ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রাশিল্প বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ॥ তাপস সরকার

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 যাত্রাশিল্প বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ॥ তাপস সরকার

অভিনয়শিল্পী তাপস সরকার। যাত্রা ও নাট্যমঞ্চ থেকে শুরু করে টিভি এবং বেতার নাটকেও অসাধারণ অভিনয় করে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন। ঢাকা লোকনাট্য গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থেকে মঞ্চকে আলোকিত করার পাশাপাশি অভিনয় জীবনে যাত্রাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে আসছেন এই শিল্পী। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে হয়ে গেল তিন দিনব্যাপী নাট্যোৎসব। এ উৎসবের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। উৎসব ও অভিনয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয় । এবারের উৎসব সম্পর্কে বলুন। তাপস সরকার : দলটির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হয়। শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনানুষ্ঠান ছাড়াও তিন দিনে তিনটি নাটক মঞ্চায়ন হয়েছে। এগুলো হলো ‘অন্ধকারের নিচে সূর্য’, ‘কুরুক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণ’ ও ‘চম্পাবতী’। উদ্বোধনী দিন সন্ধ্যায় মঞ্চায়ন হয় অগ্নিদূতের রচনা এবং আমার নির্দেশনায় লোকনাট্য গোষ্ঠী প্রযোজিত নাটক ‘অন্ধকারের নিচে সূর্য’। অসংখ্য নাট্যামোদী দর্শকের সমাগম হয় উদ্বোধনী সন্ধ্যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চায়ন হয় লোকনাট্য গোষ্ঠী প্রযোজনা সত্যপ্রকাশ দত্ত রচিত শ্যামল দত্ত সম্পাদিত এবং আমার নির্দেশিত নাটক ‘কুরুক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণ’। এর আগে ছিল সংক্ষিপ্ত আলোচনানুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক ড. অসীম সরকার, ড. তপন বাগচী ও নাট্যজন লাকী ইনাম। উৎসবের শেষ দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় মঞ্চায়ন হয় শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র প্রযোজনা নাটক ‘চম্পাবতী’। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের বেদের মেয়ে গল্প অবলম্বনে নাটকটি লিখেছেন সৈয়দ শামসুল হক এবং নির্দেশনা দিয়েছেন খোরশেদুল আলম। এবারের উৎসবে গুণীজন সংবর্ধনা সম্পর্কে বলুন। তাপস সরকার : বিভিন্ন মাধ্যমে বিশেষ অবদান রাখায় এবার দেশের সাতজন গুণীকে আমরা সংবর্ধনা দিয়েছি। এরা হলেন চলচ্চিত্রে প্রবীর মিত্র, সঙ্গীতে মোবারক হোসেন, নাটকে ড. ইনামুল হক ও আফরোজা বানু, শিক্ষায় অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, সাহিত্যে কবি নাসির আহমেদ এবং ব্যাংকিংয়ে সুধীর চন্দ্র দাস। আপনি তো একজন যাত্রাশিল্পী বর্তমানে এ শিল্পের অবস্থা কেমন? তাপস সরকার : আপনারা হয়ত অবগত আছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে যাত্রাদল নিবন্ধনের সময় একটা বিশেষ অঙ্গীকারনামা দিতে হয়েছে যে, পালা মঞ্চায়নের সময় কোন অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করা যাবে না। দেশের ত্রিশ শতাংশ দল এই নিয়ম মানছে বাকি সত্তর শতাংশ মানছে না। তারা যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করে যাত্রাশিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। দেশে যাত্রাশিল্প ধ্বংসের শুরু তো আগে থেকে? তাপস সরকার : আশির দশকে দেশের যাত্রাশিল্পে ভয়াবহ অশনিসঙ্কেত দেখা দেয়। যাত্রা সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীরা নিজেদের এই শিল্পের একজন সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ করেন। কারণ মর্যাদা ও গৌরবের দিক থেকে সমাজে যাত্রাশিল্পের যে উচ্চতা সৃষ্টি হয়েছিল, তার অনেকাংশই ভূলুণ্ঠিত। তথাকথিত এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের কাছে এই শিল্প জিম্মি হয়ে পড়ে। নামে যাত্রাপালা হলেও কিছু অশ্রাব্য বাণী ও সুরের সঙ্গে ততোধিক অশালীন নৃত্য-গীত পরিবেশনাই মুখ্য হয়ে ওঠে। অভিজাত পরিবারের আঙ্গিনায় যাত্রাপালা অভিনীত হলে বাড়ির নারী-পুরুষ সদস্য সবাই মিলে রস আস্বাদন করেছেন। কিন্তু এখন অভিজাত পরিবারের অনেকে যাত্রাশিল্পকে পরিশীলিত বিনোদন বলতেই রাজি নন। এই শিল্পের উন্নয়নে সরকারী পদক্ষেপ কী? তাপস সরকার : সরকার ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো ‘যাত্রাশিল্প উন্নয়ন-নীতিমালা ২০১২’ প্রবর্তন করে ৩০ আগস্ট ‘বাংলাদেশ গেজেট’ প্রকাশ করে। এতে যাত্রাশিল্প উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনা, অনুদান, নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার নীতিমালা উল্লেখ করা হয়। নীতিমালা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকে চেয়ারম্যান মনোনীত করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট যাত্রাশিল্প উন্নয়ন কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পাঁচজন প্রতিনিধিসহ দেশের বিশিষ্ট নাট্যজন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ এবং যাত্রাব্যক্তিত্বকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ শিল্পের উন্নয়নে করণীয় কী? তাপস সরকার : যাত্রাশিল্পকে বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে এই শিল্পের সঙ্গে শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে হবে এবং ভাল যাত্রা দলকে অনুদানের মাধ্যমে তাদের ভাল পালা মঞ্চয়নের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই শিল্পের সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করতে হবে। তবেই এই শিল্পে পেশাদারী শিল্পীর আকাল ঘুচবে। -গৌতম পান্ডে
×