ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চালসহ ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে থাকায় ভোক্তারা স্বস্তিতে

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 চালসহ ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে থাকায় ভোক্তারা স্বস্তিতে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মোটা চালের দাম কেজিতে দুই টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪৪ টাকায়। আমনের বাম্পার ফলন ও গত তিনমাস ধরে সারাদেশে দশ টাকা কেজির সরকারী চাল বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় খুচরা বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চাল বিক্রেতারা বলছেন, আপাতত আর চালের দাম বাড়ছে না। বরং সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে সামনের দিনগুলোতে চালের দাম আরও কমে আসবে। চালের পাশাপাশি বাজারে শীতকালীন সবজি ও মাছের সরবরাহ বেড়ে গেছে। এছাড়া ভোজ্যতেল, আটা, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের দামও স্থিতিশীল। সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিন কিছুটা কমে আসছে সবজির দাম। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চালসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কমে আসায় ভোক্তারা স্বস্তিতে রয়েছেন। নিত্যপণ্য স্বাভাবিক দামে কেনা সম্ভব হচ্ছে। সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকায় খুশি ব্যবসায়ীরাও। সাপ্তাহিক ছুটির দিন পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজারে কেনাকাটা করছিলেন বনগ্রামের বাসিন্দা বেসরকারী চাকরিজীবী কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, সব আশঙ্কা দূর করে ভোগ্যপণ্যের দাম কমে আসছে। নির্বাচন সামনে রেখে জিনিসপত্রের দাম না বেড়ে বরং কমছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ইলিশসহ সব ধরনের মাছের উৎপাদন বেড়েছে। সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক থাকায় ভোটের রাজনীতিতে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হবে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ চাল, ডাল, মাছ ও সবজির মতো পণ্য স্বাভাবিক দামে পেতে চায়। এখন এসব পণ্য বছরের অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বাজারে মোটা চালের দাম কেজিতে কমেছে ২ টাকা। এছাড়া উন্নতমানের মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো চালের দামও কেজিতে ১-২ টাকা করে কমে আসছে। আমন ধানের বাম্পার ফলন ও গ্রাম পর্যায়ে দশ টাকা কেজির সরকারী চাল বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে সব ধরনের চালের দাম এখন নিম্নমুখী। স্বর্ণা ও চায়না ইরির মতো প্রতিকেজি মোটা চাল ৩৮-৪৪, পাইজাম ও লতা জাত মানভেদে ৪৬-৫৪ এবং সরু নাজির ও মিনিকেট চাল ৫৬-৬৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ফকিরাপুল বাজারের চাল বিক্রেতা নুরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এখন আমন ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। এ বছর ধানের উৎপাদন ভাল হয়েছে। এছাড়া দেশে বিপুল পরিমাণ আমদানিকৃত চাল মজুদ রয়েছে। এ কারণে সরবরাহ বাড়ায় মোটা চালের দাম হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল দেশের মধ্যে মজুদ রয়েছে। এ কারণে চালের দাম আর বাড়বে না। এদিকে, নদী, নালা, খালবিল, হাওড়-বাঁওড়, ডোবা ও পুকুরের পানি কমতে শুরু করায় দেশী জাতের মাছের সরবরাহ বেড়েছে রাজধানীর বাজারে। বছরের অন্য সময়ে মাছ বেশি দামে বিক্রি হলেও এখন দাম কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেড়ে গেছে। প্রায় একমাস বন্ধ থাকার পর ফের সাগর ও নদীতে ইলিশ মাছ ধরা শুরু হয়েছে। জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ইলিশ। এ কারণে ঢাকায় মাছের সরবরাহ বেড়ে গেছে। মাছের দাম কমায় খুশি ভোক্তারা। প্রতিজোড়া ৬০০-৭০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ জোড়া বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকায়। এছাড়া ৪০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি চিংড়ি মাছ। রুই জাত ও মানভেদে ২২০-৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। এছাড়া টেংরা, পুঁটি, শৌল, পাবদা জাত ও মানভেদে ৪০০-৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে শাক-সবজির ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারদর বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। শীতের সবজিতে ভরে উঠেছে বাজার। অক্টোবরে যখন শীতের নতুন সবজি আসতে শুরু করে তখন দাম বেড়েছিল। তবে এখন সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। বাজারে প্রতিকেজি পাকা টমেটো ৮০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও শসা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০, মুলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙা ৪০ টাকা, করলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাকরোল ৩৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় এবং জালি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি আঁটি কলমি শাক ও লাল শাক ১০ থেকে ১৫ টাকায়, লাউ শাক ২০ থেকে ২৫ টাকায়, পালং শাক ১৫ টাকায়, পুঁই শাক ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে, বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ আমদানি ২৫-৩৫ টাকা, দেশী ৩৫-৪০, প্রতিকেজি মসুর ডাল (দেশী) ৯০-১০০ টাকায়, মসুর ডাল মোটা ৫০-৭০ টাকায়, মুগ ডাল ১২০ টাকায়, ভোজ্যতেল প্রতি লিটার খোলা ৭৮-৮৪ টাকায় ও বোতলজাত ১০০-১০৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি ৫৫-৬০, আটা ২৬-৩৬ টাকা প্রতিকেজি আদা ১০০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, কেজিতে ১০ টাকা দাম কমেছে ব্রয়লার মুরগি। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। এছাড়া গরুর মাংস ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে হঠাৎ করে ছোলার দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।
×