ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় আজ বিবর্তনের নাটক ‘ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন’

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 শিল্পকলায় আজ বিবর্তনের নাটক ‘ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির অন্যতম পুরাধা ব্যক্তিত্ব উপমহাদেশের খ্যাতিমান সাহিত্যিক, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তার ছিল আত্মার সম্পর্ক। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত স্থান শিলাইদহ সেই সর্ম্পকের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। জানা যায়, এখানকার তৎকালীন সর্বক্ষেপী বোষ্টমীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। বোষ্টমীকে নিয়ে লেখা বোষ্টমী গল্পের এক স্থানে তিনি বলেন, ‘এতদিন পরে নিজের দৃষ্টির অহঙ্কার ত্যাগ করিয়া এই শাস্ত্রহীন স্ত্রীলোকের দুই চক্ষুর ভেতর দিয়া সত্যকে দেখিলাম’। বোষ্টমীর মাধ্যমে কি সত্য উপলব্ধি হয়েছিল তার? বোষ্টমী রবীন্দ্রনাথকে গৌরসুন্দর বলে সম্বোধন করতেন। কেমন ছিল তাদের সেই সম্পর্ক? বিবর্তন যশোরের ঢাকা ইউনিটের ‘ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন’ নাট্য প্রযোজনায় তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে আজ সন্ধ্যা ৭-৪৫ মিনিটে ‘ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন’ নাটকটি মঞ্চস্থ হবে। সাধনা আহমেদ রচিত নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন ড. ইউসুফ হাসান অর্ক। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন সাধনা আহমেদ, ইউসুফ হাসান অর্ক, মৃন্ময় চক্রবর্তী, জেরিন তাসনীম এশা, শেখর ব্যানার্জী, প্রিতী, সাইফ ম-ল, মনোজ সমাদ্দার, মনিরুল ইসলাম, অর্পিতা সিকদার তুলি, মকছুম পারভীন কলি, সায়ন সৌভিকসহ অনেকে। নাটকের সঙ্গীত প্রয়োগ শ্রাবাণী ব্যানার্জী, বিমল দাশ ও মিথুন। ‘ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন’ নাটকের গল্পে তুলে ধরা হয়েছে সংসারে থেকেও বাউলপনায় কেঁদে মরেছে যে রবীন্দ্রনাথ, আলখাল্লা পড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন, একতারা হাতে বাউলরূপের এঁকেছেন নিজেকে, তার ভেতরের সেই বাউল রবীন্দ্রনাথ কেমন ছিল? ধর্ম কি শুধুই প্রাতিষ্ঠানিকতা? যদি প্রাতিষ্ঠানিকতাই ধর্ম হয়, তবে পৃথিবীজুড়ে যে এত এত প্রতিষ্ঠানিক ধর্ম, ধর্মালয়, সেগুলো মানুষকে কতটা মানবিক করতে পেরেছে। মানুষের অন্তর্গত মুক্তি কোথায়? নর-নারীর প্রেমেরে মুক্তি কোথায়? নাটকে নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্তর্গত বাউল রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার করার চেষ্টা এই প্রযোজনা নাটক ‘ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন।’ জীবনভর সাধনায় রবীন্দ্রনাথ এক সর্বমানবিক দার্শনিকতায় মুক্তির পথ অন্বেষণ করেছিলেন। সেই পথ সহজিয়া সাধনার পথ, মরমি অনুভব আর উপলব্ধির পথ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন নানা দ্বন্দ্বে নানা ধোঁয়াশায় আমরা সত্য সাধনার পথকে আচ্ছন্ন করে রেখেছি। মানবিক সংসারে রবীন্দ্রনাথ কতভাবেই না মানুষ রতনকে সন্ধান করে ফিরেছে। চিত্রাকাব্য গ্রন্থের ভূমিকাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, আমার একটি যুগসত্তা অনুভব করেছিলাম, যেন যুগ্ম নক্ষত্রের মতো। এই সাধনায় এক আমি যন্ত্র আর দ্বিতীয় আমি যন্ত্রী। দ্বিতীয় এই যন্ত্রী আসলে কে? শিলাইদহে জামিদারি পরিচালনা করতে এসে, সেখানকার বাউলদের সঙ্গে গভীর যোগাযোগের মাধ্যমে লালন সাইজির সম্পর্কে গভীরভাবে জেনেছিলেন তিনি। মনের মানুষ, সহজ মানুষ অথবা সেরূপ রবীন্দ্রনাথকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল। লালনের মনের মানুষ রবীন্দ্রনাথের জীবন দেবতা। দুজন কি স্বতন্ত্র মানুষ? নাকী একই মানুষ? স্বতন্ত্র হলে কোথায় ছিল স্বতন্ত্রতা? আর এক হলে তা কোথায় এসে মিলেছিল। ‘ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন’ নাটকে এমনি নানা প্রশ্নের উত্তর মিলবে।
×