ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যক্তিগত কাজে পিডিবির গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ দুই শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 ব্যক্তিগত কাজে পিডিবির গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ দুই শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবসরে যাওয়ার পরও বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দুই শ্রমিক নেতা সরকারী গাড়ি নিজেদের দখলে রেখেছেন। শ্রম আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগতকাজে প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ব্যবহারের কোন সুযোগ না থাকলেও অভিযোগ রয়েছে বিগত নয় বছর ধরেই এই দুই নেতা সরকারী গাড়ি ব্যবহার করে আসছেন। সম্প্রতি অভিযোগটির তদন্তর জন্য বিদ্যুত বিভাগ নির্দেশ দেয়। কিন্তু নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে সিবিএ নেতারা সেই তদন্ত থামিয়ে দিয়েছেন। পিডিবির শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মিয়া নয় বছর ধরে সিলেট মেট্রো-ঘ-০২-০০৩৩ এবং ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-২৮২৭ নম্বরের দুটি পাজেরো জীপ ব্যবহার করছেন। গাড়ি দুটির জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ এবং চালকসহ পরিচালনার অন্যসব ব্যয় বহন করে পিডিবি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের লোকসানি এই প্রতিষ্ঠান গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ বিলাসী। শুধু শ্রমিক নেতাই নয় মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তাকে তারা সেধে দামি গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এসব বিষয়ে কেউ কোন কথা বলতেও সাহস পান না। পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন শ্রমিক নেতাদের গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হলে অন্যরা সতর্ক হবেন। তাতে প্রতিষ্ঠানটির এই বিলাসীভাব কমে আসবে। জানা গেছে সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মিয়া পিডিবির নক্সা ও পরিদর্শন পরিদফতরের স্টেনোটাইপিস্ট পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৭ সালের আগস্টে অবসরে গেছেন। গত আগস্টে তার অবসরোত্তর ছুটির (পিআরএল) সময়সীমাও শেষ হয়েছে। সভাপতি জহিরুল ইসলাম চলতি বছরের ৬ জুন অবসরে যান। তিনি পিডিবির অডিট পরিদফতরের সহকারী হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এখন তিনি পিআরএল’এ রয়েছেন। পিডিবি সূত্র বলছে গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত করতে বিদ্যুত বিভাগের তরফ থেকে দুই দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর পিডিবি চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ বিষয়টি তদন্তর জন্য পিডিবির সদস্য প্রশাসন জহুরুল হককে নির্দেশ দেন। সদস্য প্রশাসন পরিচালক শ্রম কল্যাণকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে। এরপর পরিচালক শ্রম কল্যাণ পরিচালক সম্পত্তি এবং যানবনের কাছে চিঠি দিলেই গোল বাধে। পরিচালক শ্রম কল্যাণ মাসিক ভিত্তিতে এই দুটি গাড়ির পেছনে গত নয় বছরে কত খরচ হয়েছে তা জানতে চান। গাড়ির মেরামত, জ্বালানি এবং ড্রাইভারের ওভারটাইমসহ খরচ জানতে চাওয়া হয়। জানা গেছে পিডিবির শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা সম্প্রতি অফিস শেষ হওয়ার পরেও পিডিবির পরিচালক শ্রম কল্যাণকে সাড়ে তিন ঘণ্টা তার অফিস কক্ষে আটকে রাখে। এরপর পরিচালক শ্রম কল্যাণ পরিচালক সম্পত্তি এবং যানবনকে দেয়া চিঠিটির কার্যক্রম বাতিল করলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরিচালক শ্রম কল্যাণকে উদ্ধার করতে শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতা করেন পিডিবির সদস্য প্রশাসন জহুরুল হক। যদিও পিডিবির সদস্য প্রশাসন জহুরুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তদন্ত চলছে। এ ধরনের অভিযোগ সঠিক নয় যে তদন্ত থেকে সরে এসেছে পিডিবি। তিনি বলেন, সংগঠনের কাজে শ্রমিক সংগঠন গাড়ি ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগতকাজে গাড়ি দুটি ব্যবহার হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পিডিবির সিবিএ’র এই দুই নেতা পিডিবির দুটি গাড়ি ব্যবহার করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যা করেছেন। শুক্রবার বিকেলে জহিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে তার সম্পর্কে উত্থাপিত অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, আমাদের একটি পক্ষ এসব ছড়াচ্ছে। তিনি দাবি করেন তিনি কখনও ব্যক্তিগত কোন কাজে গাড়ি ব্যবহার করেনি। শ্রমিক সংগঠনের কাজেই সব সময় গাড়ি ব্যবহার করতেন। তিনি বলেন, পিডিবির শ্রমিক সংগঠন অনেক বড়। কোথাও কোন সমস্যা হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই গিয়েছি এবং সমাধানের চেষ্টা করেছি। সেই কাজেই গাড়ি ব্যবহার করেছি। আলাউদ্দিন মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, পিডিবির বোর্ডের অনুমোদন না নিয়ে কেউ গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। তাদের গাড়ি ব্যবহারের বিষয়টি বোর্ড জানতো। তারা কোন অন্যায় করেননি দাবি করে বলেন, আমরা কখনও ব্যক্তিগত কোন কাজে এই গাড়ি ব্যবহার করিনি। গাড়ি যতটুকু ব্যবহার হয়েছে তা সংগঠনের কাজেই ব্যবহার হয়েছে।
×