ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায়ীকে অপহরণ, তরুণীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

ব্যবসায়ীকে অপহরণ, তরুণীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিপণ আদায়ে অপহরণকারীরা নতুন কৌশল নিয়েছে। এক হাজার বিলবোর্ড তৈরির অর্ডার দেয়া হবে বলে ব্যবসায়ী কালিপদ দাসকে (৬০) মগবাজারের তার বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান থেকে কৌশলে তুলে পশ্চিম রামপুরার একটি বাসায় আটকে রেখে মারধর করা হয়। এরপর তাকে বিবস্ত্র করে এক তরুণীর সঙ্গে ছবি তোলে অপহরণকারীরা। এরপর ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। এভাবে তারা ব্ল্যাকমেল করে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করে। ঘটনার ২৬ ঘণ্টা পর আফতাবনগর থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী কালিপদ দাসকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় অপহরণকারী চক্রের দুই সদস্য হানিফ ও শামীমকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সূত্র জানায়, কালিপদ দাসের (৬০) তিন ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে মগবাজারে ভাড়া বাসায় থাকেন। মগবাজার মোড়ে তার একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা রয়েছে। আর বড় ছেলে ও তিন কর্মচারী নিয়ে এই বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেন কালিপদ। হাতিরঝিল থানার ওসি আবু ফজলুল করিম জানান, অপহরণের পর কালিপদ দাসের বড় ছেলে বাদী হয়ে ১৪ নবেম্বর হাতিরঝিল থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। পরেরদিন হানিফ ও শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা এরপর আদালতে তাদের দোষ স্ব^ীকার করে জবানবন্দী দিয়েছে। তবে কয়েক আসামি এখনও পলাতক। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। প্রতিদিনের মতো ১৩ নবেম্বর সকাল সাড়ে নয়টায় মগবাজার মোড়ে নিজের বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানে যান কালিপদ। তখনও তার বড় ছেলে আসেনি। তিন কর্মচারীর মধ্যে একজন এসেছে। পৌনে দশটার দিকে দু’ব্যক্তি এসে জানান, তারা ‘ক্রানতি’ নামে একটি বেসরকারী সংস্থায় কাজ করেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্য বিভিন্ন সাইজের প্রায় এক হাজার বিলবোর্ড তৈরি করে দিতে হবে। বিলবোর্ড তৈরির অর্ডার দিতে কত সময় লাগবে, বিলবোর্ড প্রতি কত টাকা দিতে হবে। কালিপদ আলোচনা করেন। এরপর দুই ব্যক্তি তাদের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কালিপদ দাসকে মোবাইলে কথা বলিয়ে দেন। তখন চেয়ারম্যান পরিচয় দেয়া লোকটি ব্যস্ততার কারণে নিজে আসতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করে রতন সরকার নামে ওই চেয়ারম্যান পশ্চিম রামপুরায় তার অফিসে চূড়ান্ত কথা বলতে আমন্ত্রণ জানায় কালিপদ দাশকে। এত বড় অর্ডার পাওয়ার আশায় কালিপদ তার ছেলেকে দোকানে আসতে বলে ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে সিএনজিতে ওঠেন। পশ্চিম রামপুরার উলনে যায়। সেখানে একটি বাসায় তাকে আটকে মারধর করা হয়। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে কালিপদের স্ত্রীর মোবাইলে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ পাঠাতে পনেরোটি বিকাশ নম্বর দেয় চক্রটি। মুক্তিপণ না দিলে কালিপদকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেয়। এ সময় তার স্ত্রী-স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তার সঙ্গে অপহরণকারীরা কথা বলিয়েও দেয়। এ সময় অপহৃত কালিপদ স্ত্রীকে টাকা দিয়ে তাকে মুক্ত করার অনুরোধ জানান। মুক্তিপণ দেয়ার জন্য অপহরণকারীরা একঘণ্টা সময় দেয় তার স্ত্রীকে। উপায়ন্ত না দেখে কালিপদের স্ত্রী হাতিরঝিল থানায় ছুটে যান। সেখানে গিয়ে তিনি বিস্তারিত ঘটনা পুলিশকে খুলে বলেন। বিকেলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের এসি সালমান হাসানের নেতৃত্বে হাতিরঝিল থানার একটি টিম কালিপদ দাসকে আফতাবনগরে শেষ মাথা থেকে উদ্ধার করে। এ সময় অপহরণকারী চক্রের সদস্য হানিফ ও শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধারের পর অপহৃত কালিপদ পুলিশকে জানান, ১৩ নবেম্বর সকালে তাকে উলনের একটি বাসায় আটক রাখা হয়। সেখানে নেয়ার প্রায় আধা ঘণ্টা পর ঝর্ণা নামে এক তরুণী বাসায় প্রবেশ করেন। এরপর চক্রটি দরজা বন্ধ করে দেয়। মেয়েটিকে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় ব্যবসায়ীর সঙ্গে দাঁড় করিয়ে মোবাইলে ছবি তোলে ওরা। এ সময় বাসার কলিংবেল বেজে উঠে-পুলিশ পরিচয়ে সিভিলে এক ব্যক্তি প্রবেশ করে। বাসার ভেতরে তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে বলে সবাইকে গ্রেফতারের ভয় দেখান তিনি। তখন ওই তরুণী কান্নাকাটি করতে থাকে। সাংবাদিক পরিচয়ে এক ব্যক্তি প্রবেশ করে। এরপর আরও দুই ব্যক্তি নিজেদের ওই এলাকার লোক পরিচয়ে বাসায় প্রবেশ করেন। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় দেয়া ব্যক্তি কালিপদের পরিবারকে বিষয়টি জানাবে বলে পকেট থেকে মোবাই ফোন বের করেন। তাদের এসব ছবি দেখানো হবে। তখন ভিকটিম ও সব ছবি তার পরিবারকে না দেখানোর জন্য অনুরোধ জানান, তাদের অনুরোধে পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী দুই ব্যক্তি সবার উপস্থিতিতে ওই তরুণীর সঙ্গে বিষয়টি মীমাংসা করানোর কথা বলে। টাকা-পয়সা দিয়ে মীমাংসা করতে তারা ব্যবসায়ীকে চাপ দিতে থাকে। কালিপদ জোরে চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করেন। তখন চক্রের লোকজন তার চোখ-মুখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অপহরণকারীদের বাঁচাতে স্ত্রীকে ফোন করে আকুতি জানান কালিপদ। বলেন, দ্রুত দাবিকৃত টাকা দিয়ে দিতে বল। চক্রটিকে বিকাশের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েও দেয়। পুলিশ তাকে উদ্ধারে ততক্ষণে অভিযানে নেমেছে। ঘটনার প্রায় ২৬ ঘণ্টা পর পুলিশ তাকে আফতাব নগর থেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই রেজাউল করিম জানান, গ্রেফতারকৃত ভুয়া পুলিশ হানিফ ও ভুয়া সাংবাদিক এনাম রসুল খন্দকার শামীম আদালতে স্বীকারাক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত জয়, হানিফের স্ত্রী শিউলি ও ঝর্ণা নামে ওই প্রতারক তরুণীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের এডিসি হাফিজ আল ফারুক জানান, অপহরণকারী চক্রটি প্রথমে ব্ল্যাকমেল করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। এ জন্য সেভাবে তারা সার্থক না হয়ে ব্যবসায়ীকে মারধর করে মুক্তিপণ আদায় করতে চেয়েছিল। তবে বড় কোন কিছু না ঘটার আগেই পুলিশ অপহৃত কালিপদকে উদ্ধার করেছে।
×