ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা ফোক ফেস্ট

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

ঢাকা ফোক ফেস্ট

শীত আগমনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে নানা ধরনের উৎসবও আয়োজিত হয়ে থাকে। রাজধানীতে একাধিক আন্তর্জাতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হতে দেখি আমরা সাম্প্রতিককালে। এর ভেতর ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট বা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসব অন্যতম। আর্মি স্টেডিয়ামে তিন দিনব্যাপী এই উৎসব সফলভাবেই সমাপ্ত হলো এবারও। বরাবরের মতো তারুণ্যের উৎসবই প্রধান হয়ে ওঠে এ আয়োজনে। নিজ দেশের সংস্কৃতি ভিন্ন দেশের শিল্পীদের সামনে তুলে ধরা এবং একই সঙ্গে ভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক আয়োজন সরাসরি প্রত্যক্ষ করার মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়Ñ এই ফোক ফেস্টের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সঙ্গীতপিপাসু মানুষ গভীর রাত পর্যন্ত সুরের মায়াজালে আবদ্ধ থাকেন। বৈশ্বিক লোকগীতির সম্মিলনে যান্ত্রিক শহরে বয়ে গেল স্বস্তির সুবাতাস। মাটি ও মানুষের কথা বলা লোকগানের সুরে রঙিন হলো কংক্রিটের শহর ঢাকা। শিকড়সন্ধানী সুরধারায় ঝলমল করে উঠল নগর। এমনই মোহময় রূপে ধরা দিল ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসবের তিন-তিনটে রাত। বলাবাহুল্য যে, আর্মি স্টেডিয়াম বিপুল সংখ্যক দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হলেও এর চেয়েও ঢের বেশি মানুষ সারাদেশেই রয়েছেন যারা এমন আয়োজন উপভোগ করতে আগ্রহী। তাদের সুবিধার কথা মনে রেখে আয়োজকরা টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ফলে উৎসব ভেন্যুতে সরাসরি উপস্থিত না থেকেও লোকগান উপভোগ করা সম্ভব হয়েছে। উৎসবটি আরও দেখা গেছে মুঠোফোনের অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং সেবা বায়োস্কোপে। এটি ছিল ফোক ফেস্টের চতুর্থ আসর। ২০১৫ সাল থেকে ঢাকায় এই উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। এ বছর বাংলাদেশসহ সাতটি দেশের মোট ১৭৪ জন শিল্পী সঙ্গীত পরিবেশন করেন। উৎসবের প্রথম দিনে গানের পাশাপাশি নাচের ব্যবস্থাও ছিল। লোকসঙ্গীত সঙ্গীত রাজ্যের একটি অন্যতম ধারা। এটি মূলত বাংলার নিজস্ব সঙ্গীত। গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনের কথা, সুখ-দুঃখের কথা ফুটে ওঠে এই সঙ্গীতে। লোকসঙ্গীতের জন্য খুব বেশি যন্ত্রের ব্যবহার করা হয় না। মূলত কথা আর সুরই গানগুলোর প্রধান আকর্ষণ। বাংলার লোকগীতিগুলোর মধ্যে যে গানগুলোর নাম প্রথমেই করতে হয় সেগুলো হলো বাউল, গম্ভীরা, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, কবিগান, কীর্তন, গাজন, ভাদুগান ইত্যাদি। এছাড়াও, ঝুমুর, ঘেঁটু, জারি, সারি, বারোমাসি, মেয়েলি গীত, চোকচুন্দ্রী, ধামগান, ক্ষণগান, চোরচুন্নি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলার লোকগীতিগুলোর অধিকাংশের সঙ্গেই একটা করে মিষ্টি গল্প জড়িয়ে আছে। সঙ্গীত পরিশুদ্ধ করে হৃদয়, আর একটি ভাল বই পথ দেখায়, পথের সন্ধান দেয়। একটির সঙ্গে অন্যটির প্রত্যক্ষ সমন্বয় না থাকলেও রয়েছে পরোক্ষ বন্ধন। এক অর্থে গান ও বই দুটোই আনন্দ দান করে, জ্ঞানতৃষ্ণা বাড়ায় এবং মানুষকে আরও মানবিক করে তোলে। মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীবÑ সেটি সে অনুধাবনে সমর্থ হয়। কথায় বলে, যে গান ভালবাসে সে খুন করতে পারে না। কথাটা মিথ্যে নয়। ১৯৪৭-এর পাঞ্জাবে সংঘটিত দাঙ্গার পর ওস্তাদ আবদুল করিম খাঁ বলেছিলেন, ‘সঙ্গীত চর্চা করলে দেশ বিভাগ হতো না, দাঙ্গাও পরিহার করা যেত।’ আর বই যার নিত্যসঙ্গী তার পক্ষেও সম্ভব নয় মানুষের ক্ষতিসাধন। দেশে তাই গানের উৎসব এবং বই পড়ার আয়োজন হতে দেখলে সমাজের অভিভাবকমণ্ডলী খুশি হন, আশ্বস্ত বোধ করেন। ফোক ফেস্টের সুশৃঙ্খল আয়োজনে দেশীয় লোকসঙ্গীতের সুধা পানের পাশাপাশি কয়েকটি দেশের জনপ্রিয় গানও ব্যতিক্রমী উপস্থাপনায় উপভোগের সুযোগ মিলেছে। আয়োজক কর্তৃপক্ষ অভিনন্দনযোগ্য। এই সুরের ধারা অব্যাহত থাকুক। উৎসবরে এই আনন্দসন্ধানী ও প্রাণময়তার প্রকাশটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই চাই বিচিত্র গানের বর্ণাঢ্য আরও উৎসব।
×