ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে...কলিম শরাফী স্মরণানুষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে...কলিম শরাফী স্মরণানুষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়ারে...’ সূর্যস্নান সিনেমার ভরাট কণ্ঠের এ গান সেকালের অনেককে এখনও স্মৃতিকাতর করে তোলে। এ গানের প্রসঙ্গ এলে অনেকের মানসপটে স্মিত হাসিতে ভরা একটি সৌম্যকান্তি মুখ ভেসে ওঠে। তিনি হলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় সঙ্গীতজ্ঞ কলিম শরাফী। গণসঙ্গীত দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে রবীন্দ্রসঙ্গীতেই বেশি মনোনিবেশ করেন তিনি। সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও ছিলেন প্রথম সারির ব্যক্তিত্ব। এই খ্যাতিমান শিল্পীর অষ্টম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে স্মৃতিচারণ, গান, আবৃত্তি আর নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে। সঙ্গীত ভবন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কলিম শরাফীর সংগ্রামী ও সঙ্গীত জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ ও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ, কবি ও তথ্যচিত্র নির্মাতা নিশাত জাহান রানা এবং আলোকচিত্রী ও লেখক এম এ তাহের। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সঙ্গীত ভবনের সভাপতি পীযূষ বড়ুয়া। সংস্কৃতিজন কামাল লোহানী বলেন, বাংলা সঙ্গীত জগতের বলিষ্ঠ ও স্বর্ণকণ্ঠ শিল্পী কলিম শরাফী যে বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন তা সমসাময়িক কালের প্রত্যয়ে প্রদীপ্ত। বীরভূূমের পীর বংশের এ ব্যতিক্রমী শিল্পীসত্তা সঙ্গীতাঙ্গনকে চমকে দিয়েছিলেন। শ্রদ্ধেয় কলিম শরাফী যে মাপের শিল্পীসংগ্রামী ছিলেন, তাকে আমরা যথার্থ মূল্যায়ন করিনি। কিছুটা যদিওবা করে থাকি, তবে যথাযথ সম্মান দেখাতে পারিনি। এ দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে শুধু নয়, পাকিস্তানী দুঃশাসনে, নানা নির্যাতনে জর্জরিত গ্রগতিশীল সংগ্রামী শিল্পী সংগঠকমাত্রই কী বিপন্ন ও দুর্বিষহ জীবনযাপন করেছেন সেসব গর্হিত অতীত ভুলে গেছি। কলিম ভাইদের মতো অতীতের প্রগতিশীল গণসাংস্কৃতিক আন্দোলনের মহান শিল্পী-সুরকার গীতিকারদের অবজ্ঞা প্রদর্শন শুধু যে নিন্দনীয় তাই নয়, এটা আমাদের জন্য অপরাধও বটে। অন্য বক্তারা কলিম শরাফীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, শিল্পী কলিম শরাফী এক বর্ণাঢ্য জীবনসত্তার নাম। আজীবন দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই করেছেন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানী কুচক্রীদের বিরুদ্ধে এবং যে কোন অন্যায় আর অসততার বিরুদ্ধে। চিরকাল অবস্থান নিয়েছেন সংগ্রামী মানুষের পাশে। স্বর্ণ কণ্ঠের এ মানুষটি তার সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন গান, নাটক আর সাংগঠনিক ক্ষমতাকে। যদিও গণসঙ্গীত আর রবীন্দ্রসঙ্গীত উভয় ক্ষেত্রে তার ছিল সাবলীল পদচারণা, তবু একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় রবীন্দ্রসঙ্গীতই যেন ছিল তার অন্তরের একান্ত আশ্রয়। স্মৃতিকথা’র পর ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। এ পর্বের শুরুতে সংগঠনের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’। এরপর একক কণ্ঠে ‘কে যাবি পারে’ গানটি পরিবেশন করেন শিল্পী আমিনা আহমেদ। সব্বানী চক্রবর্তীর কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘আজি বিজন ঘরে’, কনক খান ও তানভীর হায়দার চৌধুরী দ্বৈতকণ্ঠে পরিবেশন করেন রবীন্দ্রনাথের গান ‘তোমার খোলা হাওয়া’। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী তপন মাহমুদ, শর্মিলা চক্রবর্তী, মোঃ এমদাদ হোসেন, খন্দকার জাফর সাদেক পাভেল, পীযূষ বড়ুয়া, মাহমুদ সেলিম, সঞ্চিতা দত্ত, সীমা সরকার, সুমন চৌধুরী প্রমুখ। আবৃত্তিতে অংশ নেন শিল্পী সুবর্ণা মোস্তফা। সংগঠনের শিল্পীদের অংশ গ্রহণে ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।
×