ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপত্তার জন্য শীঘ্রই আবেদন করবেন দুদক আইনজীবী

পুরান কারাগারের অস্থায়ী আদালতে খালেদার দুটি মামলা স্থানান্তর হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 পুরান কারাগারের অস্থায়ী আদালতে খালেদার দুটি মামলা স্থানান্তর হচ্ছে

বিকাশ দত্ত ॥ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি ও নাইকো দুর্নীতি মামলার পর এবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও দুটি দুর্নীতির মামলা পুরান কারাগারের অস্থায়ী আদালতে স্থানান্তরের জন্য শীঘ্রই দুদকের আইনজীবী আবেদন করবেন বলে জানা গেছে। মামলা দুটি হলো গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, বড় পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা। এর বাইরে তার বিরুদ্ধে আরও ৩১ মামলা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, দুদকের আইনজীবী নিরাপত্তার জন্য যদি মামলা স্থানান্তরের আবেদন করেন তা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে আরও দুটি দুর্নীতি মামলার একটি হাইকোর্টে অন্যটি বিচারিক আদালতে রায় হয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে দ-িত হওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। এই মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর দন্ড দিয়েছে হাইকোর্ট। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও বিচারিক আদালতে সাত বছরের দন্ড পেয়েছেন বেগম জিয়া। এদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ৩ জানুয়ারি ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় চার্জগঠনের শুনানির তারিখ পিছিয়ে আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি ধার্য করা হয়েছে। বর্তমানে নাইকো দুর্নীতি মামলাটি পুরান কারাগারের অস্থায়ী কারাগারে বিচার চলছে। অন্যদিকে গ্যাটকো ও বড় পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দুটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে বিচার চলছে। এ প্রসঙ্গে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জনকণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের যেসব মামলা আছে সেগুলো পুরান কারাগারের অস্থায়ী আদালতে স্থানান্তরের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে। নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবেই এটা করা হবে। নাইকো দুর্নীতি মামলাটি কবে নাগাদ শেষ হতে পারে এ প্রশ্নের জবাবে এ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এ মামলাটি বিচারিক কাজ শেষ হতে একটু সময় লাগবে। মামলা স্থানান্তর বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ আদালত স্থানান্তরের আবেদন করলে নিশ্চয়ই গুরুত্ব বুঝে ব্যবস্থা নেব। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল জনকণ্ঠকে বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত আমাদের চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দেয়া হয়েছে। আমরা আইনী প্রক্রিয়াতেই এসব মামলা মোকাবেলা করব। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পাঁচটি দুর্নীতি মামলার বাইরেও আরও কয়েক ডজন মামলা রয়েছে। মামলাগুলো হলো, নাশকতার বিভিন্ন অভিযোগে দারুস সালাম থানায় ১১ মামলা, হত্যা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানায় ৪ মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা, গুলশানে বোমা হামলার অভিযোগে মামলা, খুলনায় অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা, হত্যা, অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার অভিযোগে কুমিল্লায় ৩ মামলা, ‘মিথ্যা’ জন্মদিন পালনের অভিযোগে মামলা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ, স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগে মামলা, বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতির অভিযোগের মামলা, সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে ‘মিথ্যা’ মন্তব্য করায় ঢাকায় মানহানির দুই মামলা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগে মামলা, নড়াইলে মানহানির এক মামলা, ৪২ জনকে হত্যার অভিযোগে মামলা, হত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে পঞ্চগড়ে মামলা, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের সমালোচনা ও মানহানির অভিযোগে মামলা। নাইকো দুর্নীতি মামলা ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার নবম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মাহমুদুল কবির এ আদেশ দেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মোঃ শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সাংসদ এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা ॥ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় চার্জ গঠনের শুনানির তারিখ পিছিয়ে আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি ধার্য করা হয়েছে। পুরান ঢাকার বকশীবাজার অস্থায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে পরবর্তী শুনানির জন্য নতুন তারিখ ঠিক করেন। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন। ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ গোলাম শাহরিয়ার ১৩ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেছিলেন। ২০০৮ সালের ১৩ মে মামলাটি তদন্ত করে জোট সরকারের প্রভাবশালী ৯ সাবেক মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ জহিরুল হুদা অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২৪ আসামির মধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভুইয়া, সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রাহমান কোকো এবং সাবেক মন্ত্রী এমকে আনোয়ার মারা গেছেন। অন্য আসামিরা হলেন, সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেনের (প্রয়াত) স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং একেএম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক সদস্য একে রশিদ উদ্দিন আহমেদ এবং গ্লোবাল এগ্রোট্রেড প্রাইভেট লি. (গ্যাটকো) এর পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন । বড় পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা ॥ মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়া কয়লাখনি উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলাটি করা হয়। ওই বছর ৫ অক্টোবর ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়া অপর আসামি হলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান (মৃত), সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মৃত), সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী (ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর), সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী জামায়াত নেতা মুজাহিদ (ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর), ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার (মৃত), শামসুল ইসলাম (মৃত), আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান এস আর ওসমানী, সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসান, বড় পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও খনির কাজ পাওয়া কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন।
×