ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্রমেই বাড়ছে শীত ॥ ওম চাই, চাই উষ্ণতা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

ক্রমেই বাড়ছে শীত ॥ ওম চাই, চাই উষ্ণতা

মোরসালিন মিজান ॥ গায়ের ত্বক শুকোতে শুরু করেছে। ঠোঁট ফাটেনি বটে। টানছে খুব। প্রতিদিন সকালে স্নানঘরে যাওয়ার অভ্যাস ছিল যাদের তাদের অনেকেই রুটিন বদলে নিয়েছেন। যতটা সম্ভব দেড়ি করে স্নান গোসল সারছেন। তারও আগে থেকে বদলাতে শুরু করেছিল প্রকৃতি। কিছুদিন আগে যে দাপট দেখা গেছে গরমের, এখন খেয়াল করুন, নেই। অগ্রহায়ণের শিশির ভেজা সকাল। দুপুরের নরম রোদ। ক্রমে তা শীতকে প্রতিষ্ঠিত করছে। সামনের দিনগুলোতে ঠা-া বাড়বে শুধু। ইতোমধ্যে গায়ে ওঠেছে মোটা কাপড়। জমজমাট শীতবস্ত্রের বাজার। আরও নানা পরিবর্তন স্পষ্ট হচ্ছে। সব বিবেচনায় নিয়ে চলছে জোর প্রস্তুতি। ষড়ঋতুর হিসেবে পৌষ ও মাঘ এ দুই মাস শীতকাল। তবে আনুষ্ঠানিক শুরুর আগে এখন এই অগ্রহায়ণে অনুভূত হচ্ছে ঠা-া। শীতের অনুভূতিটাই প্রধান হয়ে ওঠছে। শিশির ঝরছে শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত। সিগারেটের ধুয়ার মতো কু-লি পাকাচ্ছে কুয়াশা। গতমাসেই কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলদিয়া রুটে দেড় ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। মাঝ পদ্মায় আটটি ফেরি ও পাটুরিয়া ঘাটে আরও আটটি ফেরি নোঙর করতে বাধ্য হয়েছিল। এখনও মাঝে মাঝেই বিঘিœত হচ্ছে যানচলাচল। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামছুদ্দিন আহমেদ বলছেন, এখন যেটুকু গরম তা আর বাড়বে না। তাপমাত্রা কমতে থাকবে শুধু। কমতে কমতেই পুরদস্তুর শীতে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে এসে পুরোমাত্রার এই শীত অনুভূত হবে। তখন তাপমাত্রা হবে ১৪ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ডিসেম্বরের শেষদিকে বইতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। আর তা হলে কামড়ে ধরবে শীত। পূর্ভাবাসে আছে বৃষ্টির কথাও। বলা হচ্ছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এই বৃষ্টি শীত আরও বাড়িয়ে দেবে। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে চলছে প্রস্তুতি। শহর ঢাকার মার্কেট শপিংমলে সাধারণ পোশাকের পরিবর্তে রাখা হয়েছে মোটা কাপড়। শীতবস্ত্র দিয়ে সাজানো অধিকাংশ দোকানপাট। এ সময় নি¤œ আয়ের মানুষদের বেশ ভুগতে হয়। সুবিধা বঞ্চিতরা শীতবস্ত্রের সন্ধানে এখানে ওখানে ছুটে বেড়ায়। ফলে ফুটপাতের দোকানগুলো অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের শীতবস্ত্রে ঠাসা। শনিবার বঙ্গবন্ধুু এভিনিউয়ে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ধারে অনেক দোকান। সব দোকানেই শীতের কাপড়। আমিন নামের এক হকার বললেন, অক্টোবর থেকেই শীতের কাপড় দোকানে তুলছেন তিনি। এত আগে কেন ? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাগো কাস্টমাররা তো গরিব লোকজন। গরিবগো ঘরে আগে শীত আসে। ওগো ধরেন, খাওয়ার ঠিক নাই। থাকার নাই। কাপড় চোপড় যতœ কইরা কোথাও রাখতে পারে না। হারায়া ফেলে। তাই শীত আইলে দৌঁড়ায়া আমাগো এইখানে আসে। কম দামে সুইটার চাদ্দর কিইনা নিয়া যায়।’ অন্যান্য বছরের মতো এবারও আগেভাগেই তাদের বিক্রি শুরু হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। গুলিস্তানের দোকানগুলোতে বেশি চোখে পড়ল কম্বল। মিয়া হোসেন নামের এক হকার কম্বলের স্তুপের মাঝখানে এমনভাবে বসে ছিলেন যে, তাকে খুঁজে বের করতে হলো। এত কম্বল কে কেনে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শীতটা পড়তে দেন। এত কম্বল দেখতাছেন, থাকব না একটাও।’ অপেক্ষাকৃত কম দামী কম্বল ঢাকার বাইরের শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোতে চলে যায় বলে জানান তিনি। মুকুল নামের আরেক বিক্রেতা বললেন, এইবার শীতে ইলেকশন। নেতারা গ্রামে কম্বল বিতরণ করব। এই কারণে অনেক বেশি অর্ডার দিয়ে রাখছি।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীত সামনে রেখে কম্বলের কারখানাগুলোতেও দিন রাত কাজ হচ্ছে। ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে গড়ে ওঠেছে বেশকিছু কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি কম্বল সকাল হতেই চলে আসছে রাজধানীতে। সাইনবোর্ড এলাকায়ও কম্বলের কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা থেকেও প্রচুর কম্বল তৈরি হচ্ছে। ঢুকছে ঢাকার বাজারে। পিকআপভ্যান থেকে কম্বল নামিয়ে মাথায় করে দোকানে পৌঁছে দিচ্ছিলেন মানিক নামের একজন। তিনি জানান, প্রায় দেড় মাস আগে থেকে এই কাজ করছেন। যতদিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে চাহিদা। একই কারণে তার কাজও বাড়ছে বলে জানান তিনি। ঢাকার মার্কেট শপিংমলগুলোতেও চলছে শীতের প্রস্তুতি। এখন যে দোকানেই ঢুঁ মারা যাক না কেন, অবধারতিভাবেই শীতের কাপড় চোখে পড়বে। গত কয়েকদিন বসুন্ধরা সিটি শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত হালকা পোশাক সব আড়ালে চলে গেছে। সামনে রাখা হয়েছে শীতের উপযোগী পোশাক। বিদেশ থেকে আমদানি করা শীতবস্ত্রের জন্য নামকরা একটি দোকানে গিয়ে কথা হয় ম্যানেজার তরিকুল ইসলামের সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা শীত তাড়ানোর পাশাপাশি আধুনিক রুচি ফ্যাশনের দিকটি বিবেচনায় রাখি। আমাদের শীতবস্ত্রগুলো তাই দেখতে স্লিম এ্যান্ড স্মার্ট হয়।’ শীত সামনে রেখে দারুণ সব শাল নিয়ে এসেছে আজিজ সুপার মার্কেটের দোকানিরা। এখানে অনেকগুলো দেশীয় ফ্যাশন হাউস। কাপড়-ই-বাংলা নামের একটি শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, শালের বড় সংগ্রহ। এসব শালের গায়ে কবিতার পঙ্তি। জীবনানন্দ দাশের প্রিয় কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে কিছু। কোন কোনটিতে ময়মনসিংহ গীতিকা। দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। ফ্যাশন হাউসটির কর্ণধার বিথূন জানান, নিজস্ব সংস্কৃতিকে উর্ধে তুলে ধরতেই এমন প্রয়াস। দেশে এখন যে মাত্রায় শীত তা এই শালে সুন্দর দূর হয়ে যাবে। পাশাপাশি বাংলা কবিতা, নানা রকমের ফোক ফর্ম ব্যবহার করে চাদরগুলোকে বিশেষ শিল্পীত করা হয়েছে। শীত কম বেশি যাই হোক, সৌখিন ক্রেতারা এখান থেকে শাল কিনছেন বলে জানান তিনি। নয়া পল্টনের পলওয়েল মার্কেটে কথা হলো কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে। আনিস নামের এক ক্রেতা বললেন, শীতের পোশাক ঘরে অনেক আছে। তবুও প্রতিবছর কিছু না কিছু কেনা হয়। আগে ভাগে এলে নতুন ডিজাইনের শীতবস্ত্র পাওয়া যায়। তাই মার্কেটে আসা। আরেক ক্রেতা মোশাররফ। ঠিক ক্রেতা নন তিনি। বললেন, এবারের কালেকশন কেমন ঘুরে দেখছি। পছন্দ হলে আজই কিনব। তা না হলে পরে আবার আসবেন বলে জানান তিনি। এভাবে শীতের আগেই যে যার মতো করে প্রস্তুত হচ্ছেন। দুর্ভোগের নয়, সবার জন্য উপভোগ্য হোক শীতের কাল- সকলের তাই প্রত্যাশা।
×