ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরির প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 ৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরির প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে

ফিরোজ মান্না ॥ সারা দেশে ৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ গড়ে তোলার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের নেয়া প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শেষ সময় ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ডিসেম্বরেই প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। অন্যদিকে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্প গুণগত প্রশিক্ষণে ৩৪ হাজার দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলছে। এর আগে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ৩ হাজার ৫শ’ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা দক্ষতা অর্জন করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে শুধু নেটওয়ার্কিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ঘটবে না। এজন্য প্রয়োজন যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধার। এ রকম সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গড়ে তোলা হবে তথ্যপ্রযুক্তি ল্যাব। এই ল্যাবে কাজ করে একজন সাধারণ ছাত্রও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারেন। আগামী এক বছরের মধ্যে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে দেশে ৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরি করার। এজন্য কয়েকটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেলা শহরে ল্যাব স্থাপন করা হলে তরুণ-তরুণীরা সহজেই এসব ল্যাব ব্যবহার করতে পারবেন। ল্যাবগুলো দক্ষ শিক্ষক দিয়ে পরিচালনা করা হবে। দক্ষ জনবল গড়তে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইসিটি ক্লাবও গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশ পুরোপুরি তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করতে দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কম্পিউটার দিলেই দক্ষ জনবল সৃষ্টি হবে না। এজন্য দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন হবে। প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা হবে। তারাই মূলত ল্যাবগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের দক্ষ করে তুলবেন। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইসিটি ক্লাবগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং-এর টপ আপ আইটি প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরা। অবশ্য আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং-এর শতকরা ৬০ শতাংশের কর্মসংস্থান হয়েছে। যারা এখনও কর্মসংস্থানে যেতে পারেননি তারা এ দায়িত্ব পালন করবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে দেশে ৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদের প্রয়োজন হবে। সরকার বিপুলসংখ্যক তথ্যপ্রযুক্তি তৈরি করতে নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। নতুন করে আরও কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। দেশের ১২৮ টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ৬৪ জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি ল্যাব গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আসলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দিয়ে এক লাখ দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে চাই। ইতোমধ্যে ৪ হাজার তরুণ-তরুণীকে ফার্স্ট ট্র্যাক ফিউচার লিডারের (এফটিএফএল) প্রশিক্ষণ, ১০ হাজার জনকে টপ আপ আইটি এবং ২০ হাজার জনকে ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ শুরু করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মেধা বিশ্বমানের। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। প্রোগ্রামিংয়ের বিশ্ব আসরে আমাদের শিক্ষার্থীরাও যাতে নিয়মিত ভাল করতে পারে সে চেষ্টা করা হবে। প্রোগ্রামিংয়ে আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভাল। জাতীয় হাই স্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ছাত্রছাত্রীরা মেধার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের মধ্যে আমরা এই খাত থেকে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। এজন্য গাজীপুরের কালিয়াকৈরসহ দেশে ১৩টি হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলোতে ৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ প্রয়োজন হবে। তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে এসব প্রযুক্তিবিদ বেরিয়ে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরি করতে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। ভাল প্রশিক্ষণ না পেলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ভাল কোন উন্নয়ন হবে না। বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বর্তমানে চলমান রয়েছে। বিশ্বব্যাংকও প্রশিক্ষণের জন্য সহযোগিতা দিচ্ছে। একজন দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরি হলে, তার মাধ্যমে আরও অনেক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরি হতে পারে। তাই এবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও ৬৪ জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি ল্যাব তৈরি করার। এসব ল্যাব থেকেও দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে উঠবে।
×