ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাজ পেয়েই ওরা খুশি

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

 কাজ পেয়েই ওরা খুশি

ওরা কেউ বিধবা, কেউবা তালাকপ্রাপ্তা আবার কারও স্বামী থেকেও নেই। পরিবারের সদস্যরা তাকে বোঝা মনে করতো। কিন্তু কর্মসংস্থান হওয়ায় এখন পরিবারের সদস্যরা তাদের আর বোঝা মনে করছে না। হতভাগ্য এসব নারীর দিন কাটছে যশোরের চৌগাছার ডিভাইন বিশেষায়িত বীজ কোল্ড ষ্টোর ও সাধারণ কোল্ড স্টোরে আলু বাছাই করে। দিন পেরিয়ে সন্ধ্যায় ওদের ছুটি হয়। প্রতিদিন ৪০ কেজির প্রতি বস্তা ১৪ টাকা হারে মজুরি পায় ২০০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা। এদের আবার দলনেতা আছে। দলনেতাদের আয় হয় ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা। মজুরি যাই হোক প্রতিদিন তারা যে কাজ করতে পারছে এতেই খুশি। সংখ্যায় ওরা প্রায় ১২০ থেকে ১২৫ জন। ওদের কারও বয়স ২৫, কারও ৪০, আবার কারও বা ৬০ বছরের বেশি। কিন্তু বয়স তাদের বন্ধুত্বে কোন বাধা হয়েও দাঁড়াতে পারেনি। বন্ধুর মতো হাতে হাত মিলিয়ে বছরের পর বছর ধরে ওরা কাজ করে যাচ্ছে একই ছাউনির নিচে। কারও সুখের খবরে ওরা বুকভরে হাসে, আবার কারও দুঃখের খবরে তারা নিজেদের চোখের জলে বুক ভাসায়। এসব নারীর সঙ্গে কথা হয় কোল্ড স্টোরের আলু বাছাইয়ের সময়। কাগজ কলম আর ক্যামেরা দেখে প্রথমে ওরা খুব খুশি হয়েছিল যে, নিশ্চয় কোন সরকারী দফতরের লোক এসেছে। এবার হয়তো বিনামূল্যে একটা ঘর হবে। অথবা তাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে। কিন্তু ওরা যখন শুনল পত্রিকার লোক তখন ওরা বলল ভাই পত্রিকায় লিখেটিকে আমাদের কী কোন লাভ হবে? কয়েকজন জীবনের গল্প শুনাল। উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের বিধবা আমেনা বেগম জানান. তিনি প্রতিদিন ৬ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে আসেন কাজ করতে। তার সংসারে দুই মেয়ে আর এক ছেলে। বছর দশেক আগে তার স্বামী আব্দার মারা যাবার পর সংসারে অন্ধকার নেমে আসে। অনেক কষ্টে সন্তানদের মানুষ করেছি। পেটের তাগিদে আলু বাছ্ইা কাজে যোগ দিয়েছি। এখন যা পাই তাই দিয়ে কোন রকমে দিন চলে যায়। চাঁদপুরের মৃত আয়ুব আলীর বিধবা স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান, তার ভিটেটুকু ছাড়া তার কোন ফসলি জমি নেই। আলু বাছাই করে যা পায় তাই দিয়ে তিন মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার কোন রকমে চলে যায়। কংশারিপুর গ্রামের নূরজাহান ওরফে আয়না (৩৭) বলেন, স্বামীর একার আয়ে সংসার চলে না তাই স্বামীকে সাহায্য করতে সে এই কাজ বেছে নিয়েছে। চৌগাছার বানু বেগম জানায়, তার বয়স এখন ৫০ বছর। যখন কোলে একটি ছেলে আসে তখন তার স্বামী তাকে তালাক দেয়। মানসিক প্রতিবন্দী ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। আজ ৭ বছর ধরে আলু বাছাই করে কোন রকমে জীবন চালাচ্ছেন তিনি। চৌগাছার হিন্দুপাড়ার ৬৫ বছরের শেফালি রানীর কপোলের ঘাম আর মাথার সিঁদুর মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সে জানাল ৩ বছর আগে তার স্বামী বংশী যখন হৃদরোগে আক্রান্ত শষ্যাশায়ী হয়ে পড়েন তখন সংসারের সব সদস্যের খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কোন উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত রাহীন সাহেবের কোল্ড স্টোরে আলু বাছাই করার কাজ নিই। দিন শেষে যা পায় তাই দিয়ে চাল ডাল আর স্বামীর জন্য ওষুধ কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরি। হিমাগারের পাশেই বাড়ি মৃত আব্বাসের স্ত্রী বীথির (২৮)। তার সংসারে ২ ছেলে। ৩ বছর আগে স্বামী মারা যাবার পর সংসারে অভাব দেখা দেয়। উপায় না পেয়ে নিয়েছে আলু বাছাইয়ের কাজ। এখান থেকে উপার্জনের টাকায় তার সংসার চলে যাচ্ছে। -সাজেদ রহমান, যশোর থেকে
×