ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ড. মিল্টন বিশ্বাস

জঙ্গীবাদ দমনে সরকারের সাফল্য

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

জঙ্গীবাদ দমনে সরকারের সাফল্য

দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনাকে যারা সর্বাঙ্গীনভাবে যোগ্যতার সঙ্গে সহায়তা করে আসছেন তাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যতম। দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলের মাধ্যমে তিনি বর্তমানে বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয় হলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়টিকে সফলতার সঙ্গে পরিচালনায় অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করা মান্যবর মন্ত্রী বর্তমানে ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাঁর নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে দেশ পরিচালনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে (২০০৯-২০১৩) জঙ্গীবাদ দমনে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁরই গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ জঙ্গীমুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনার দেখানো পথ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মতো জঙ্গীবাদের রসাতলে পতিত না হয় যেন, সেই প্রত্যয় নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর এর পরিচালনায় যে মানুষটির অসামান্য অবদান তিনি হলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মানবসম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা প্রদান, উদ্ধার অভিযান বা তৎপরতা, অপরাধদমন, অপরাধী শনাক্তকরণ, জল ও স্থল সীমান্ত নিরাপত্তা, চোরাচালান রোধ, প্রবাস ও অভিবাসন সম্পর্কিত নীতিমালা বা চুক্তি প্রণয়ন, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধ, মাদকদ্রব্য চোরাচালান রোধ, মানবপাচার রোধ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম বৃহৎ মন্ত্রণালয় হিসেবে মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। নাগরিকের জন্য একটি নিরাপদ, সুন্দর, সুখী ও শান্তিপূর্ণ আবাসভূমি নির্মাণের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরলস ও বদ্ধপরিকর। ॥ দুই ॥ দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের প্রধান কারণ, ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক শিল্পমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটির সভা প্রতি ২ মাস অন্তর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৩ জন মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীসহ সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে এ কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে (২০০৯-২০১৩) জঙ্গীবাদ দমনে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিসহ উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম গ্রহণ ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে সভাপতি করে ১৭ (সতেরো) সদস্যের জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার কমিটি গঠন করা হয়। তাঁর নেতৃত্বেই আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) আইন ২০১৪ (আইনটির মেয়াদ ৫ বছর বৃদ্ধি) করা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট (সংশোধন) আইন ও বিধিমালা প্রক্রিয়াধীন আছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিধিমালা ২০১৪ প্রণীত হয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ‘জননিরাপত্তা’ ও ‘সুরক্ষা সেবা বিভাগ’- এই দুই নামে ভাগ করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ‘জননিরাপত্তা’ বিভাগের অধীনে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, তদন্ত সংস্থা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিআরসি)। ‘সুরক্ষা সেবা’ বিভাগের অধীনে আছে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর, কারা অধিদফতর, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশে ১ লাখ ৬১ হাজার ৩০৩ জন জনবল ছিল। বর্তমানে তা ২ লাখ ৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সালে নারী পুলিশ সদস্য ছিল মাত্র ২৫২০ জন। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৭৬৭ জন। পুলিশ বাহিনীতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ৫০ হাজার পদ সৃজনের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর পর্যায়ক্রমে ৫০ হাজার পদ সৃষ্টির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও পুলিশ পরিদর্শক পদকে ২য় শ্রেণী থেকে ১ম শ্রেণীতে এবং উপ-পুলিশ পরিদর্শককে ৩য় থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। পুলিশের নতুন নতুন উইং সৃষ্টি হয়েছে। যেমন, এ বাহিনীতে শিল্পাঞ্চল পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ, পিবিআই, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ, ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার এসপিবিএনসহ মোট ১০টি নতুন ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ পুলিশের কর্মরত থাকার ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন মন্ত্রী মহোদয়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ৭টি ফর্মড পুলিশ ইউনিটে ১২১১ জন পুলিশ সদস্য কর্মরত আছেন। এরমধ্যে ১৬০ জন নারী সদস্য। নতুন ২টি র‌্যাব ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। র‌্যাবের জন্য ২টি হেলিকপ্টার ক্রয় করা হয়েছে। পুলিশের জন্য ২টি হেলিকপ্টার টিওএন্ডইতে অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) এলআইসি শাখা গঠন করা হয়। বিশেষ অপরাধ তদন্তের জন্য গঠন করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ডিএমপি-এর কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অভিযানে আসে একের পর এক সাফল্য। নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার কিংবা নিহত হয়। আলোচিত মামলাগুলোর তদন্তও সফলভাবে শেষ করেছে পুলিশ। এতে কমেছে জঙ্গী তৎপরতা। একইসঙ্গে সংঘবদ্ধ অপরাধ, হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই ও দস্যুতার হারও কমেছে অনেকখানি। বিশেষত বন ও জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। অন্যদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাজকে গতিশীল করতে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। বর্তমান সরকারের সংসদ অধিবেশনের শেষে এসে ৫ গ্রামের বেশি ইয়াবা পাওয়া গেলে মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮’ পাস করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য শনাক্তকরণ এবং অধিদফতরকে ৩টি পিকআপ, দুটি মাইক্রোবাস, ২৯ ধরনের যন্ত্রপাতি ও ১৫০টি কম্পিউটার সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্থা ‘কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কৈকা) ও বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলবে... লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
×