ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্রে শহীদ হন ইতালির ফিয়াট-প্রধানের একমাত্র পুত্র অ্যানিলি

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্রে শহীদ হন ইতালির ফিয়াট-প্রধানের একমাত্র পুত্র অ্যানিলি

অনলাইন ডেস্ক ॥ ২০০০ সালের ১৫ নভেম্বর ইহুদিবাদীদের ষড়যন্ত্রে শহীদ হন ইতালির ফিয়াট কোম্পানির মালিকের একমাত্র পুত্র নওমুসলিম মাহদি এডওয়ার্ডো অ্যানিলি। তুরিন শহরে তার গাড়ি ও লাশ পাওয়া যায়। এডওয়ার্ডো জন্ম নিয়েছিলেন নিউইয়র্কে। তার মা দনা মারেল্লা কারাক্কিওলো দি ক্যাস্ট্যাগনেটো ছিলেন ফ্লোরেন্সের রাজকন্যা। তার দাদী ছিলেন একজন আমেরিকান। আধুনিক সাহিত্য ও প্রাচ্যের দর্শন বিষয়ের ছাত্র ছিলেন এডওয়ার্ডো অ্যানিলি। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সময় নানা ধর্মের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করেন এবং এ মহাগ্রন্থ পুরোপুরি পড়ার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ও নিজের নতুন নাম রাখেন হিশাম আজিজ। এরপর তিনি ভ্রমণ করেন ভারত ও সেখান থেকে ইরানে আসেন। হিশাম আজিজ ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এ সাক্ষাতের খুব অল্প সময় পরই বিশ্বনবী (সা)’র পবিত্র আহলে বাইতের আদর্শে প্রভাবিত হয়ে ১২ ইমামী শিয়া মুসলিম মাজহাব গ্রহণ করেন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী বা মালিক হিসেবে বিবেচিত এডওয়ার্ডোর এই পদক্ষেপে বিচলিত হয়ে পড়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী, ইহুদিবাদী ও ইসলামের শত্রু শিবিরের অন্যান্য মহল। বিশেষ করে এডওয়ার্ডো অ্যানিলি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করায় এবং তার পেছনে জুমা নামাজ আদায় করায় ইসলামের শত্রুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ফিয়াটের বার্ষিক আয় ইরানের এক বছরের তেলের আয়ের চেয়েও অনেক বেশি। এই কোম্পানি গাড়ি ও হেলিকপ্টারসহ নানা শিল্প-পণ্য উৎপাদন করে। এ ছাড়াও ইতালির নামকরা একটি ফুটবল ক্লাবের মালিক এই কোম্পানি। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি ও মতাদর্শের প্রতি বিতৃষ্ণ এডওয়ার্ডো ইরানে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে চেয়েছিলেন এবং ইরানের ধর্মীয় শহর কোমের ধর্মতাত্ত্বিক কেন্দ্রে পড়াশুনার পরিকল্পনাও নিয়েছিলেন। ফিয়াট কোম্পানিকে কুক্ষিগত করতে ইহুদিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী মহল অ্যানিলির ইহুদিবাদী ভাগিনা জন ইলকানকে ফিয়াট কোম্পানির মালিক গিয়ান্নি অ্যানিলির উত্তরাধিকারী বলে ঘোষণা করে। কিন্তু প্রতিবাদ জানান এডওয়ার্ডো। এরপর একটি সেতুর নীচে লাশ পাওয়া যায় মাহদি এডওয়ার্ডোর। তার বয়স হয়েছিল ৪৬ বছর। তড়িঘড়ি ও লোক-দেখানো এক তদন্তের পর প্রচার করা হয় যে, এডওয়ার্ডো অ্যানিলি আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়াও এর আগে প্রচার করা হয় যে, এডওয়ার্ডো মানসিকভাবে সুস্থ নন। কিন্তু নানা সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এটা স্পষ্ট হয় যে, ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। এডওয়ার্ডো নিজেও বার বার এ আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছিলেন যে, তাকে হত্যা করা হতে পারে। এডওয়ার্ডোর হত্যা রহস্য নিয়ে নতুন করে তদন্তের আবেদন বার বার জানানো হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতে কান দেয়নি এবং পশ্চিমা প্রচারযন্ত্রগুলোও ইহুদিবাদীদের পক্ষ নিয়েছে। এডওয়ার্ডো অ্যানিলি যে মুসলমান হয়েছিলেন সে বিষয়টিও অস্বীকার করা হয়েছে ফিয়াটের নতুন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। ২০০৩ সালে মাহদি এডওয়ার্ডো অ্যানিলিকে নিয়ে ইরানে একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। তেহরানে শহীদদের জাদুঘরে তার নাম যুক্ত করা হয়েছে মহান শহীদদের তালিকায়। এডওয়ার্ডো ইরানে সফরের বিষয়ে তার একটি চিঠিতে লিখেছিলেন: দয়ালু ও দাতা আল্লাহর নামে (শুরু করছি) ইতালি প্রজাতন্ত্রের এক নাগরিক (এডওয়ার্ডো অ্যানিলি ওরফে হিশাম আজিজ) আজ ইমাম খোমেনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ও শিয়া মুসলমানদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য সে ইরানে এসেছে। আধুনিক যুগে ইরানের ইসলামী বিপ্লব মহান আল্লাহর নামে ও আদর্শিক ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত যেসব অগ্রগতি অর্জন করেছে সে জন্য এ বিপ্লবের নেতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সে। -হিশাম আজিজ মরহুম ইমাম খোমেনী নও-মুসলিম হিশাম আজিজের প্রতি স্নেহ ও শ্রদ্ধা জানিয়ে তার কপালে চুমো দিয়েছিলেন।
×