের চেহারাটাও সবাইকে দেখিয়ে দিচ্ছে। এই লজ্জা শুধু মেয়েদের নয় যারা নিপীড়কের ভূমিকায় নেমে অন্যের মর্যাদাহানি করে তাদেরও। এবার প্রতিবাদী মেয়েরা আশঙ্কা করে সাবধান করতে চাইছে সেই সব নরপশুকে যাতে তাদের মেয়েকেও যেন কোন দিন মিটুর মধ্যে আসতে না হয়। জানিনা আপাত সুস্থ, সভ্য সমাজের ভদ্রলোকের এমন অসুস্থ আর অসভ্য মনোবিকৃতির শিকার হয়ে মা কিংবা মেয়ের আদলে পুরো নারী জাতির ওপর সহিংসতার আক্রমণ কিভাবে সম্ভব? মিটুর বার্তায় নারী গোষ্ঠীকে সচেতন করে তুলে এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস এবং শক্তি অর্জন করতে হবে আসমাউল হুসনার মতো। লোকলজ্জাকে অতিক্রম করতে হবেÑ এমন পাশবিক অপকর্মকে পর্দার আড়ালে আর রাখা যাবে না। লজ্জাহরণের অপঘাতকে ঠা-া মাথায়, সুচিন্তিত অভিব্যক্তিতে সবার নজরে এনে দিতে হবে। তা না হলে মানসম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকারটুকুও আমরা হারিয়ে ফেলব। মাথা উঁচু করে, সাহসের সঙ্গে দীপ্তচেতনায় সমস্ত অন্যায় অবিচারকে ধুলায় লুণ্ঠিত করে প্রতিপক্ষকে সমুচিত জবাব দিতে হবে। এমন ধরনের অশুভ, সহিংস ঘটনার শিকার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অসংখ্য নারী প্রতিনিয়তই এর পঙ্কিল আবর্তে নিপতিত হচ্ছে। সবাইকে সেই, কঠিন চক্রব্যুহ থেকে বের হয়ে এসে নিজের সম্মান বাঁচানোর তাগিদে লড়াই করে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই। নিজেকে নিজে রক্ষা করা থেকে শুরু করে প্রতিবাদ, প্রতিহত এবং প্রতিকারের সমস্ত উপায় খুঁজে বের করতে হবে। শুধু সমাজ, আইন, ধর্ম কিংবা রাষ্ট্রের ওপর সব দায়ভাগ চাপিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকলে এসব অনাহূত, অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগের কোন সুরাহা হবে না। সমাজের অভ্যন্তরে সর্বক্ষেত্রে এর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের চাইতে নিজের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। সচেতন মনস্তত্ত্ব, অধিকার বোধ এবং নিজের ওপর আস্থা আর বিশ্বাসের মাপকাঠিতে প্রতিপক্ষের পশুর আচরণকে উপস্থিতভাবে প্রতিহত করতে হবে। নারীরা মায়ের জাত-কন্যাসন্তানের প্রতিনিধিÑ তাদের গায়ে অশুভ ছোঁয়া লাগার আগেই উৎপীড়ক, অমানুষকে একবার ভাবতেই হবে। তা না হলে এই পঙ্কিল জগত তাকেও নানা মাত্রিকে বিদ্ধ করবে। সেও রেহাই পাবে না।
×