ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গোলটেবিলে বক্তাদের দাবি

নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্বিঘেœ ভোট প্রদানের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তাদের ওপর যাতে কোন প্রকার অত্যাচার না করা হয় সরকারের কাছে তার নিশ্চয়তা চেয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে নাগরিক সমাজ আয়োজিত ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন : সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা প্রশ্ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে সংখ্যালঘুদের ওপর ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের সকল প্রকার সন্ত্রাসী হামলার দ্রুত বিচারের দাবি জানান তারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবীর, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, খ্রীস্টান, বৌদ্ধধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিসহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বক্তারা বলেন, দেশে নির্বাচন আসলেই বাড়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা। তবে এক সময় শুধু নির্বাচনের সময় সন্ত্রাসীরা অত্যাচার করলেও বর্তমানে সারা বছরই সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। শুধু পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য তারা এই নির্যাতনের শিকার। তাই আগামী নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ কমিটি করতে হবে। কমিটিকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে যারা এ ধরনের ঘৃণ্য তৎপরতায় জড়িত তাদের অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে সম্প্রীতির এ বাংলাদেশ আর থাকবে না। বক্তারা বলেন, নির্বাচন আসলেই বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলের নামে কিছু লোক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অশ্রাব্য বা উস্কানিমূলক কথা বলেন। আমরা দাবি জানাই নির্বাচনসহ কোন সময়ই যেন কোন প্রকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে উস্কানিমূলক কোন কিছু বলা বন্ধ করা হয়। বক্তারা বলেন, দেশের কোন কোন মানুষ বা কোন নেতা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করেন তা সবার জানা আছে। তাই সরকারদলসহ দেশের সকল দলের কাছে আমাদের আবেদন তারা যেন আগামী নির্বাচনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বা নির্যাতনকারী নেতাদেরকে দলীয় মনোনয়ন না দেন। এমনকি তাদের তালিকা করে ভবিষ্যতেও যেন নির্বাচন না করতে পারেন তার ব্যবস্থা করেন। তবেই দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ হবে। বৈঠকে বলা হয়, নির্বাচন আসলেই কেন সংখ্যালঘুদেরকে নির্যাতনের শিকার হতে হবে। আমরা দেখি সংখ্যালঘুদের অত্যাচারের বিচারের ভার যাদের কাছে সেই ক্ষমতাসীনরাই সংখ্যালঘুদের অত্যাচার করেন। কেন আমাদের বাধ্য হয়ে দেশ ত্যাগ করে পাশের দেশে গিয়ে আশ্রয় নিতে হবে? আমরা কি এই দেশ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করিনি? আমরা এখন থেকে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। কোক্রমেই এদেশ থেকে পালিয়ে যাব না। কারণ দেশটি আমারও। দুর্বৃত্তদের কাছে সংখ্যালঘুরা আত্মসমর্পণ করতে চায় না। এ সময় সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীকে নির্যাতনকারীদের তালিকা তৈরি করে তাদের মনোনয়ন না দেয়ার জন্য সকল দলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে সমাজের বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিবর্গ বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রতিটি দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু সমাজকে নির্যাতন করা হবে না মর্মে অঙ্গীকার করতে হবে। একইসঙ্গে পূর্বের সকল হামলারও বিচার করতে হবে। বৈঠকে এক বক্তা বলেন, শুধু ২০০১ সালের নয় ২০১৪ সালের নির্বাচনেও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। তাই এসব নির্যাতনেরও বিচার করতে হবে। দেশের অন্যতম বৃহৎ দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংখ্যালঘুদের নির্বাচনের আগে ও পরে নিরাপত্তা প্রদান করা হবে এমন কোন চিন্তাই যেন নেই। দুটি দলই সংখ্যালঘুদের ভোট চাইলেও তাদের নিরাপত্তার কথাটি তেমন গুরুত্বই প্রদান করে না। তাই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা না দিতে পারলে তাদেরকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিন। তাহলেই হয়ত সংখ্যালঘুদের নির্বাচন আসলেই ভয়ে থাকতে হবে না। তবে ভোট দিলেও অত্যাচার করে আবার ভোট না দিলেও অত্যাচারের শিকার হতে হয়। নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের পরেও সংখ্যালঘুদেরকে নির্যাতন করা হয়। বৈঠকে সরকারকে আগামী নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘু সমাজের মানুষদেরকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের দাবি জানানো হয়।
×