ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চার বছরের সংঘাতে স্পষ্ট হয়েছে চরম মানবিক সঙ্কট

যুদ্ধে বিভক্ত ইয়েমেনীরা শান্তি চায়

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

যুদ্ধে বিভক্ত ইয়েমেনীরা শান্তি চায়

ইয়েমেন যুদ্ধে বিভক্ত হলেও বিদ্রোহী অধিকৃত সানা ও রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত এডেনের মধ্যে একটি বিষয়ে ঐক্য দেখা যায়। দেশের জনগণ এখন চাইছে অনাবিল শান্তি। দেশটিতে চার বছরের সংঘাতে সৃষ্টি হয়েছে এক চরম মানবিক সঙ্কট। খবর এএফপির। লড়াইরত পক্ষগুলো লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের সমর্থকদের প্রতি শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন যে প্রচারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই প্রায় এ দরিদ্র দেশটির জনগণের। রাস্তার পাশে বাজারগুলোর সঙ্কীর্ণ পথে হাঁটা সামরিক বাহিনীর অবসানের মধ্যে সশস্ত্র ব্যক্তি থেকে শুরু করে দেয়ালে সাঁটা শহীদ যোদ্ধাদের পোস্টার পর্যন্ত সর্বত্র দেখা যায় সংঘাতের চিত্র। কিন্তু অনেক ইয়েমেনী মনে করেন যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়। ইয়েমেনীরা ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের পক্ষে বা সৌদি সমর্থিত সরকারের পক্ষে, যে দিকেই অবস্থান নিক না কেন এ যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কারণ, এ যুদ্ধে আরব অঞ্চলের এ দরিদ্র দেশটি এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। সানার বাব আল-সাবাই মার্কেটে আমিন মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, যুদ্ধে কোন করুণা নেই। যুদ্ধ সবকিছু কেড়ে নেয়। তিনি বলেন, ইয়েমেনীরা ব্যগ্র হয়ে প্রতীক্ষা করছে যুদ্ধ অবসান ঘোষণার মুহূর্তটির জন্য। রাজধানীর বাজারগুলোতে ক্রেতারা মোহাম্মদের মতো তাদের দোকানের পাশে বসে আছেন ক্রেতাদের প্রতীক্ষায়। তারা চাইছেন জীবনের স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে যেতে। তাদের ভাষ্য তারা ক্লান্ত। কিন্তু হুতি বিদ্রোহীরা শহরে মিডিয়ায়ও মসজিদগুলোতে সরকার ও সৌদি সমর্থিত জোটের লড়াইয়ের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। হুতিদের আল মাসিরাহ টিভিতে লড়াইয়ে যোগদানের জন্য স্থানীয়দের উৎসাহ দেয়ায় সামরিক অভিযান ও সমর সঙ্গীত সম্প্রচার করা হচ্ছে অব্যাহতভাবে। হুতিদের এক জনপ্রিয় উক্তি হচ্ছে, এ দেশ আমাদের এবং এ যুদ্ধ আমাদের যুদ্ধ । কিন্তু সানার বাসিন্দা হাসান আদেল করিম এসব বিষয়ে কোন মাথা ঘামান না। বাসচালক করিমের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হচ্ছে তার ৭ সন্তানের ভরণপোষণ। ৩৯ বছর বয়স্ক করিম বলেন, যুদ্ধ রক্ত ও হত্যাকা-ে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তিনি বলেন, আমরা অনেক দেখেছি। ইয়েমেনকে পুনর্গঠনের এখনি সময় এবং দেশ পুনর্গঠনে এখন প্রয়োজন প্রতিটি মানুষের। রাজধানী থেকে প্রায় ৩শ’ কিলোমিটার দক্ষিণে সরকার নিয়ন্ত্রিত এডেনে কুলুদ আল আকেদ করিমের আবেগের প্রতিধ্বনি করে বলেন, আমরা যুদ্ধে অত্যন্ত অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। গ্যাস, পানি ও খাদ্যের অভাব পোহাতে হচ্ছে আমাদের। ভাঙ্গা কণ্ঠে তিনি বলে যান, এ জন্যই আমাদের প্রত্যাশা যুদ্ধের অবসান হোক। বিদ্রোহীরা ২০১৪ সালে সানার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সরকারের কার্যত রাজধানী এডেন বিক্ষোভে বিপর্যস্ত। প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে চলেছে এবং ধ্বংস হচ্ছে অর্থনৈতিক অবস্থা। ইয়েমেনী মুদ্রা রিয়ালের মান ২০১৫ সালের পর ডলারের বিপরীতে দু’তৃতীয়াংশের বেশিতে নেমে এসেছে। এডেনের বাসিন্দা মুরাদ মোহাম্মদ বলেন, এ পরিস্থিতির চার বছরে দেশের জনগণ ক্ষুধা, রোগ ও দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের হৃদয়ের প্রত্যাশা, অস্ত্রবিরতি হোক, জীবনের শোকাবহ ঘটনা আর নয়। লোহিত সাগর তীরবর্তী শহর হোদাইদায় গত সপ্তাহে সংঘর্ষের পর যুদ্ধ অবসানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছেন, হোদাইদার ধ্বংসযজ্ঞে দেশে বিপর্যয়ের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এখানে ১ কোটি ৪০ লাখ বাসিন্দা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। ত্রাণ গ্রুপগুলো সংঘাতে জড়িত উভয় পক্ষের প্রতি বেসামরিক নাগরিকদের সরে যাওয়ার জন্য এবং ক্ষুধার্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার জন্য রাস্তাগুলো খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
×