ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি লড়বে ২৪০ আসনে, শরিকদের ছাড়ছে ৬০ আসন

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

বিএনপি লড়বে ২৪০ আসনে, শরিকদের ছাড়ছে ৬০ আসন

শরীফুল ইসলাম ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের শরিকদের বিএনপি ছেড়ে দিচ্ছে ৬০ আসন। আর বিএনপি নির্বাচন করবে ২৪০ আসনে। এ ব্যাপারে যাবতীয় প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করে আসন বণ্টনসহ যাবতীয় প্রস্তুতি চূড়ান্ত করবে বিএনপি। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে শেষের দিকে নির্বাচনের বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় থাকা বিএনপি এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। এ জন্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে। এছাড়া ২০ দলীয় জোটকেও অটুট রেখেছে। এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত প্রতিটি শরিক দল এবার বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবে। এর ফলে ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী, আসম আব্দুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না, কর্নেল (অব) অলি আহমেদসহ জোটের প্রভাবশালী নেতারাও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আর এ কারণে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে এবার বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। নির্বাচনের আগে ইতোমধ্যেই বিএনপিসহ তাদের রাজনৈতিক জোটের সব শরিক দল উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে নিজ নিজ দলের ফরম বিতরণ ও জমা নিয়েছে। বিএনপি থেকে নির্বাচন করতে এবার রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশী ফরম সংগ্রহ করেছেন। পাঁচ দিনব্যাপী মনোনয়ন ফরম বিতরণকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। আর এ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন পর হলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সূত্র মতে, বিএনপি এবার ২৪০ আসন নিজেদের জন্য রেখে ৬০ আসন শরিকদের ছেড়ে দিতে চাচ্ছে। তবে জোটের শরিকরা বিএনপির কাছে আরও বেশি আসন দাবি করছে। দু’একদিনের মধ্যে জোটের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করে আসন বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। তার আগে জোটের শরিক দলগুলো কোন কোন আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় তার তালিকা চেয়েছে বিএনপি। কোন কোন দল বিএনপির কাছে ইতোমধ্যেই তালিকা দিয়েছে। অন্য দলগুলো আজ-কালের মধ্যেই তালিকা দিয়ে দেবে বলে জানা গেছে। বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের জন্য সর্বোচ্চ ৬০ আসন ছাড় দেবে। যদিও শরিকরা এখন পর্যন্ত শতাধিক আসন চেয়ে বসে আছে। শুধু জামায়াতই ৫০ আসন দাবি করে বসে আছে। এ ছাড়া গণফোরাম ২০টি জেএসডি ১০টি এবং অন্যান্য শরিক দল আরও অন্তত ৩০টি আসন দাবি করছে। তবে বিএনপি দরকষাকষি করে শরিক দলগুলোর দাবিকৃত আসন কমাচ্ছে। যেসব আসনে বিএনপির শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান ও ভাল প্রার্থী রয়েছে সেসব আসনের প্রার্থী তালিকা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। আর বাকি আসনগুলোর মধ্যে শরিকদের প্রার্থী ঠিক করার পর বিএনপির প্রার্থী ঠিক করা হবে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার শেষে। ১৮ নবেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০ নবেম্বর শেষ হবে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২০ জোটের শরিকদের ৩৮ আসন ছেড়ে দিয়ে নিজেরা ২৬২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তখন জোটের শরিক দল জামায়াতকে ৩১টি, বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট, ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ২টি করে এবং জাগপাকে ১টি আসন দেয়া হয়। এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকা শরিক দলের সংখ্যা বাড়লেও সে তুলনায় আসন ছাড় দিচ্ছে না বিএনপি। কারণ, জামায়াতকে সেবার ৩১ আসন ছাড়লেও এবার জামায়াতকে কম আসন ছাড়া হচ্ছে। এবার জামায়াতকে ২০টির বেশি আসন দেয়া হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, দলের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে তারা এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। নির্বাচনে বিজয়ের জন্য যা যা কৌশল নেয়া প্রয়োজন তা নেয়া হবে। তবে কোন কারণে নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল মনে না হলে এ বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্তও নেয়া হতে পারে। তবে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ রয়েছে যেকোনভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রেখে নির্বাচনে অংশ নেয়ার। এতে ভোটারদের দ্বারে গিয়ে ভোট চাওয়া সম্ভব হলে এবার বিজয়ের ফসল বিএনপির ঘরে আসবে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছন, গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। তবে বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি তাতে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হবে কি না জনমনে সংশয় রয়েছে। এ সংশয় দূর করার দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত। আর এ জন্য এবার অধিকতর যোগ্য প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। আর জোটের শরিক দলগুলোও এবার অধিকতর যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দিচ্ছে। বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এবার বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে যোগ্য প্রার্থী ঠিক করা হচ্ছে। নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক থাকলে এবার বিএনপি বিজয়ী হবে। কারণ, দেশের মানুষ বিএনপিকে ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। জানা যায়, বিএনপি এবার নিজেদের জন্য ২৪০ আসন রেখে যে ৬০টি আসন ছেড়ে দিতে চায়। এার মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরামকে ১০টি, ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াতকে ২০টি, আসম রবের জেএসডি ৬টি, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে ৩টি, মাহমুদুর রহমান মান্নান দল নাগরিক ফোরামকে ১টি, ২০ দলীয় জোটের শরিক দল ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর দল বিজেপিকে ২টি, কর্নেল (অব) অলি আহমেদের দল এলডিপিকে ৪টি, ইসলামী এক্যজোটকে ২টি, খেলাফত মজলিসকে ২টি, জাতীয় পার্টিকে (জাফর) ২টি ও অন্যান্য শরিক দলগুলোকে ৮টি আসন ছাড়তে চায়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন এখন পর্যন্ত নির্বাচন না করার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তাকে ঢাকা-১০ আসনে, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে ঢাকা-৭, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মফিজুল ইসলাম খান কামাল মানিকগঞ্জ-৩, এএইচ এম খালেকুজ্জামান ময়মনসিংহ-৮, জগলুল হায়দার আফ্রিক নরসিংদী-৩, মোস্তাক আহমেদ কুমিল্ল-৩, এসএম আকরাম হোসেন নারায়ণগঞ্জ-২, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ মৌলভীবাজার-২ ও নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীকে ঢাকা-৬ আসনে প্রার্থী করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-৭, জাসদ সভাপতি আ স ম রব লক্ষ্মীপুর-৪, দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন স্বপন ফেনী-৩, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীকে টাঙ্গাইলের (৪ ও ৮) আসনে নির্বাচন করছেন। ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপিকে যে ৪টি আসন দেয়া হচ্ছে তার মধ্যে দলের সভাপতি অলি আহমদ (চট্টগ্রাম-১৪), মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), আবদুল করিম আব্বাসী (নেত্রকোনা-১) ও শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১) আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ (ভোলা-১) ও তার ছোট ভাই ভোলা-২ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ২০ দলীয় জোটের শরিক জাগপা থেকে এ দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান (পঞ্চগড়-২), কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (চট্টগ্রাম-৫), প্রয়াত মসিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের সভাপতি রীটা রহমান (নীলফামারী-১) ও মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার ম-লও (যশোর-২) থেকে নির্বাচন করছেন। ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের ঠাকুরগাঁও-২ থেকে আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ থেকে আবু হানিফ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ থেকে নুরুল ইসলাম বুলবুল, সিরাজগঞ্জ-৪ থেকে রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-১ ব্যারিস্টার নজিবুল্লাহ মোমিন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিউর রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মোঃ শাহাদাত হুসাইন, খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পরোয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, কুমিল্লা-১১ ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আজাদের পক্ষে গোপনে প্রচার শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও আরও ক’টি আসনে এ দলের প্রার্থীরা ভেতরে ভেতরে প্রচার চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
×